অন্য ঘটনায় নবী এলিয় বা ইলিয়াস ঠাণ্ডা মাথায় ভিন্ন ধর্মের ৪৫০ জন নবীকে নিজে হাতে জবাই করেন। বাইবেল থেকে ঘটনাটার বর্ণনা দেখুন:
‘‘তখন ওবদিয় আহাবের সংগে দেখা করে কথাটা তাঁকে বললেন আর আহাব ইলিয়াসের সংগে দেখা করতে গেলেন। ইলিয়াসকে দেখে আহাব বললেন, ‘‘হে ইসরাইলের কাঁটা, এ কি তুমি?’ জবাবে ইলিয়াস বললেন, ‘‘আমি কাঁটা নই কিন্তু আপনি ও আপনার পিতার বংশের লোকেরাই ইসরাইলের কাঁটা। আপনারা মাবুদের হুকুম ত্যাগ করে বাল-দেবতাদের পিছনে গিয়েছেন। এখন লোক পাঠিয়ে ইসরাইলের সবাইকে কর্মিল পাহাড়ে (Mount Carmel) আমার কাছে জমায়েত করুন। ঈষেবলের টেবিলে বাল-দেবতার যে চারশো পঞ্চাশ জন নবী (the prophets of Baal) ও আশেরার (the prophets of the groves) চারশো জন নবী খাওয়া দাওয়া করে তাদের নিয়ে আসেন।’ তখন আহাব ইসরাইলের সব জায়গায় খরব পাঠিয়ে দিলেন এবং কর্মিল পাহাড়ে ঐ নবীদের জমায়েত করলেন।
ইলিয়াস লোকদের সামনে গিয়ে বললেন, ‘আর কত দিন তোমরা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলবে? যদি আল্লাহই মাবুদ হন তবে তাঁর এবাদত কর, আর যদি বাল-দেবতাই মাবুদ হয় তবে তার এবাদত কর।’ কিন্তু লোকেরা কোন জবাব দিল না। তখন ইলিয়াস তাদের বললেন, ‘মাবুদের নবীদের মধ্যে কেবল আমিই বাকী আছি, কিন্তু বাল-দেবতার নবী রয়েছে সাড়ে চারশো জন। এখন আমাদের জন্য দু’টা ষাঁড় নিয়ে আসা হোক। ওরা নিজেদের জন্য একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে জবাই করে টুকরা টুকরা করে কাঠের উপর রাখুক, কিন্তু তাতে আগুন না দিক। আমি অন্য ষাঁড়টা নিয়ে জবাই করে প্রস্তুত করে কাঠের উপর রাখব কিন্তু তাতে আগুন দেব না। তারপর ওরা ওদের দেবতাকে ডাকবে আর আমি ডাকব আল্লাহকে। যিনি আগুন পাঠিয়ে এর জবাব দেবেন তিনিই মাবুদ।’ এই কথা শুনে সবাই বলল, আপনি ভালই বলেছেন।’
ইলিয়াস বাল-দেবতার নবীদের বললেন, ‘তোমরা একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে প্রথমে সেটা জবাই করে প্রস্তুত করে নাও, কারণ তোমরা সংখ্যায় অনেক। তারপর তোমরা তোমাদের দেবতাকে ডাক, কিন্তু আগুন দেবে না। যে ষাঁড়টা তাদের দেওয়া হল তারা সেটা জবাই করে প্রস্তুত করে নিল। তারপর তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাল-দেবতাকে ডাকতে লাগল। তারা জোরে জোরে বলতে লাগল, ‘হে বালদেব, আমাদের জবাব দাও’। কিন্তু কোন সাড়া মিলল না, কেউ জবাব দিল না। যে বেদী তারা তৈরী করেছিল তার চারপাশে তারা নাচতে লাগল। দুপুর বেলায় ইলিয়াস তাদের ঠাট্টা করে বললেন, ‘জোরে চিৎকার কর, সে তো দেবতা। হয়ত সে গভীর চিন্তা করছে, না হয় পায়খানায় গেছে, না হয় পথে চলেছে। হয়তো সে ঘুমাচ্ছে তাকে জাগাতে হবে।’ কাজেই তারা আরো চিৎকার করতে লাগল এবং তাদের নিয়ম অনুসারে শরীরে রক্তের ধারা বয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ছোরা ও কাঁটা দিয়ে নিজেদের আঘাত করতে লাগল। দুপুর গড়িয়ে গেল আর বিকেল বেলার পশু কোরবানীর সময় পর্যন্ত ভাবে-ধরা লোকের মত তারা আবোল-তাবোল বলতেই লাগল। কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না, কেউ জবাব দিল না, কেউ মনোযোগও দিল না।
তখন ইলিয়াস সমস্ত লোকদের বললেন, ‘তোমরা আমার কাছে এস।’ তারা তাঁর কাছে গেল। ইলিয়াস মাবুদের ভেংগে পড়া কোরবানগাহ মেরামত করে নিলেন। তিনি ইয়াকুরের ছেলেদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য একটা করে বারোটা পাথর নিলেন। ... সেই পাথরগুলো দিয়ে ইলিয়াস মাবুদের উদ্দেশ্যে একটা কোরবানগাহ তৈরী করলেন এবং তার চারপাশে এমন নালা কাটলেন যার মধ্যে বারো কেজি বীজ ভরা একটা থলি বসানো যায়। তারপর তিনি কোরবানগাহের উপরে কাঠ সাজিয়ে ষাঁড়টা টুকরা টুকরা করে সেই কাঠের উপর রাখলেন এবং তাদের বললেন, ‘তোমরা চারটা কলসী পানিতে ভরে এই পোড়ানো-কোরবানীর মাংস ও কাঠের উপর ঢেলে দাও।’ তারপর তিনি বললেন, ‘আবার কর।’ লোকেরা তাই করল। তিনি হুকুম দিলেন, ‘তৃতীয় বার কর।’ তারা তৃতীয়বার তাই করল। তখন কোরবানগাহের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে নালা ভরতি হয়ে গেল।
বিকালের কোরবানীর সময় হলে পর নবী ইলিয়াস সামনে এগিয়ে এসে মোনাজাত করলেন, ‘হে আল্লাহ, ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইসরাইলের মাবুদ, আজকে তুমি জানিয়ে দাও যে, ইসরাইলের মধ্যে তুমিই মাবুদ এবং আমি তোমার গোলাম, আর তোমার হুকুমেই আমি এই সব করছি। হে আল্লাহ, আমাকে জবাব দাও, জবাব দাও, যাতে এই সব লোকেরা জানতে পারে যে, হে আল্লাহ, তুমিই মাবুদ আর তুমিই তাদের মন ফিরিয়ে এনেছ।’ তখন উপর থেকে আল্লাহর আগুন পড়ে কোরবানীর মাংস, কাঠ, পাথর ও মাটি পুড়িয়ে ফেলল এবং নালার পানিও চুষে নিল। এ দেখে লোকেরা সবাই মাটিতে উবুড় হয়ে চিৎকার করে বলল, ‘আল্লাহই মাবুদ, আল্লাহই মাবুদ।’ তখন ইলিয়াস তাদের এই হুকুম দিলেন, ‘বাল দেবতার নবীদের ধর। তাদের একজনকেও পালিয়ে যেতে দিওনা।’ তখন লোকেরা তাদের ধরে ফেলল। ইলিয়াস তাদের কীশোন উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদের হত্যা করলেন। (১ বাদশাহনামা ১৮/১৬-৪০)।