ঈশ্বরের নবী, মসীহ ও বাদশাহ তালুত যেমন হত্যা না করার জন্য তাৎক্ষণিক শাস্তি পেলেন, তেমনি শাস্তি পেয়েছিলেন ইসরাইল রাজ্যের পরবর্তী এক বাদশাহ আহাব। আমরা দেখেছি যে, শলোমনের মৃত্যুর পরে বাইবেলীয় রাজ্য দু’ ভাগে বিভক্ত হয়: এহুদা রাজ্য এবং ইসরাইল রাজ্য। ইসরাইল রাজ্যের ৭ম বাদশাহ আহাব (Ahab)। তিনি আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৮৭০ সালের দিকে রাজা হন এবং বাইশ বছর রাজত্ব করেন। (উইকিপিডিয়া: Ahab প্রবন্ধ)। ইসরাইল ও এহুদা উভয় রাজ্যের অন্যান্য অধিকাংশ বাদশাহের মতই তিনি পরিপূর্ণভাবেই মূর্তিপূজার মধ্যে নিবেদিত ছিলেন। (১ বাদশাহনামা ১৬/২৯-৩৩) এতে ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হলেও তাকে এজন্য নগদ শাস্তি দেননি। তবে একজন বন্দি রাজাকে হত্যা না করার কারণে তাকে নগদ শাস্তি দিয়েছেন। ১ বাদশাহনামা ১৬ থেকে ২২ অধ্যায় পাঠ করলে পাঠক বাদশাহ আহাবের বিস্তারিত কাহিনী জানতে পারবেন। এখানে শুধু ঐশ্বরিক শাস্তির বিষয় উল্লেখ করছি।
প্রথমত: সিরিয় বাহিনীর উপর আহাবের বিজয় ও সন্ধি
বাদশাহ আহাব একনিষ্ঠ প্রতিমাপূজক ও বাল দেবতার পূজারী হলেও ঈশ্বর তাকে সিরিয়ার বাদশাহ বিনহদদ ও তাঁর বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করেন। ‘‘আল্লাহর একজন বান্দা এসে ইসরাইলের বাদশাহকে বললেন, ‘‘আল্লাহ এই কথা বলেছেন, ‘সিরীয়রা মনে করছে আল্লাহ পাহাড়ের মাবুদ, উপত্যকার মাবুদ নন; সেজন্য আমি বিরাট সৈন্য দলকে তোমার হাতে তুলে দেব, আর এতে তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই আল্লাহ।’ যুদ্ধ শুরু হলে বনি-ইসরাইলরা একদিনেই এক লক্ষ সিরীয় পদাতিক সৈন্য হত্যা করল। বাদবাকী সৈন্যরা অফেকে পালিয়ে গেল আর সেখানে তাদের সাতাশ হাজার সৈন্যের উপর দেয়াল ধ্বসে পড়ল। বিনহদদ সেখানে পালিয়ে গিয়ে বাড়ীর ভিতরের একটা কামরায় লুকিয়ে রইলেন। বিনহদদের কর্মচারীরা তাকে বলল, ‘দেখুন, আমরা শুনেছি যে, ইসরাইলের বাদশাহরা দয়ালু। চলুন, কোমরে চট পরে আর মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইসরাইলের বাদশাহর কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করবেন।’ তাঁরা কোমরে চট পরে ও মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইসরাইলের বাদশাহর কাছে গিয়ে বললেন, ‘আপনার গোলাম বিন্হদদ বলছেন যে, ‘আপনি যেন দয়া করে তাকে বাঁচিয়ে রাখেন।’ জবাবে বাদশাহ বললেন, ‘তিনি কি এখনও জীবিত আছেন? তিনি আমার ভাই।’ সেই লোকেরা এটাকে ভাল লক্ষণ মনে করে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কথা ধরে বলল, ‘জ্বী, বিন্হদদ নিশ্চয় আপনার ভাই।’ বাদশাহ বললেন, ‘আপনারা গিয়ে তাকে নিয়ে আসুন।’ বিনহদদ বের হয়ে আসলে পর আহাব তাকে তাঁর রথে তুলে নিলেন। বিন্হদদ বললেন, ‘আপনার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা যে সব গ্রাম নিয়ে নিয়েছেন আমি সেগুলো আপনাকে ফিরিয়ে দেব। আমার পিতা যেমন সামেরিয়াতে বাজার বসিয়েছিলেন তেমনি আপনিও দামেস্কের বিভিন্ন জায়গায় বাজার বসাতে পারবেন।’ আহাব বললেন, ‘একটা সন্ধি করে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব।’ এই বলে তিনি বিন্হদদের সংগে একটা সন্ধি করে তাঁকে ছেড়ে দিলেন।’’ (১ বাদশাহনামা ২০/২৮-৩৪)
