৯.৭. অন্যান্য জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদর্শ / ৯. ৭. ১. ইসরাইল ও তাঁর পুত্রদের গণহত্যা ও লুটতরাজ

৯.৭. অন্যান্য জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদর্শ

যুদ্ধ বিষয়ক ঐশ্বরিক নির্দেশাবলি পালনে বাইবেলীয় নবী, রাজা ও প্রজাদেরর আদর্শ আচরণ আলোচনার শুরুতে আমরা ঈশ্বরের মনোনীত প্রজাদেরর আভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কিছু নমুনা আলোচনা করেছি। এটা বাইবেলীয় যুদ্ধের ক্ষুদ্র একটা অংশ। এবার আমরা বিধর্মী জাতি বা পরজাতির সাথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাইবেলীয় নবীদের ও ধার্মিক প্রজাদের আচরণ ও কর্মকা- পর্যালোচনা করতে চাই।

৯. ৭. ১. ইসরাইল ও তাঁর পুত্রদের গণহত্যা ও লুটতরাজ

বাইবেলের বিবরণ অনুসারে ইসরাইল বা যাকোব (ইয়াকুব আ.) তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শিখিম (Shechem) শহরে এসে বাস করতে শুরু করলেন। এ সময়ে তাঁর মেয়ে দীণাকে তথাকার এক যুবক হরণ করে এবং ভ্রষ্ট করে। যুবক দীণাকে বিবাহের প্রস্তাব করলে যাকোব ও তাঁর পুত্ররা প্রতারণাপূর্বক উক্ত শহরের সকল পুরুষকে হত্যা করেন এবং সকল নারী, শিশু, পশু ও দ্রব্যাদি লুট করেন:

‘‘আর লেয়ার কন্যা দীণা, যাকে তিনি ইয়াকুবের জন্য প্রসব করেছিলেন, সেই দেশের কন্যাদের সঙ্গে দেখা করতে বাইরে গেল। আর হিববীয় হমোর নামক দেশাধিপতির পুত্র শিখিম তাকে দেখতে পেল এবং তাকে অপহরণ করে, তার সঙ্গে শয়ন করে তার ইজ্জত নষ্ট করলো। আর ইয়াকুবের কন্যা দীণার প্রতি শিখিম অনুরক্ত হওয়াতে তাকে মহববত করলো ও মিষ্ট কথা বললো। পরে শিখিম তাঁর পিতা হমোরকে বললো, তুমি আমার সঙ্গে বিয়ে দেবার জন্য এই কন্যাকে  গ্রহণ কর। ... পরে শিখিমের পিতা হমোর ইয়াকুবের সঙ্গে কতাবার্তা বলার জন্য আসল।

... ইয়াকুবের পুত্ররা ছলপূবর্ক আলাপ করে শিখিমকে ও তার পিতা হমোরকে উত্তর দিল; তারা তাদেরকে বললো, খৎনা করানো হয় নি এমন লোককে যে আমাদের বোন দিই, এমন কাজ আমরা করতে পারি না; করলে আমাদের দুর্নাম হবে। কেবল এই কাজ করলে আমরা তোমাদের কথায় সম্মত হবো; আমাদের মত তোমরা প্রত্যেক পুরুষের যদি খৎনা করাও ... তখন হমোর ও তার পুত্র শিখিমের কথায় ... তার নগর-দ্বার দিয়ে যে সকল পুরুষ বাইরে যেত তাদের খৎনা করানো হল। .... পরে তৃতীয় দিনে যখন তারা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিল দীণার সহোদর শিমিয়োন ও লেবি, ইয়াকুবের এই দুই পুত্র নিজ নিজ তলোয়ার নিয়ে নির্ভয়ে নগর আক্রমণ করে সমস্ত পুরুষকে হত্যা করলো । তারা হমোর ও তার পুত্র শিখিমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে শিখিমের বাড়ি থেকে দীণাকে নিয়ে চলে এলো। ওরা তাদের  বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছিল, এজন্য ইয়াকুবের পুত্ররা নিহত লোকদের কাছে গিয়ে নগর লুট করলো। তারা ওদের ভেড়া, গরু ও গাধাগুলো এবং নগরস্থ ও ক্ষেতের যাবতীয় দ্রব্য হরণ করলো; আর ওদের শিশু ও স্ত্রীদেরকে বন্দী করে ওদের সমস্ত ধন ও বাড়ির সর্বস্ব লুট করলো।’’ (পয়দায়েশ ৩৪/১-২৯, কি. মো.-১৩)

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে জঘন্য অপরাধ। তবে এরূপ অপরাধ বাইবেলীয় নবী, ইবনুল্লাহ ও ধার্মিকরা সর্বদায় করে থাকেন। এরপরও যাকোব-পুত্ররা যা করেছেন তা কোনো বিচারেই গণহত্যা ছাড়া কিছুই নয়। তারা দেশের সকল পুরুষকে বধ করলেন, তাদের শিশু ও স্ত্রীদেরকে বন্দি করলেন এবং তাদের ধন-সম্পদ লুট করলেন।

তবে তথ্য বিচারে বাইবেলের এ গল্পটাই ভিত্তিহীন। কারণ, একজন তরুণের বিবাহের আগ্রহ পূরণ করতে একটা শহরের সকল বয়স্ক মানুষ নিজের লিঙ্গাগ্র ছিন্ন করতে রাজি হবেন বলে কল্পনা করা যায় না। যদি তা বাস্তবে ঘটেও তবে শহরের মানুষগুলো যতই অসুস্থ বা পীড়িত হোক, মাত্র দু জন মানুষ পুরো একটা শহরের সকল পুরুষকে হত্যা করে ফেলবে এ কথা কল্পনা করা যায় না। তলোয়ার দিয়ে একটা শহরের প্রতিটা বাড়িতে যেয়ে পুরুষদের হত্যা করতে কত সময় লাগে? ততক্ষণ অন্যান্য নারী ও পুরুষেরা কি শুয়ে শুয়ে কোরবানী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? প্রতিরোধ করতে না পারলেও পালানোর কথা কি তাদের মনে উদয় হয়নি?