৯. ৭. ২. ১০. যীশুর পবিত্রতা রক্ষায় এ গণহত্যা ঈশ্বরের প্রেমের প্রকাশ!

পাঠক একে কী বলে গণ্য করবেন? সভ্যতা? ধার্মিকতা? যৌক্তিকতা? বর্বরতা? নির্মমতা? আপনি যাই বলুন না কেন, খ্রিষ্টান প্রচারকরা একে ঐশ্বরিক করুণা ও প্রেমের প্রকাশ বলেই দাবি করছেন! Christian Apologetics & Research Ministry (CARM) এর ওয়েবসাইট এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:

“Why was God so harsh with those in idolatry? We must understand that God dealt very harshly because it was through the people of Israel that the Messiah would later come. Satan, in his perpetual effort to oppose God, sought to have the people of God fall into false worship and through intermarriage with other people to destroy the messianic line and make not only the promises of God null and void but also destroy means by which the Messiah could be born. If this could be accomplished, then none would have any hope of deliverance from sin. Therefore, we see in the Old Testament God being very harsh and strict according to the Law.”

‘‘ঈশ্বর কেন মূর্তিপূজারকদের প্রতি এত কঠোর ছিলেন? আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে এদের সাথে আচরণ করেছেন, কারণ বনি-ইসরাইলের মধ্যেই পরবর্তীকালে মসীহ আসবেন। শয়তান সর্বদাই ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। সে চেয়েছিল যে, ঈশ্বরের প্রজারা যেন মিথ্যা পূজায় লিপ্ত হয় এবং ভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে বিবাহের মাধ্যমে মসীহের বংশধারা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে শয়তান ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিকে বাতিল করবে এবং মাসীহের জন্মের পথটাই সে ধ্বংস করে দেবে। আর এটা ঘটে গেলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আর কারোই কোনো আশা থাকত না। এজন্যই আমরা দেখি যে, পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর শরীয়ত অনুসারে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও কঠোর।’’[1]

খ্রিষ্টান প্রচারকদের এ ব্যাখ্যার মূল বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

(১) মসীহের জন্ম না হলে কোনো মানুষের পাপমুক্তির কোনো আশা-ই থাকত না। ঈশ্বর কোনোভাবেই কোনো মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম হতেন না।

(২) বনি-ইসরাইল প্রতিমাপূজায় লিপ্ত হলে এবং অন্য বংশের সাথে বিবাহের মাধ্যমে বনি-ইসরাইলের বংশীয় বিশুদ্ধতা নষ্ট হলে ঈশ্বর আর মসীহকে প্রেরণ করতে পারতেন না। বনি-ইসরাইল মূর্তিপূজা ও ভিন্ন বংশে বিবাহ করলে ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি পালনে অক্ষম হতেন।

(৩) এভাবে নির্মমভাবে মাদিয়ানীয় সকল পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে শুধু মাদিয়ানীয় কুমারী মেয়েদের সাথে বনি-ইসরাইলের বিবাহ বা ভোগের ব্যবস্থা করে ঈশ্বর বনি-ইসরাইলকে মূর্তিপূজা ও ভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে বিবাহ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেন। আর এ মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই এত নিষ্ঠুরতা!

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি এ যুক্তিগুলোর সাথে একমত? কেউ যদি এ যুক্তি বা অজুহাতকে মূল গণহত্যার চেয়েও অধিক বর্বর ও অশোভন বলে দাবি করেন তবে তাকে কি দোষ দেওয়া যায়? নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:

(ক) সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা মসীহের জন্মের মাধ্যম ছাড়া মানুষদের ক্ষমা করতে পারেন না? এতই অক্ষম তিনি? বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান স্রষ্টা প্রতিটা মানুষের সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টির সাথে তার মমতার সম্পর্ক মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের চেয়েও লক্ষকোটি গুণ বেশি। কোনো মায়ের মমতা, করুণা বা ক্ষমা লাভের জন্য সন্তানের কি কোনো মাধ্যম বা মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয়? স্রষ্টার লক্ষকোটি সৃষ্টির মধ্যে যারা মাসীহের নাম শুনেননি, অথবা শুনলেও তাঁর বিষয়ে সঠিক তথ্য না জানার কারণে বিশ্বাস করতে পারেন নি তারা কেউ মুক্তি পাবেন না? যদি এটা সত্য হয় তবে তা কি ঈশ্বরের করুণা না নির্মমতা? আমরা দেখব যে, যীশু খ্রিষ্টের দাদীদের একজন ‘বেশ্যা রাহব’। কী বিশ্বাসে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন?