দ্বিতীয়ত: আহাবের অপরাধ ও শাস্তির ঘোষণা
তালুত শত্রু বাদশাহকে হত্যা না করে বাঁচিয়ে বন্দি করে রেখেছিলেন। পরে তাকে হত্যা করেন। কিন্তু প্রথমেই হত্যা না করার কারণে ঈশ্বর তাঁকে শাস্তি দিলেন। আর আহাব শত্রু বাদশাহকে হত্যা না করে সন্ধি করে ছেড়ে দিলেন। স্বভাবতই আহাবের অপরাধ আরো বড়। আর এর শাস্তিও ভয়ঙ্কর:
‘‘তারপর সেই নবী রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাদশাহর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি তার মাথার উপর কাপড় বেধে তা চোখের উপর নামিয়ে এনে নিজের পরিচয় গোপন করলেন। বাদশাহ ঐ পথে যাওয়ার সময় সেই নবী তাঁকে ডেকে বললেন, ‘‘আপনার গোলাম আমি যুদ্ধের মাঝখানে গিয়েছিলাম। তখন একজন লোক একজন বন্দীকে আমার কাছে এনে বলল, ‘এই লোকটাকে পাহারা দিয়ে রাখ। যদি সে হারিয়ে যায় তবে তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ নেওয়া হবে, আর তা না হলে ঊনচল্লিশ কেজি রুপা জরিমানা দিতে হবে।’ কিন্তু আপনার গোলাম যখন কাজে ব্যস্ত ছিল তখন সে কোথায় চলে গেছে।’ তখন ইসরাইলের বাদশাহ বললেন, ‘ঐ শাস্তিই তোমার হবে। তুমি নিজের মুখেই তা বলেছ।’ তখন সেই নবী তাড়াতাড়ি চোখের উপর থেকে মাথার কাপড়টা সরিয়ে ফেললেন আর ইসরাইলের বাদশাহ তাকে নবীদের একজন বলে চিনতে পারলেন। সেই নবী বাদশাহকে বললেন, ‘মাবুদ এই কথা বলেছেন, ‘আমি যাকে ধ্বংসের বদদোয়ার অধীন করেছিলাম তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কাজেই তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ আর তার লোকদের বদলে তোমার লোকদের প্রাণ যাবে।’ এতে ইসরাইলের বাদশাহ মুখ কালো করে ও বিরক্ত হয়ে সামেরিয়ায় তাঁর রাজবাড়ীতে চলে গেল।’’ (১ বাদশাহনামা ২০/৩৮-৪৩)
তৃতীয়ত: আহাবের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাবাদী আত্মা
১ বাদশাহনামা ২২ অধ্যায় বলছে, আহাবের বিরুদ্ধে ঈশ্বর ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। শুরু হল দুষ্ট আত্মা বা মিথ্যাবাদী আত্মার খেলা। তিনি তাঁর ফেরেশতাদেরকে ডেকে বললেন, ষড়যন্ত্র করে আহাবকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যেতে পারবে কে? একজন এগিয়ে এলেন এবং তার ষড়যন্ত্র ঈশ্বরের কাছে ব্যাখ্যা করলেন। ঈশ্বর ষড়যন্ত্রটা অনুমোদন করলে মিথ্যাবাদী আত্মা তা কার্যকর করলেন।
আহাবের নেতৃত্বে বনি-ইসরাইল শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইচ্ছা পোষণ করেন। এ বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশ জানার জন্য তিনি নবীদের নিকট পরামর্শ চান। চার শত নবী এক যোগে বলেন যে, যুদ্ধে যাওয়াই ঈশ্বরের অভিপ্রায়। যুদ্ধে গেলে বিজয় সুনিশ্চিত। ‘‘কাজেই ইসরাইলের বাদশাহ নবীদের ডেকে একত্র করলেন। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় চার’শো। