আমরা দেখেছি যে, যাকোব বা ইসরাইলের বার ছেলের নামে বনি-ইসরাইলের ১২ গোষ্ঠী। ইউসুফ (আ.) বা যোশেফ গোষ্ঠী তাঁর দু’ ছেলের নামে দু’টা গোষ্ঠীতে বিভক্ত: ইফ্রমিয় বা আফরাহীম (Ephraim) ও মনঃশি বা মানশা (Manasseh)। মিসরের হেলিওপলিস শহরের পৌত্তলিক পুরোহিত পোটিফেরের (Potipherah) মেয়ে আসনতের (Asenath) গর্ভে যোশেফের এ দু’ পুত্রের জন্ম (আদিপুস্তক ৪১/৫০-৫২)।
ঈশ্বরের একজন মনোনীত বীর ও শাসনকর্তা যিপ্তহ। তিনি এক বেশ্যার অবৈধ সন্তান ছিলেন। তাঁর পিতার নাম গিলিয়দ। পিতার ঔরসে বেশ্যার ঘরে অবৈধ জন্মের কারণে গিলিয়দের ছেলেরা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। (কাজীগণ ১১/১-২)। তিনি মনশি (Manasseh) গোষ্ঠীর মানুষ। কারো মতে তিনি গাদ (Gad) গোষ্ঠীর ছিলেন।[1]
বাইবেল বলছে, জারজ সন্তান সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু যিপ্তহের ক্ষেত্রে সদাপ্রভু এ বিধান ভঙ্গ করেন। তিনি যিপ্তহকে সদাপ্রভুর সমাজের প্রধান ও ঈশ্বরের মনোনীত প্রজা বনি-ইসরাইলের শাসনকর্তা মনোনীত করেন। যিপ্তহ মাবুদের রূহ বা পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হন। (কাজীগণ ১১/২৯)। তিনি পবিত্র আত্মার নির্দেশে ও শক্তিতে বনি-ইসরাইলদের শত্রুদের ধ্বংস করেন। রাজা যিপ্তহের এ বিজয়ে আফরাহীম গোষ্ঠী ভয়ঙ্কর ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, যিপ্তহ কেন যুদ্ধের সময় আফরাহীমদের সাথে নিলেন না!
‘‘পরে আফরাহীম গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের সৈন্যদের ডেকে নিয়ে নদী পার হয়ে সাফোনে গেল। সেখানে তারা যিপ্তহকে বলল, ‘অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে তোমার সংগে যাবার জন্য কেন তুমি আমাদের ডাকনি? আমরা তোমাকে সুদ্ধ তোমার বাড়ী পুড়িয়ে দেব। জবাবে যিপ্তহ বললেন, ‘আমি আমার লোকদের নিয়ে অম্মোনীয়দের সংগে ভীষণ যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলাম। আমি তোমাদের ডেকেছিলাম, কিন্তু তোমরা তাদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করনি। আমি যখন দেখলাম তোমরা আমাকে সাহায্য করবে না তখন আমি আমার প্রাণ হাতে করে অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে গেলাম আর মাবুদও আমাকে তাদের উপর জয়ী করলেন। এখন কেন তোমরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য উপস্থিত হয়েছ?’ যিপ্তহ তখন গিলিয়দের সব লোকদের ডেকে জমায়েত করে নিয়ে আফরাহীমের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, কারণ আফরাহীম গোষ্ঠীর লোকেরা বলেছিল, ওহে গিলিয়দীয়রা, তোমরা তো আফরাহীম ও মানশা গোষ্ঠীর দল ত্যাগ করে আসা লোক।’ সেই যুদ্ধে গিলিয়দীয়রা তাদের হারিয়ে দিল। জর্ডান নদীর যে জায়গাগুলো হেঁটে পার হয়ে আফরাহীম এলাকার দিকে যাওয়া যায় সেই জায়গাগুলো গিলিয়দীয়রা দখল করে নিল। আফরাহীম-গোষ্ঠীর বেঁচে থাকা কোন লোক যখন বলত, ‘আমাকে পার হতে দাও’, তখন গিলিয়দের লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করত, ‘তুমি কি আফরাহীমীয়?’ জবাবে সে যদি বলত ‘না’, তবে তারা বলত, খুব ভাল, তাহলে বল দেখি, ‘শিবেবালেৎ’। কথাটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে না পেরে যদি সে বলত ‘ছিবেবালেৎ’ তবে তারা তাকে ধরে জর্ডান নদীর ঐ হেঁটে পার হওয়ার জায়গাতেই হত্যা করত। এভাবে সেই সময় বিয়াল্লিশ হাজার আফরাহীমীয়কে হত্যা করা হয়েছিল। গিলিয়দীয় যিপ্তহ ছয় বছর বনি-ইসরাইলদের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি ইন্তেকাল করলে পর তাঁকে গিলিয়দের একটা গ্রামে দাফন করা হয়।’’ (কাজীগণ ১২/১-৭)
ঈশ্বরের প্রিয় মনোনীত বান্দাদের মানসিকতা ও বাইবেলীয় যুদ্ধের নৈতিকতা লক্ষণীয়! যুদ্ধের সময় না ডাকার অভিযোগে ঈশ্বরের মনোনীত শাসনকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা! যুদ্ধের পরে পরাজিত পক্ষের মানুষদের ধরে ধরে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা!! আর এভাবে মাত্র বিয়াল্লিশ হাজার মানুষ হত্যা! এরা সকলেই ঈশ্বরের মনোনীত বান্দা!! ঈশ্বরের মনোনীত বিয়াল্লিশ হাজার মানুষ হত্যার কারণেই কি ঈশ্বর খুশি হয়ে যিপ্তহকে ছয় বছর বনি-ইসরাইলের উপর রাজত্ব করার সুযোগ দিলেন?