৯. ৬. ৮. দাউদ-বাহিনী ও দাউদ-পুত্রের বাহিনীর মধ্যে হত্যাযজ্ঞ

এখানে বাইবেল বলছে যে, তেত্রিশ বছর দাউদ সমস্ত বনি-ইসরাইলের উপর রাজত্ব করেছেন। তবে বাস্তবে এ তেত্রিশ বছরের মধ্যেও ক্ষমতার জন্য দাউদ পরিবার আরো হাজার হাজার বনি-ইসরাইলের রক্তপাত করেন। সমস্ত বনি-ইসরাইল দাউদের বিরুদ্ধে তার পুত্র অবশালোমকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করে এবং ইসরাইলী বাহিনীর সাথে দাউদ বাহিনীর যুদ্ধে হাজার হাজার বনি-ইসরাইলের রক্তপাত হয়।

আমরা দেখেছি যে, দাউদের পুত্র অম্মোন তার বৈমাত্রেয় বোন তামরকে ধর্ষণ করেন। দাউদ অম্মোনের কোনো বিচার করেননি। দু’বছর পর তামরের ভাই অবশালোম অম্মোনকে হত্যা করেন। এক পর্যায়ে অবশালোম নিজেই রাজা হন এবং তার পিতা দাউদের স্ত্রীদেরকে সকলের সামনে ধর্ষণ করেন। এ সময়ে বনি-ইসরাইলের অধিকাংশ মানুষ অবশালোমের পক্ষে ছিলেন। ২ শামুয়েল ১৩ অধ্যায় থেকে ১৯ অধ্যায় পর্যন্ত পড়লে পাঠক দেখবেন, পবিত্র বাইবেল মানুষদের মধ্যে যে ধার্মিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানসিকতা তৈরি করে তার মধ্যে এবং বাইবেলীয় ঈশ্বরপুত্র ও ঈশ্বর-পৌত্রদের ধার্মিকতার মধ্যে আত্মহত্যা, পিতৃহত্যা, গণহত্যা, ষড়যন্ত্র, ও অশালীনতার স্থান কতটুকু। এখানে শুধু একটা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করছি:

‘‘বনি-ইসরাইলদের (অবশালোমের বাহিনীর) সংগে যুদ্ধ করবার জন্য (দাউদের) সৈন্যদল বের হয়ে গেল। আফরাহীমের বনে যুদ্ধ হল। সেখানে দাউদের লোকদের কাছে ইসরাইলের সৈন্যদল হেরে গেল। সেই দিন ভীষণ যুদ্ধ হল এবং বিশ হাজার লোক মারা পড়ল। যুদ্ধটা সমস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল এবং যুদ্ধে যত না লোক মরল তার চেয়ে বেশী মরল বনের মধ্যে।’’ (২ শামুয়েল ১৮/৬-৮)

সবচেয়ে অবাক বিষয়, দাউদ ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য বিশাল বাহিনী পাঠাচ্ছেন অবশালোম বাহিনীকে হত্যা করতে। কিন্তু তিনি সেনাপতি ও সৈন্যদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, অবশালোমকে হত্যা না করতে: ‘‘আমার মুখ চেয়ে তোমরা সেই যুবক অবশালোমের সংগে নরম ব্যবহার কোরো।’’ (২ শামুয়েল ১৮/৫)

বিরোধী ইসরাইলীয় বাহিনীর হাজার বা লক্ষ মানুষ মরলে দাউদের দুঃখ নেই; তবে সকল সংঘাত ও হত্যাকাণ্ড-র গুরু ও দাউদের স্ত্রীদের ধর্ষক দাউদ-পুত্র অবশালোমকে যে কোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে দাউদের আকুতি বড়ই উৎকট!

এরপর বিরোধী বাহিনীর হাজার হাজার বনি-ইসরাইলের মৃত্যুর সংবাদে দাউদ কষ্ট পেলেন না কিন্তু বিদ্রোহের নায়ক নিজ পুত্রের মৃত্যুতে শোকাতুর! ‘‘হায়, আমার ছেলে অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে অবশালোম! তোমার বদলে যদি আমি মরতে পারতাম! হায় অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!...  সেই জয়ের দিনটা সৈন্যদলের কাছে একটা শোকের দিন হয়ে উঠল ... বাদশাহ তাঁর মুখ ঢেকে এই বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, ‘হায়, আমার ছেলে অবশালোম! হায়, অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!’’ (২ শামুয়েল ১৮/৩৩, ১৯/২-৪)

এটা কি ঈশ্বর-প্রেম? প্রজা-প্রেম? ঈশ্বরের শরীয়ত পালন! প্রজা পালন! ঐশ্বরিক রাজত্ব বা মসীহী রাজত্বের প্রজাপ্রেম? না দ্বিমুখিতা? মুনাফিকী? বাইবেলীয় মসীহ, নবী, রাজা, ইবনুল্লাহ বা ঈশ্বরপুত্র ও ঈশ্বরের প্রথমপুত্রদের ধার্মিকতা অনুধাবন করা আমাদের জন্য অসম্ভব!