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে কি আমি যুদ্ধ করতে যাব, না যাব না?’ তারা বলল, ‘যান, কারণ দ্বীন-দুনিয়ার মালিক ওটা বাদশাহর হাতে তুলে দেবেন।’’ (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২২/৫-৬) পরে ‘মিকায়’ নামক অন্য নবী রাজাকে জানান যে, ঈশ্বর আহাবকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মিথ্যাবাদী আত্মা পাঠিয়েছেন।’’ (১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২২/১৯-২৩। পুনশ্চ: ২ বংশাবলি/ খান্দাননামা ১৮/৪-৫ ও ২১-২২)
চতুর্থত: মিথ্যাবাদী আত্মার সফলতা ও আহাবের মৃত্যু
‘‘এর পরে ইসরাইলের বাদশাহ্ ও এহুদার বাদশাহ্ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দ হামলা করতে গেলেন। আহাব যিহোশাফটকে বললেন, ‘আমাকে যাতে লোকেরা চিনতে না পারে সেজন্য আমি অন্য পোশাক পরে যুদ্ধে যোগ দেব, কিন্তু আপনি আপনার রাজপোশাকই পরে নিন।’ এই বলে ইসরাইলের বাদশাহ্ অন্য পোশাক পরে যুদ্ধ করতে গেলেন। সিরিয়ার বাদশাহ্ তাঁর রথগুলোর বত্রিশজন সেনাপতিকে এই হুকুম দিয়ে রেখেছিলেন, ‘একমাত্র ইসরাইলের বাদশাহ্ ছাড়া আপনারা ছোট কি বড় আর কারও সংগে যুদ্ধ করবেন না।’ রথের সেনাপতিরা যিহোশাফটকে দেখে ভেবেছিলেন যে, তিনি নিশ্চয়ই ইসরাইলের বাদশাহ। কাজেই তাঁরা ফিরে তাকে আক্রমণ করতে গেলেন কিন্তু যিহোশাফট চেঁচিয়ে উঠলেন। এতে সেনাপতিরা বুঝলেন যে, তিনি ইসরাইলের বাদশাহ্ নন সেজন্য তাঁরা আর তার পিছনে তাড়া করলেন না। কিন্তু একজন লোক লক্ষ্য স্থির না করেই তাঁর ধনুকে টান দিয়ে ইসরাইলের বাদশাহ্র বুক ও পেটের বর্মের মাঝামাঝি ফাঁকে আঘাত করে বসল। তখন বাদশাহ্ তাঁর রথ চালককে বললেন, ‘রথ ঘুরিয়ে তুমি যুদ্ধের জায়গা থেকে আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমি আঘাত পেয়েছি।’ সারা দিন ধরে ভীষণ যুদ্ধ চলল আর বাদশাহ্কে সিরীয়দের মুখোমুখি করে রথের মধ্যে বসিয়ে রাখা হল।
তাঁর ক্ষত থেকে রক্ত ঝরে রথের মেঝের উপর পড়তে লাগল আর বিকালের দিকে তিনি মারা গেলেন। সূর্য ডুবে যাবার সময় সৈন্যদলের মধ্যে এই কথা ঘোষণা করা হল, ‘তোমরা প্রত্যেকেই যে যার গ্রামে ও বাড়ীতে ফিরে যাও।’ এভাবে ইসরাইলের বাদশাহ্ (আহাব) মারা গেলেন এবং তাঁকে সামেরিয়াতে আনা হল। লোকেরা তাঁকে সেখানেই দাফন করল। সামেরিয়ার পুকুরে তাঁর রথটা ধোয়া হল এবং মাবুদের ঘোষণা অনুসারে কুকুরেরা সেখানে তাঁর রক্ত চেটে খেল আর বেশ্যারা সেই পুকুরে গোসল করল।’’ (১ বাদশাহনামা ২২/২৯-৩৮)
পঞ্চমত: হত্যার পাপ ক্ষমা হয় তবে বাঁচিয়ে রাখার পাপ ক্ষমার অযোগ্য
বাদশাহ আহাব আরো অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মূর্তিপূজা এবং একজন নিরপরাধকে হত্যা করে তার সম্পত্তি দখল করা। ঈশ্বর এজন্য তাঁর শাস্তির ঘোষণা দেন। কিন্তু আহাব অনুতপ্ত হওয়াতে ঈশ্বর সে শাস্তি মওকুফ করেন। কিন্তু যুদ্ধবন্দি রাজাকে হত্যা না করে সন্ধির মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অপরাধে যে শাস্তি তা মওকুফ হয়নি। বাইবেলের বর্ণনা দেখুন:
‘‘এর পরে যিষ্রিয়েলীয় নাবোতার আংগুর খেত নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে গেল। এই আংগুর ক্ষেতটা ছিল যিষ্রিয়েলে সামেরিয়ার বাদশাহ আহাবের রাজবাড়ীর কাছেই। আহাব নাবোৎকে বললেন, ‘সবজীর বাগান করবার জন্য তোমার আংগুর ক্ষেতটা আমাকে দিয়ে দাও, কারণ ওটা আমার রাজবাড়ীর কাছেই। এর বদলে আমি তোমাকে আরও ভাল একটা আংগুর ক্ষেত দেব কিংবা যদি চাও তার উচিত মূল্যও তোমাকে দেব।’ কিন্তু নাবোৎ বলল, ‘আমার বাপ-দাদার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি যে আমি আপনাকে দিয়ে দিই মাবুদ যেন তা হতে না দেন।’ ‘আমার বাপ দাদার সম্পত্তি আপনাকে দেব না’, যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের এই কথার জন্য আহাব মুখ কালো করে ও বিরক্ত হয়ে বাড়ী চলে গেলেন। তিনি বিছানায় শুয়ে মুখ ফিরিয়ে রইলেন, খেতে চাইলেন না। এ দেখে তাঁর স্ত্রী ঈষেবল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন তুমি মন খারাপ করে আছ? কেন খেতে চাইছ না?’ জবাবে বাদশাহ তাকে বললেন, ‘আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎকে বলেছিলাম তার আংগুর ক্ষেতটা আমার কাছে বিক্রি দিতে কিংবা সে চাইলে তার বদলে তাকে আমি আরেকটা আংগুর ক্ষেতও দিতে চেয়েছিলাম, কিন্ত সে বলল যে, সে তার আংগুর ক্ষেতটা আমাকে দেবে না।’
তখন তাঁর স্ত্রী ঈষেবল তাকে বললেন, ‘তুমি না ইসরাইলের বাদশাহ? ওঠো, খাওয়া দাওয়া কর, আনন্দিত হও। যিষ্রিয়েলের নাবোতের আংগুর ক্ষেত আমি তোমাকে দেব।’ ঈষেবল তখন আহাবের নাম করে কতগুলো চিঠি লিখে সেগুলোর উপর আহাবের সীলমোহর দিলেন এবং নাবোতের শহরে বাসকারী বৃদ্ধ নেতা ও গণ্যমান্য লোকদের কাছে চিঠিগুলো পাঠিয়ে দিলেন। সেই চিঠিগুলোতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আপনারা রোজা রাখবার কথা ঘোষণা করুন এবং লোকদের মধ্যে নাবোৎকে একটা বিশেষ স্থান দিন। তার সামনে দুটা আসনে দু’জন খারাপ লোককে বসান। তারা এই বলে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিক যে, সে আল্লাহ ও বাদশাহ্র বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলেছে। তারপর তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করুন। কাজেই নাবোতের শহরে বাসকারী বৃদ্ধ নেতারা ও গণ্যমান্য লোকেরা ঈষেবলের চিঠিতে লেখা নির্দেশ মত কাজ করল। তাঁরা রোজা রাখবার কথা ঘোষণা করে নাবোৎকে লোকদের মধ্যে একটা বিশেষ স্থান দিলেন। তারপর দু’জন খারাপ লোক এসে নাবোতের সামনে বসে লোকদের কাছে তার বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিল যে, সে আল্লাহ ও বাদশাহ্র বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলেছে। তারপর লোকেরা তাকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করল।
এরপর সেই নেতারা ঈষেবলের কাছে খবর পাঠালেন যে, নাবোৎকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে। নাবোৎকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে শুনেই ঈষেবল আহাবকে বললেন, ‘যাও বিষ্রিয়েলীয় নাবোৎ যে আংগুর ক্ষেতটা তোমার কাছে বিক্রি করতে চায়নি তার দখল নাও। সে আর বেঁচে নেই, মরে গেছে।’ নাবোৎ মারা গেছে শুনে আহাব নাবোতের আংগুর ক্ষেতের দখল নিতে গেলেন।
