১. ইস্তেহাযার হুকুম:
ইস্তেহাযার সংজ্ঞা: মাসিক আসার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ‘আযেল’ নামক কোনো রগ থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তাই ইস্তেহাযাহ। ইস্তেহাযার বিষয়টি জটিল, কারণ হায়েযের রক্তের সাথে তার রক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ।
যদি নারীর লাগাতার অথবা অধিকাংশ সময় রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে কতটুকু হায়েয হিসেবে ধরা হবে আর কতটুকু ইস্তেহাযা হিসেবে ধরা হবে যার সাথে সিয়াম ও সালাত আদায় করা ছাড়া যাবে না, তা জানা জরুরি। কারণ, মুস্তাহাযাহ নারী স্বাভাবিক নারীর মতো পবিত্র।
মুস্তাহাযাহ নারীর তিনটি অবস্থা:
প্রথম অবস্থা: ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকবে, যেমন ইস্তেহাযার পূর্বে মাসের শুরুতে অথবা মাঝখানে পাঁচ দিন অথবা আট দিন রীতিমত হায়েয আসা। এ জাতীয় নারী ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হলে তাদের ঋতুস্রাবের দিন-সংখ্যা ও সময় জানা সহজ, সে তার পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক হায়েযের দিনগুলোতে বিরতি নিবে ও সালাত, সিয়াম ত্যাগ করবে। এ সময়টা তার হায়েয। হায়েয শেষে গোসল করে সালাত আদায় করবে এবং অবশিষ্ট রক্তকে ইস্তেহাযার রক্ত গণনা করবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলেন:
»امكثي قدر ما كانت تحبسك حيضتك، ثم اغتسلي وصلي«
“পূর্বে তোমার হায়েয যত দিন তোমাকে বিরত রাখত সে পরিমাণ তুমি বিরতি নাও, অতঃপর গোসল কর ও সালাত পড়”।[1]
অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন:
»إنما ذلك عرق، وليس بحيض، فإذا أقبلت حيضتك فدعي الصلاة«
“সেটি রক্তক্ষরণ, হায়েয নয়, যখন তোমার হায়েয আসে সালাত ত্যাগ কর”।[2]
দ্বিতীয় অবস্থা: ঋতুমতী নারীর নির্দিষ্ট অভ্যাস নেই তবে তার হায়েযের রক্ত বুঝা ও চেনা যায়। যেমন, ঋতুমতীর কিছু রক্ত হায়েযের রক্তের ন্যায় কালো অথবা ঘন অথবা বিশেষ গন্ধযুক্ত, যা ঋতু বা হায়েয হিসেবে সহজে চিহ্নিত করা যায়, কিন্তু তার অবশিষ্ট রক্ত এরূপ নয়, উদাহরণত লাল কোনো গন্ধ নেই, ঘনও নয়। এ অবস্থায় যে ক’দিন তার হায়েযের মতো রক্ত আসে সে ক’দিন সে বিরতি নিবে এবং সালাত ও সিয়াম ত্যাগ করবে, অবশিষ্ট রক্তকে ইস্তেহাযাহ গণনা করবে। হায়েযের আলামত যুক্ত রক্ত বন্ধ হলে গোসল করে সালাত ও সিয়াম আদায় করবে। এখন সে পবিত্র। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন:
»إذا كان الحيض فإنه أسود يعرف، فأمسكي عن الصلاة، فإذا كان الآخر فتوضئي وصلي«
“যদি হায়েয হয় অবশ্যই কালো হবে যা চিনা যায়। অতএব, সালাত থেকে বিরত থাক। অতঃপর যখন অন্য রক্ত শুরু হয় অযু কর ও সালাত আদায় কর”।[3]
এ থেকে জানা যায় যে, মুস্তাহাযা নারী রক্তের নির্দিষ্ট অবস্থাকে আলামত হিসেবে গণ্য করবে এবং তার ভিত্তিতে হায়েয ও ইস্তেহাযাহ চিহ্নিত করবে।
তৃতীয় অবস্থা: মুস্তাহাযাহ নারীর যদি নির্দিষ্ট অভ্যাস এবং হায়েযকে ইস্তেহাযা থেকে পৃথক করার বিশেষ আলামত না থাকে, তাহলে সে প্রতি মাস হায়েযের সাধারণ সংখ্যা ছয় অথবা সাত দিন বিরতি নিবে। কারণ, এটিই নারীদের ঋতুস্রাবের সাধারণ নিয়ম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামনাহ বিনতে জাহাশকে বলেন:
»إنما هي ركضة من الشيطان، فتحيضي ستة أيام أو سبعة أيام، ثم اغتسلي، فإذا استنقأت فصلي أربعة وعشرين أو ثلاثة وعشرين، وصومي وصلي، فإن ذلك يجزئك، وكذلك فافعلي كما تحيض النساء«
