ঈশ্বর নিজের কৌশলে আরো অনেক দেশের রাজাদের মন শক্ত করে দিলেন, যেন যুদ্ধের অজুহাতে তাঁর প্রিয় নবী ও বাইবেলীয় সেনাবাহিনী এ সকল দেশ দখল করে, সৈন্যদের হত্যা করে, নিরস্ত্র, অসহায় বন্দি নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের হত্যা করে এবং তাদের সকল সম্পদ লুট করতে পারে। সাগর পাড়ের বালুকণার ন্যায় অসংখ্য সৈন্যের অগণিত ঘোড়াগুলোর পায়ের রগ কেটে হত্যারও ব্যবস্থা করলেন। পবিত্র বাইবেলের মধ্যে ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মা স্বয়ং তা সগৌরবে বর্ণনা করছেন:
‘‘হাৎসোরের বাদশাহ যাবীন এই সব শুনে মাদোনের বাদশাহ যোবর এবং শিম্রোনের ও অকষফের বাদশাহদের কাছে খবর পাঠালেন। এছাড়া তিনি উত্তর দিকে যেসব বাদশাহ ছিলেন তাঁদের কাছেও খবর পাঠালেন। সেই রাজ্যগুলো ছিল উঁচু পাহাড়ী এলকায়, কিন্নেরতের দক্ষিণে আরবা সমভূমিতে, নীচু পাহাড়ী এলাকায় এবং পশ্চিমে দোরের পাহাড়ী জায়গায়। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম দিকের কেনানীয়দের কাছে এবং পাহাড়ী এলাকার আমোরীয়, হিট্টীয়, পরিষীয় ও যিবূষীয়দের কাছে হর্মোণ পাহাড়ের নীচে মিস্পা এলাকার হিববীয়দের কাছেও খবর পাঠালেন। এই সব বাদশাহরা তাদের সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে বের হয়ে আসলেন। তাতে সাগরের কিনারার বালুকণার মত অনেক সৈন্যের একটা মস্তবড় দল হল। তাঁদের সংগে ছিল অনেক ঘোড়া এবং রথ। ... তখন মাবুদ ইউসাকে বললেন, ‘‘তুমি তাদের ভয় করো না, কারণ কালকে আমি এই সময়ের মধ্যে বনি-ইসরাইলদের সামনে তাদের সবাইকে শেষ করে দেব। তুমি তাদের ঘোড়াগুলোর পায়ের শিরা কেটে দেবে এবং রথগুলে পুড়িয়ে ফেলবে।’’
তখন ইউসা তাঁর সমস্ত সৈন্য নিয়ে মেরোম ঝর্ণার কাছে তাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালালেন। মাবুদ বনি-ইসরাইলদের হাতে তাদের তুলে দিলেন। বনিইসরাইলরা মিষ্রফোৎ-ময়িম এবং পূর্ব দিকে মিস্পী উপত্যকা পর্যন্ত তাড়া করে নিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আর কেউ বেঁচে রইল না। মাবুদ ইউসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইউসা শত্রুদের প্রতি তা-ই করলেন। তিনি তাদের ঘোড়াগুলোর পায়ের শিরা কেটে দিলেন এবং রথগুলো পুড়িয়ে ফেললেন। তারপর ইউসা ফিরে গিয়ে হাৎসোর অধিকার করে নিলেন এবং সেখানকার বাদশাহকে হত্যা করলেন। হাৎসোর ছিল সব রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রধান। বনি-ইসরাইলরা হাৎসোরের সবাইকে একেবারে ধ্বংস করে দিল, একটা প্রাণীও বাঁচিয়ে রাখল না (there was not any left to breathe)। এরপর ইউসা শহরটা পুড়িয়ে ফেললেন। ইউসা ঐসব বাদশাহদের শহরগুলো দখল করে নিয়ে সেখানকার বাদশাহদের বন্দি করলেন। তিনি সেই বাদশাহদের ও সেখানকার লোকদের হত্যা করলেন। মাবুদের গোলাম মূসার হুকুমে তিনি তাদের একেবারে ধ্বংস করে দিলেন। ... এই শহরগুলো থেকে যে সব জিনিসপত্র ও পশুপাল লুট করা হয়েছিল সেগুলো বনি-ইসরাইলরা নিজেদের জন্য নিয়ে গেল; কিন্তু সমস্ত লোককে তারা একেবারে শেষ করে দিল, একটা প্রাণীকেও তারা বাঁচিয়ে রাখল না। মাবুদ তাঁর গোলাম মূসাকে যে সব হুকুম দিয়েছিলেন মূসা ইউসাকে তা জানিয়েছিলেন, আর ইউসা সেই সব হুকুম পালন করেছিলেন। মাবুদ মূসাকে যে সব হুকুম দিয়েছিলেন ইউসা তার একটাও অমান্য করেননি। এভাবে ইউসা গোটা দেশটাই দখল করে নিলেন। ... মাবুদ ঐ সব লোকদের মন কঠিন করে দিয়েছিলেন যাতে তারা বনি-ইসরাইলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর তাতে যেন তারা ধ্বংসের বদদোয়ার অধীন হয় এবং কোন রকম দয়া না পেয়ে মারা যায়। এই হুকুমই মাবুদ মূসাকে দিয়েছিলেন। এরপর ইউসা গিয়ে পাহাড়ী এলাকার অনাকীয়দেরও হত্যা করলেন। এই এলাকার মধ্যে ছিল হেবরন, দবীর ও অনাব শহর এবং এহুদা ও ইসরাইলের সমস্ত জায়গাগুলো। তিনি অনাকীয়দের এবং তাদের শহর ও গ্রামগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিলেন। ... মাবুদ মূসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারে ইউসা গোটা দেশটা দখল করে নিলেন এবং গোষ্ঠী অনুসারে সম্পত্তি হিসাবে তা বনি-ইসরাইলদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। দেশে তখনকার মত যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল।’’ (ইউসা ১১/১-২৩)
এখানেও আমরা দেখছি যে, ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মা বাইবেলের মধ্যে কয়েকটা বিষয় বার বার বলছেন: (১) এ সকল যুদ্ধে সৈন্য ছাড়াও নিরস্ত্র, যুদ্ধবন্দি নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকল মানুষ এবং সকল প্রাণিকে তরবারি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, শ্বাস নেওয়ার মত কেউ থাকে নি (they smote all the souls that were therein with the edge of the sword, utterly destroying them: there was not any left to breathe), (২) শহর ও গ্রামগুলো একেবারে ধ্বংস করা হয়েছে এবং আগুন দিয়ে পুড়ানো হয়েছে, (৩) এ সকল হত্যাকাণ্ড সবই ঈশ্বরের নির্দেশমত হয়েছে, যে নির্দেশ তিনি মোশিকে দিয়েছিলেন, (৪) ইউসা গণহত্যার নির্দেশগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এ কথাগুলো ঈশ্বর স্বল্প পরিসরের মধ্যেও বার বার বললেন কেন? যেন কোনো বাইবেলে বিশ্বাসী ঈমানদার ইহুদি বা খ্রিষ্টান পরদেশ দখল বা পরধর্ম নির্মূলের ক্ষেত্রে এরূপ গণহত্যা বাস্তবায়নে ত্রুটি না করে? কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টান যেন এরূপ গণহত্যাকে মানবতা বিরোধী বলে মনে করে বেঈমান না হয়?