বাইবেল বলছে যে, ঈশ্বরের অভিষিক্ত বাদশাহ যেহু হত্যার বিষয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালনে যেরূপ আগ্রহী ও সক্রিয় ছিলেন, ঈশ্বরের অন্যান্য বিধান পালনে সেরূপ আন্তরিক ছিলেন না। তিনি প্রতিমাপূজা পরিত্যাগ করলেন না। এরপরও উপরে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো সম্পাদন করার কারণে ঈশ্বর তার প্রতি খুশি হন। তিনি তাঁর পাক কিতাবেই ঘোষণা দেন যে, বন্দিদের হত্যা করা, সম্পূর্ণ নিরপরাধ ও অসম্পৃক্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের হত্যা করা, বন্ধুবান্ধবদের হত্যা করা, তাওবার সুযোগ না দিয়ে প্রতারণাপূর্বক হত্যা করা, হত্যার পরে লাশগুলো ছুড়ে ফেলে দেওয়া, মাথাগুলো কেটে নগর দরজায় ফেলে রাখা ইত্যাদি সকল কর্মই ঈশ্বরের চোখে সঠিক এবং এজন্য ঈশ্বর যেহূকে পুরস্কার প্রদান করবেন। যেহূর প্রতিমাপূজা ও অন্যান্য বিধান পালনে অনাগ্রহ এ পুরস্কারের জন্য কোনো বাধা নয়:
‘‘এভাবে যেহূ ইসরাইলের মধ্যে বাল দেবতার পূজা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু নবাটের ছেলে ইয়ারাবিম ইসরাইলকে দিয়ে যেসব গুনাহ করিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সরে আসেন নি। সেটা হল বেথেল ও দানে সোনার বাছুরের পূজা করা। মাবুদ যেহূকে বললেন, ‘আমার চোখে যা ন্যায্য তা করে তুমি ভাল করেছ এবং আহাবের বংশের প্রতি আমি যা করতে চেয়েছি তুমি তা-ই করেছ, সেজন্য চতুর্থপুরুষ পর্যন্ত তোমার বংশধরেরা সিংহাসনে বসতে পারবে।’ তবুও যেহূ সমস্ত দিল দিয়ে ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহর শরীয়ত মেনে চলবার দিকে সতর্ক হলেন না। ইয়ারাবিম ইসরাইলকে দিয়ে যে সব গুনাহ করিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সরে আসলেন না।’’ (২ বাদশাহনামা ১০/২৮-৩২)
সুপ্রিয় পাঠক,
উপরে আমরা পবিত্র বাইবেলের হত্যা ও যুদ্ধ-জিহাদ বিষয়ক বিধান, নির্দেশ ও আদর্শ আলোচনা করলাম। আমরা জানি, হত্যা সকলের নিকটই ঘৃণ্য কর্ম। এরপরও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অথবা আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অনেক সময় দেশের সরকার বা প্রশাসন বিচার বিভাগীয় মৃত্যুদণ্ড প্রদানে বা যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে, ধর্ম, ধার্মিকতা, সভ্যতা ও মানবতার দাবি যথাসম্ভব কম হত্যা এবং শুধু অপরাধীর হত্যার মাধ্যমে অন্যদের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর বিপরীতে যুদ্ধের নামে যথাসম্ভব বেশি মানুষ হত্যা, নিরপরাধকে হত্যা, ক্ষেতখামার, বাড়িঘর, পশু-প্রাণি বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংস করা অসভ্যতা, বর্বরতা, অধার্মিকতা ও মানবতাবিরোধী বলে গণ্য। কিন্তু পবিত্র বাইবেলে আমরা এর বিপরীত বিষয়টাই দেখতে পাই।