(খ) ঈশ্বর কি বনি-ইসরাইলকে শিক্ষা দিয়ে ও প্রয়োজনে শাস্তি দিয়ে তাদের ধার্মিকতা ও বংশীয় বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে পারতেন না? বনি-ইসরাইলকে মূর্তিপূজা ও অন্য বংশের মেয়ে বিবাহ করা থেকে বিরত রাখতে বনি-ইসরাইলকে শিক্ষা ও শাস্তি দিতে হবে? না অন্য দেশ ও জাতির নিরপরাধ যুদ্ধবন্দি মানুষগুলোকে হত্যা করতে হবে? এ-ই কি বাইবেলীয় ঈশ্বরের বা পিতা ঈশ্বরের প্রেম ও মমতার প্রকাশ? খ্রিষ্টান প্রচারকদের এ দাবি কি ঈশ্বরের নামে জঘন্য পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নয়?

(গ) এরূপ নির্মমতা বা বর্বরতার সাথে লক্ষ লক্ষ যুদ্ধবন্দিকে হত্যা না করলে কি বনি-ইসরাইলের কোনো মানুষই পবিত্র থাকত না? বনি-ইসরাইল কি এতই খারাপ জাতি যে, তাদের মধ্যে মসীহ পাঠানোর মত একজন ভাল মানুষও মিলত না?

(ঘ) বনি-ইসরাইলের সকল মানুষ মূর্তিপূজা করলে ও অন্য বংশে বিবাহ করলে ঈশ্বর মসীহকে পাঠাতে অক্ষম হতেন? মসীহের জন্মের জন্য তাঁর বংশধারার সকলের বিশ্বাস ও বংশধারার বিশুদ্ধতা জরুরী? পূর্বপুরুষদের পাপ বা অন্য বংশে বিবাহের কারণে পরবর্তী প্রজন্মের মানুষেরা দায়ী হবেন? এতে তাদের পবিত্রতা নষ্ট হবে?

(ঙ) বনি-ইসরাইলের ধার্মিকতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য মাদিয়ানীয় কয়েক লক্ষ নারী পুরুষকে জবাই করে এবং ৩২ হাজার কুমারী মেয়েকে ধর্ষণের ব্যবস্থা করে ঈশ্বর কি বনি-ইসরাইলকে পবিত্র রাখতে পেরেছিলেন? বাইবেল পাঠ করলে পাঠক দেখবেন যে, এর পরেও বনি-ইসরাইলের মূর্তিপূজা কখনোই থামেনি। যিহোশূয়, বিচারকর্তৃগণ, শমূয়েল, রাজাবলি, বংশাবলি, যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিস্কেল ইত্যাদি পুস্তকগুলো বনি-ইসরাইলের রাজা, নবী, ইমাম ও অন্যান্য সকল মানুষের মূর্তিপূজা, ব্যভিচার, অনাচার, মাতলামি ইত্যাদি পাপাচারের বিবরণে ভরপুর।

(চ) সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এ বর্বরতম নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে কি ঈশ্বর যীশু খ্রিষ্টের বংশধারা ধার্মিক ও বিশুদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন? বাইবেল প্রমাণ করে যে, তিনি তাতে সক্ষম হননি। মসীহের বংশধারায় মূর্তিপূজারী যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন ভিন্ন বংশের অপবিত্র নারীরা। কয়েকটা তথ্য উল্লেখ করছি:

[1] https://carm.org/bible-difficulties/genesis-deuteronomy/why-were-only-virgins-left-alive-among-midianites