‘‘ইউসা সেই দিনই মক্কেদা অধিকার করে নিলেন। তিনি সেই শহরের বাদশাহ ও সমস্ত লোককে হত্যা করলেন এবং সেখানকার সব প্রাণীদের শেষ করে দিলেন, কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। তিনি জেরিকোর বাদশাহর যে অবস্থা করেছিলেন মক্কেদার বাদশাহর অবস্থাও তা-ই করলেন। পরে ইউসা বনি-ইসরাইলদের সকলকে নিয়ে মক্কেদা থেকে লিবনার দিকে এগিয়ে গিয়ে তা আক্রমণ করলেন। মাবুদ সেই শহর ও সেখানকার বাদশাহকে বনি-ইসরাইলদের হাতে তুলে দিলেন। ইউসা সেই শহরের লোকদের ও সব প্রাণীদের মেরে ফেললেন, কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। তিনি জেরিকোর বাদশাহর যে অবস্থা করেছিলেন সেখানকার বাদশাহর অবস্থাও তা-ই করলেন। এরপর ইউসা বনি-ইসরাইলদের সবাইকে নিয়ে লিবনা থেকে লাখীশের দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি লাখীশ ঘেরাও করে তা আক্রমণ করলেন। মাবুদ লাখীশ বনি-ইসরাইলদের হাতে তুলে দিলেন। দ্বিতীয় দিনে ইউসা সেটা দখল করে নিলেন। ইউসা লিবনা শহরে যেমন করেছিলেন সেভাবে লাখীশের লোকদের ও সব প্রাণীদের মেরে ফেললেন। ... শেষ পর্যন্ত আর কেউই বেuঁচ রইল না।
তারপর ইউসা বনী ইসরাইলদের সবাইকে নিয়ে লাখীশ থেকে ইগেস্নানের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারা ইগেস্নান ঘেরাও করে তা আক্রমণ করল। সেই দিনই তারা ইগেস্নান অধিকার করে নিল এবং সেখানকার লোকদের হত্যা করল। লাখীশে ইউসা যেমন করেছিলেন সেভাবেই তিনি ইগেস্নানের সব প্রাণীদের একে বারে শেষ করে দিলেন। এরপর ইউসা বনি-ইসরাইলদের সবাইকে নিয়ে ইগেস্নান থেকে হেবরনে গিয়ে শহরটা আক্রমণ করলেন। তারা শহরটা অধিকার করে নিয়ে সেখানকার লোকদের, তাদের বাদশাহকে, তার আশেপাশের গ্রামগুলোর সমস্ত লোকদের, হেবরনের সব প্রাণীদের মেরে ফেলল। ইউসা ইগেস্নানে যেমন করেছিলেন তেমনি সেখানে কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না; তিনি হেবরন ও তার সমস্ত লোকদের একেবারে শেষ করে দিলেন। পরে ইউসা বনি-ইসরাইলদের সবাইকে নিয়ে গিয়ে দবীর শহর আক্রমণ করলেন। তারা সেই শহর, সেখানকার বাদশাহ এবং তার গ্রামগুলো অধিকার করে নিয়ে সেখানকার সবাইকে হত্যা করল। তারা সেখানকার সব প্রাণীদের একেবারে শেষ করে দিল। ইউসা কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। তিনি লিবনা ও তার বাদশাহ এবং হেবরনের অবস্থা যা করেছিলেন দবীর ও তার বাদশাহর অবস্থাও তা-ই করলেন।
এভাবে ইউসা সমস্ত এলাকাটা জয় করে নিলেন। তার মধ্যে ছিল উঁচু পাহাড়ী এলাকা, নেগেভ, নীচু পাহাড়ী এলাকা ও পাহাড়ের গায়ের ঢালু জায়গা। তিনি সেই এলাকার বাদশাহদেরও হারিয়ে দিলেন এবং সেখানকার কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। বনি-ইসরাইলদের মাবুদ আল্লাহ যেমন হুকুম দিয়েছিলেন সেভাবে তিনি সমস্ত প্রাণীদের একেবারে শেষ করে দিয়েছিলেন।’’ (ইউসা ১০/২৮-৪১)
পরবর্তী অধ্যায়ে ঈশ্বর বলছেন: ‘‘তারপর ইউসা ফিরে গিয়ে হাৎসোর অধিকার করে নিলেন এবং সেখানকার বাদশাহকে হত্যা করলেন। হাৎসোর ছিল সব রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রধান। বনি-ইসরাইলরা হাৎসোরের সবাইকে একেবারে ধ্বংস করে দিল, একটা প্রাণীও বাঁচিয়ে রাখল না (there was not any left to breathe)। এরপর ইউসা শহরটা পুড়িয়ে ফেললেন।’’ (ইউসা ১১/১০-১১)
তাহলে সকল মানুষ ও সকল প্রাণিকে নির্বিচারে হত্যা করার এবং কাউকে বাঁচিয়ে না রাখার বিষয়ে বনি-ইসরাইলের মাবুদের আগ্রহ ও নির্দেশ লক্ষ্য করুন! আরো লক্ষ্য করুন সে হুকুম পালনে বাইবেলীয় নবী ও ধার্মিকদের আন্তরিকতা। সর্বোপরি যুদ্ধ নামের এ সকল চাপিয়ে দেওয়া গণহত্যায় সকল মানুষ, সকল প্রাণিকে নির্বিশেষে হত্যা করা এবং কাউকে বাঁচিয়ে না রাখার বর্ণনা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাইবেল প্রণেতা ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মার (পাক-রূহের) আগ্রহও দেখুন। ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মা এক বার নয়, প্রতিটা ক্ষেত্রে বার বার পুনরুক্তি করছেন যে, সকলকে তরবারি দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হল, সকল প্রাণিকে মারা হল, কাউকে বাঁচতে দেওয়া হল না, এবং জেরিকো... ইত্যাদি শহরের মতই করা হল, সকল শ্বাসগ্রহণকারীকে চূড়ান্তরূপে নির্মূল করা হল, ঠিক যেভাবে ঈশ্বরের নির্দেশ (as the LORD God of Israel commanded)।
ঈশ্বর কী উদ্দেশ্যে এ বিষয়টা এত গুরুত্ব দিয়ে বার বার বললেন? যেন বাইবেল অনুসারীরা সকল যুগে এরূপ গণহত্যাকে নাজাতের পথ হিসেবে বিশ্বাস করেন? পরদেশ দখল এবং ভিন্ন ধর্ম নির্মূলে তাদের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন? সকল যুদ্ধের ক্ষেত্রে সর্বদা যেন তারা এ আদর্শ সঠিকভাবে ‘ঠিক যেভাবে ঈশ্বরের আদেশ সেভাবে’ পালন করতে পারেন? এরূপ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সময়ে তাদের মধ্যে পাপবোধ বা দ্বিধা যেন কখনোই না আসে?