তখন তিশবীয় ইলিয়াসের উপর মাবুদের এই কালাম নাযিল হল, ‘সামেরিয়াতে ইসরাইলের বাদশাহ আহাবের সংগে দেখা করতে যাও। সে এখন নাবোতের আংগুর ক্ষেতে আছে। সে ওটার দখল নেবার জন্য সেখানে গেছে। তুমি তাকে বল যে, মাবুদ বলেছেন, ‘তুমি কি একজন লোককে হত্যা করে তার সম্পত্তি দখল করনি? তারপর তাকে বল যে, মাবুদ বলেছেন, ‘কুকুরেরা যেখানে নাবোতের রক্ত চেটে খেয়েছে সেখানে তারা তোমার রক্ত, জ্বী, তোমারই রক্ত চেটে খাবে।’ ... সে জন্য মাবুদ বলেছেন, ‘আমি তোমার উপর বিপদ নিয়ে আসব । তোমাকে আমি একেবারে ধ্বংস করব। গোলাম ও স্বাধীন হোক তোমার বংশের প্রতিটি পুরুষ লোককে আমি শেষ করে দেব। ... এছাড়া ঈষেবলের সম্বন্ধেও আমি বলছি যে, যিষ্রিয়েলের দেয়ালের কাছে কুকুরেরা তাকে খেয়ে ফেলবে। তোমার যে সব লোক শহরে মরবে তাদের খাবে কুকুরে আর যারা মাঠের মধ্যে মরবে তাদের খাবে পাখীতে।’ ....
স্ত্রীর উস্কানিতে মাবুদের চোখে যা খারাপ আহাব তাই করবার জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মত আর কেউ এই রকম কাজ করে নি। বনি-ইসরাইলদের সামনে থেকে মাবুদ যে আমোরীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত মূর্তিপূজা করে তিনি জঘন্য কাজ করতেন। আহাব মাবুদের কথা শুনে নিজের কাপড় ছিঁড়ে চট পরলেন এবং রোজা রাখলেন। তিনি চট পরেই শুয়ে থাকতেন এবং নম্রভাবে চলাফেরা করতে লাগলেন। তখন মাবুদ তিশবীয় ইলিয়াসকে বললেন, ‘তুমি কি লক্ষ্য করেছ আহাব আমার সামনে নিজেকে কেমন নত করেছে? সে নিজেকে নত করেছে বলে এই বিপদ আমি তাঁর জীবনকালে আনব না, কিন্তু তাঁর ছেলের জীবনকালে তার বংশের উপরে আনব।’’ (১ বাদশাহনামা ২১/১-২৯)
এখানেও আমরা দেখছি যে, বাইবেলীয় ধার্মিকতায় সকল অপরাধের চেয়ে বড় অপরাধ হত্যা না করা। আহাব মূর্তিপূজা করতেন। এরপর তার স্ত্রী তারই সমর্থনে একজন মানুষকে এভাবে ভয়ঙ্কর প্রতারণার মাধ্যমে খুন করলেন। এর জন্য আহাব এবং তার স্ত্রীর পাশাপাশি তার বংশধরের শাস্তির ঘোষণা দিলেন ঈশ্বর। নম্র হওয়ার কারণে ঈশ্বর আহাবের শাস্তি মূলতই মওকুফ করলেন। যা কিছু শাস্তি হল সবই তার মৃত্যুর পরে: তাঁর মৃতদেহকে শাস্তি দেওয়া হল! পরবর্তীতে ‘ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা’ প্রসঙ্গে আমরা দেখব যে, আহাবের অপরাধের শাস্তি হিসেবে আহাবের মৃত্যুর পরে তাঁর বংশধর, বন্ধুবান্ধব, ইমাম ও শুভাকাঙ্খীদের সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একজনের অপরাধে অন্যকে এভাবে হত্যা করার যৌক্তিকতা ও নৈতিকতা আমরা বুঝতে পারি না। তবে কারো জীবদ্দশায় যদি তার সামনে তার আপনজনদের হত্যা করা হয় তবে সে কিছু কষ্ট পায়। আহাবের ক্ষেত্রে সে কষ্টটুকুও ঈশ্বর মাফ করে দিলেন! যুদ্ধবন্দি রাজাকে ছেড়ে দেওয়ার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড তিনি পেলেন। ঈশ্বরই সে মৃত্যুর ব্যবস্থা করলেন। অন্যান্য অপরাধের সকল শাস্তিই ক্ষমা হল।