“এটা শয়তানের আঘাত, তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা কর, অতঃপর গোসল কর, যখন তুমি পাক হবে চব্বিশ অথবা তেইশ দিন সালাত পড়, সিয়াম রাখ ও সালাত পড়। কারণ, তোমার জন্য এটিই যথেষ্ট। সাধারণ নারীরা যেরূপ ঋতুমতী হয় তুমি সেরূপ কর”।[4]
পূর্বের আলোচনার সারাংশ: যে মুস্তাহাযা নারীর অভ্যাস আছে সে তার অভ্যাস মোতাবেক হায়েয গণনা করবে। আর যার অভ্যাস নেই, কিন্তু তার হায়েযের রক্তের নির্দিষ্ট আলামত রয়েছে সে আলামত মোতাবেক হায়েয গণনা করবে। আর যার দু’টি থেকে কোনো আলামত নেই সে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা করবে। এ ব্যাখ্যা মোতাবেক মুস্তাহাযা নারীর জন্য বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি হাদীসের মাঝে সমন্বয় হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন: মুস্তাহাযাহ নারীর ছয়টি আলামত বলা হয়:
১. অভ্যাস: এটিই শক্ত ও মজবুত আলামত। কারণ, তার সুস্থাবস্থায় এ সময়টায় হায়েয আসত, তাই এগুলো তার হায়েযের নির্ধারিত দিনক্ষণ ব্যতীত কিছু নয়।
২. রক্তের নির্দিষ্ট আলামত: কারণ হায়েযের রক্ত কালো, ঘন ও দুর্গন্ধযুক্ত বেশি হয়, সাধারণত লাল হয় না।
৩. স্বাভাবিক নারীদের সাধারণ অভ্যাস: কারণ মুস্তাহাযাহ নারীর ব্যতিক্রম অভ্যাসকে অপরাপর নারীর সাধারণ অভ্যাসের সাথে তুলনা করাই যুক্তিযুক্ত। মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয চিহ্নিত করার এ তিনটি আলামত সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত। অতঃপর তিনি অন্যান্য আলামত উল্লেখ করেন। শেষে বলেন সঠিক মত হচ্ছে হাদীসের আলামত গ্রহণ করা ও অন্যান্য আলামত ত্যাগ করা”।
২. মুস্তাহাযাহ নারীর পবিত্র অবস্থায় করণীয়:
ক. পূর্বের বর্ণনা মোতাবেক মুস্তাহাযাহ নারীর হায়েয শেষে গোসল করা ওয়াজিব।
খ. প্রত্যেক সালাতের সময় যোনিপথ থেকে নির্গত ময়লা দূরীভূত করার জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা। নির্গত রক্ত যেন বাহিরে প্রবাহিত না হয় বা গড়িয়ে না পড়ে সে জন্য যোনি পথের বহির্মুখে তুলা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহার করবে এবং তা বেঁধে দিবে যেন খসে না পড়ে। অতঃপর প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুস্তাহাযা নারীর ক্ষেত্রে বলেন:
»تدع الصلاة أيام أقرائها، ثم تغتسل وتتوضأ عند كل صلاة«
“মুস্তাহাযাহ নারী তার হায়েযের দিনগুলোয় সালাত ত্যাগ করবে, অতঃপর গোসল করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযু করবে”।[5]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
»أنعت لك الكرسف تحشين به المكان«
“তুমি নিজের জন্য কুরসুফ (সুতি কাপড়) বানিয়ে নাও এবং তার দ্বারা স্থানটি ঢেকে নাও”।[6]
ডাক্তারি গবেষণায় তৈরি ন্যাপকিন ব্যবহার করাও বৈধ।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১২৫; নাসাঈ, হাদীস নং ৩৬৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২৪; আহমদ: (৬/২০৪); মালিক, হাদীস নং ১৩৭; দারেমী, হাদীস নং ৭৭৪
[3] নাসাঈ, হাদীস নং ২১৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২০; আহমদ: (৬/৪৬৪), হাকিম ও ইবন হিব্বান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[4] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২৭; আহমদ: (৬/৪৩৯)
[5] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২৫; দারেমী, হাদীস নং ৭৯৩
[6] তিরমিযি, হাদীস নং ১২৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৮৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬২২; আহমদ: (৬/৪৩৯)