প্রতি বছর আল্লাহর সম্মানিত ঘর বায়তুল্লার হজ করা পুরো উম্মতের ওপর ওয়াজিব কিফায়া, অর্থাৎ সবার ওপর ওয়াজিব, তবে কতক সংখ্যক আদায় করলে বাকিদের থেকে আদায় হয়ে যায়। যেসব মুসলিমের মাঝে হজের সকল শর্ত বিদ্যমান, তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরয, তার অতিরিক্ত হজ নফল। হজ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ রুকন। নারীর জন্য হজ জিহাদ সমতুল্য। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
»يا رسول الله، هل على النساء جهاد ؟ قال: نعم، عليهن جهاد لا قتال فيه: الحج والعمرة«
“হে আল্লাহর রাসূল, নারীদের ওপর কি জিহাদ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ আছে যেখানে মারামারি নেই: (অর্থাৎ) হজ ও উমরাহ”।[1] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে ইমাম বুখারী আরো বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
»يا رسول الله، نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد ؟ قال: لكن أفضل الجهاد حج مبرور «
“হে আল্লাহর রাসূল, আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বলেন: তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ মাবরুর হজ”।[2]
হজ সংক্রান্ত নারীর বিশেষ বিধান
১. মুহরিম:
হজে নারী-পুরুষ সবার জন্য কিছু বিধান রয়েছে সাধারণ, যেখানে কোনো ভিন্নতা নেই, সমানভাবে সবার জন্যই তা প্রযোজ্য, যেমন ইসলাম, বিবেক, স্বাধীনতা, সাবালক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য।
তবে নারীর জন্য অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে মাহরাম থাকা, যার সাথে সে হজের সফর করবে। মাহরাম যেমন স্বামী অথবা রক্তের সম্পর্কের কারণে নারীর ওপর চির দিন হারাম এমন পুরুষ, যেমন বাবা, সন্তান ও ভাই। অথবা রক্ত-সম্পর্ক ব্যতীত মাহরাম, যেমন দুধ ভাই অথবা মায়ের (পূর্ববর্তী বা পরবর্তী) স্বামী অথবা স্বামীর (অপর স্ত্রীর) ছেলে।
মাহরাম শর্ত হওয়ার দলীল: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুৎবায় বলতে শোনেন:
»لا يخلون رجل بامرأة إلا ومعها ذو محرم، ولا تسافر المرأة إلا مع ذي محرم، فقام رجل فقال: يا رسول الله إن امرأتي خرجت حاجة، وإني اكتتبت في غزوة كذا وكذا، قال: فانطلق فحج مع امرأتك«
“মাহরাম ব্যতীত কোনো নারী পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না, অনুরূপ মাহরাম ব্যতীত নারী সফর করবে না। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, আর আমিও অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। তিনি বললেন: যাও, তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর”।[3] ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا تسافر المرأة ثلاثا، إلا معها ذو محرم«
“কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত তিন দিন সফর করবে না”।[4]
এ জাতীয় অর্থ প্রদানকারী অনেক হাদীস রয়েছে, যা নারীকে হজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে একাকী সফর থেকে নিষেধ করে। কারণ, নারী দুর্বল, সফরে সে এমন সমস্যা ও কষ্টের সম্মুখীন হয়, যা পুরুষ ব্যতীত কেউ সমাধান করতে পারে না। দ্বিতীয়ত নারী ফাসিক পুরুষদের লালসার বস্তু, অতএব তার জন্য অবশ্যই মাহরাম জরুরি, যে তাকে সুরক্ষা দিবে ও তাদের কষ্ট থেকে তাকে নিরাপদ রাখবে।
নারীর হজের মাহরামকে অবশ্যই সাবালক, মুসলিম ও বিবেকী হওয়া জরুরি। কারণ, মাহরাম হিসেবে কাফের বিশ্বাসযোগ্য নয়, যদি তার মাহরাম যোগাড় না হয়, কাউকে প্রতিনিধি করবে, যে তার পক্ষে হজ করবে।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৪৮), নাসাঈ, হাদীস নং২৬২৮)\
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯০০; আহমদ (১/২২২)
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৭; আহমদ: (২/১৯)