সুপ্রিয় পাঠক, বিশ্বাসী পাঠক তার ধর্মগ্রন্থের প্রতিটা শব্দ, বাক্য ও বক্তব্য দ্বারাই প্রভাবিত হন। বিশেষত যে সকল ধার্মিক বিশ্বাসী ধর্মগ্রন্থ নিয়মিত পাঠ করেন তাদের শব্দ-চয়ন, বাক্য-ব্যবহার, আচরণ ও মন-মানসিকতার সকল ক্ষেত্রে তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ইবাদত-বন্দেগি, আচার-আচরণ, সেবা-ত্যাগ, পাপ, পূণ্য, হত্যা-যুদ্ধ সকল বিষয়ই এরূপ। ধর্মগ্রন্থে যে কারণে, প্রেক্ষাপটে ও পদ্ধতিতে হত্যার কথা বলা হয় বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা যে কারণে ও পদ্ধতিতে হত্যা করেছেন বলে ধর্মগ্রন্থ উল্লেখ করে ধার্মিক মানুষ সচেতন বা অবচেতন কোনোভবেই সে পদ্ধতিকে ঘৃণা করতে পারেন না। বরং এরূপ কর্ম তার কাছে স্বাভাবিক ও পূণ্যকর্ম বলেই গণ্য হয়। আর এজন্যই পরবর্তী যুগগুলোর খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও ধার্মিকদের মধ্যে বিদ্যমান ভয়ঙ্কর নৃশংসতার জন্য আধুনিক সমালোচকরা বাইবেলকেই দায়ী করেন। আমরা এখানে ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রচারকদের নৃশংসতার একটা চিত্র শুধু পাঠকদের জন্য উল্লেখ করে আমাদের আলোচনা শেষ করছি।
আমেরিকান ধর্মগুরু রেভারেন্ড রেমন্ড ডাবাক (Rev. Raymond Dubuque) এ প্রসঙ্গে বলেন:
“For a perfect example of the way ‘Christians’ have used the worst features of the bible to guide their behavior, see the way the Pilgrims justified their crimes against the Native Americans. And here's the way the Roman Catholics used their bibles to "convert" the Native Americans of Central America: The price paid for not embracing ‘the One True Faith’:
They built a long gibbet, low enough for the toes to touch the ground and prevent strangling, and hanged thirteen [natives] at a time in honor of Christ Our Saviour and the twelve Apostles. When the Indians were thus still alive and hanging, the Spaniards tested their strength and their blades against them, ripping chests open with one blow and exposing entrails, and there were those who did worse. Then, straw was wrapped around their torn bodies and they were burned alive. Millions of Native Americans were put to death for not accepting ‘the true god’.”
‘‘খ্রিষ্টানরা বাইবেলের এ সকল নিকৃষ্ট বিষয় কিভাবে তাদের আচরণ গঠনে ব্যবহার করেছে তার একটা নিখুঁত উদাহরণ জানতে ‘আমেরিকার মূল বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অপরাধগুলোর বৈধতা প্রমাণে অভিবাসীরা কী পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন’ শীর্ষক প্রবন্ধটা পড়ুন। রোমান ক্যাথলিকরা তাদের বাইবেলকে কিভাবে আমেরকিার মূল বাসিন্দাদের ধর্মান্তর করতে ব্যবহার করেছিলেন এবং ‘একমাত্র সত্য ধর্ম’ গ্রহণ না করার জন্য তাদেরকে কী মূল্য দিতে হয়েছিল তার বর্ণনা নিম্নরূপ:
তারা দীর্ঘ কিন্তু অনুচ্চ ফাঁসিকাষ্ঠ নির্মান করে যেন পায়ের আঙুল মটি স্পর্শ করতে পারে এবং শ্বাসরূদ্ধ হতে বাধা দেয়। আমাদের ত্রাণকর্তা যীশু ও তাঁর দ্বাদশ প্রেরিতের সম্মানে প্রতিবারে তারা ১৩ জন আদিবাসী আমেরিকান (রেড ইন্ডিয়ান)-কে ফাঁসি দিতেন। রেড ইন্ডিয়ানরা ঝুলন্ত ও জীবন্ত থাকা অবস্থাতেই তাদের উপরে স্পেনীয়রা তাদের শক্তি ও তাদের তরবারির ধার পরীক্ষা করতেন। তারা এক পোঁচে তাদের বুকপেট চিরে তাদের নাড়িভুড়ি বের করতেন। অনেকে এর চেয়েও খারাপ কিছু করতেন। এরপর তাদের দেহের চারিপাশে খড় জড়িয়ে জীবন্ত অবস্থাতেই তাদের পুড়িয়ে ফেলা হত। ‘একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে’ গ্রহণ না করার কারণে মিলিয়ন মিলিয়ন আদিবাসী আমেরিকানকে হত্যা করা হয়।’’[1]