উপরে আমরা দেখলাম যে, তালুতের অন্যায়টা ছিল একেবারেই অনিচ্ছাকৃত। তিনি অন্তর থেকেই বিশ্বাস করছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের আদেশ পূর্ণরূপে পালন করেছেন। রাজাকে বাঁচিয়ে রাখা বা পোড়ানো-কোরবানির জন্য কিছু পশু বাঁচিয়ে রাখা ঈশ্বরের আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক বলে তিনি মোটেও কল্পনা করেননি। এজন্যই শুরু থেকে তিনি দাবি করছেন যে, তিনি ঈশ্বরের আদেশ পূর্ণ পালন করেছেন। তিনি তার ওযর আরো ব্যাখ্যা করলেন। ‘‘তালুত বললেন, ‘কিন্তু আমি তো মাবুদের হুকুম পালন করেছি। আমি আমালেকীয়দের একেবারে শেষ করে দিয়েছি এবং তাদের বাদশাহ অগাগকে ধরে নিয়ে এসেছি। তবে ধ্বংসের জন্য ঠিক করে রাখা জিনিস থেকে সৈন্যরা কতগুলো ভাল ভাল ভেড়া ও গরু এনেছে, যাতে গিলগলে আপনার মাবুদ আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেগুলো তারা কোরবানী করতে পারে।’
তখন শামুয়েল বললেন, ‘মাবুদের হুকুম পালন করলে তিনি যত খুশী হন, পোড়ানো ও পশু কোরবানী কি তিনি তত খুশী হন? পশু কোরবানীর চেয়ে তাঁর হুকুম পালন করা আর ভেড়ার চর্বির চেয়ে তাঁর কথার বাধ্য হওয়া অনেক ভাল। বিদ্রোহ করা আর গোণাপড়ার কাজ করা একই গুনাহ; অবাধ্যতা আর প্রতিমাপূজা একই অন্যায়। তুমি মাবুদের হুকুম অগ্রাহ্য করেছ তাই তিনিও তোমাকে বাদশাহ হিসাবে অগ্রাহ্য করেছেন।’’ (১ শামুয়েল ১৫/২০-২৩)
আমরা দেখছি যে, তালুতের ভুলটা ছিল একান্তই অনিচ্ছাকৃত ও ভুল বুঝার কারণে। এজন্য তিনি বারবারই তার ভুলের জন্য ওযরখাহি করছেন। আমরা বাইবেলে দেখি যে, প্রতিমাপূজা, ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত ভুল তো বটেই এমনকি ইচ্ছাকৃত পাপও ঈশ্বর নিজগুণে ক্ষমা করেন। বাইবেল বারবার উল্লেখ করেছে যে, কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে খুন করলে সে শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে (গণনাপুস্তক/ শুমারী ৩৫/১১-১৫, ২২-২৪; যিহোশূয়/ ইউসা ২০/৩, ৯)। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলক্রমে কাউকে বাঁচিয়ে রাখলে তার শাস্তি ভয়ঙ্কর!
শামুয়েল বলছেন যে, প্রতিমাপূজা ও অবাধ্যতা একই রকমের অপরাধ। কিন্তু বাইবেল তা প্রমাণ করে না। বাইবেল প্রমাণ করে যে, প্রতিমাপূজা, ব্যভিচার, ধর্ষণ, নিজের কন্যার সাথে ব্যভিচার, নিজের বোনকে ধর্ষণ, পিতার স্ত্রীদেরকে ধর্ষণ, অকারণ মানুষ খুন এবং অন্যান্য অবাধ্যতা ক্ষমার যোগ্য অপরাধ। পক্ষান্তরে হত্যার আদেশ পালনে সামান্যতম অনিচ্ছাকৃত ‘অবাধ্যতা’ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আর এজন্যই কোনো ওজরখাহিই ঈশ্বর গ্রহণ করলেন না।