৯. ৪. ২০. ২. ঐশ্বরিক নির্দেশ পালনে তালুতের বাধ্যতা ও অবাধ্যতা

‘‘তালুত তখন লোকদের টলামীয় শহরে ডেকে জমায়েত করলেন। তাতে ইসরাইলের পদাতিক সৈন্যের সংখ্যা হল দুই লক্ষ এবং এহুদা গোষ্ঠীর সৈন্যের সংখ্যা হল দশ হাজার। তালুত আমালেকীয়দের শহরের কাছে গিয়ে সেখানকার শুকিয়ে যাওয়া নদীর খাদের মধ্যে ওৎ পেতে রইলেন। তিনি কেনীয়দের বললেন, ‘বনি-ইসরাইলরা যখন মিসর থেকে বের হয়ে এসেছিল তখন তোমরা তাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলে। তোমরা আমালেকীয়দের মধ্য থেকে অন্য কোথাও চলে যাও, যাতে আমালেকীয়দের সংগে আমি তোমাদেরও ধ্বংস করে না ফেলি।’ তখন কেনীয়রা আমালেকীয়দের মধ্য থেকে চলে গেল। তালুত তখন হবীলা এলাকা থেকে মিসরের পূর্ব দিকে শূর মরুভূমি পর্যন্ত সমস্ত আমালেকীয়দের হারিয়ে দিলেন। তিনি আমালেকীয়দের বাদশাহ অগাগকে জীবিত অবস্থায় ধরলেন এবং অন্য সব লোকদের হত্যা করলেন। কিন্তু তালুত ও তাঁর সৈন্যরা অগাগকে বাঁচিয়ে রাখলেন এবং আমালেকীয়দের ভাল ভাল গরু, ভেড়া, মোটাসোটা বাছুর এবং ভেড়ার বাচ্চা, এক কথায় তাদের যা কিছু ভাল ছিল সেগুলো তারা বাঁচিয়ে রাখলেন। সেগুলোকে ধ্বংস করে দিতে তাঁরা রাজী হলেন না, কিন্তু অকেজো ও রোগাগুলোকে তাঁরা একেবারে শেষ করে দিলেন।’’ (১ শামুয়েল ১৫/৪-৯)

আমরা দেখেছি, ঈশ্বরের  নির্দেশ ছিল ‘‘তাদের যা কিছু আছে সব ধ্বংস করে ফেলবে; তাদের প্রতি কোন দয়া করবে না।’’ তালুত যাতে ভুল করে কাউকে বাঁচিয়ে না রাখে তা নিশ্চিত করতে ঈশ্বর এ নির্দেশ আবার ব্যাখ্যা করেছেন:  (১) মহিলাদের হত্যা করবে, (২) পুরুষদের হত্যা করবে, (৩) শিশু-কিশোর ছেলে-মেয়েদের হত্যা করবে, (৪) দুগ্ধপোষ্য শিশুদের হত্যা করবে, (৫) গরু, ভেড়া, গাধা সব হত্যা করবে।

তালুত মানুষ হত্যার বিষয়ে সকল নির্দেশ প্রায় শতভাগ মান্য করেছেন। তিনি (১) সকল নারী হত্যা করেছেন, (২) সকল শিশু-কিশোর ছেলে মেয়ে হত্যা করেছেন, (৩) সকল দুগ্ধপোষ্য শিশু হত্যা করেছেন, (৪) একজন বাদে সকল পুরুষকে হত্যা করেছেন। আমরা অনুমানে বলতে পারি যে, তালুত কয়েক লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র একজন পুরুষকে বাঁচিয়ে রেখে বাকি সকল পুরুষ, নারী, শিশু ও দুধখাওয়া শিশু হত্যা করেন। পশু হত্যার বিষয়ে তালুত আনুমানিক প্রায় শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ পশু নির্বিচারে হত্যা করেন এবং অল্প কিছু পশু বাঁচিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে আমরা দেখব যে, এগুলোকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পোড়ানো কোরবানী বা হোমবলি প্রদানের জন্য তিনি এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখেন। অর্থাৎ এগুলোকেও হত্যা করা হবে। তবে হত্যা করে মাঠে ফেলে না দিয়ে ঈশ্বরের বেদির উপর হত্যা করে আগুনে পুড়ানো হবে; যেন পুড়ানো চর্বি ও মাংসের খোশবুতে ঈশ্বর প্রীত হন।

এভাবে আমরা দেখছি যে, তিনি ঈশ্বরের নির্দেশ প্রায় শতভাগ পালন করলেও মোশি, ইউসা, শামুয়েল, দাউদ ও অন্যদের মত নির্বিচারে এবং অন্ধভাবে না করে একটু মানবতা ও বুদ্ধিবিচার দেখাতে গিয়েছিলেন। ঈশ্বরের অন্যান্য আজ্ঞা পালনের ক্ষেত্রে সকল ভুলভ্রান্তি ঈশ্বর সহ্য করলেও নির্বিচার গণহত্যার নির্দেশের মধ্যে বিচারবুদ্ধি ঢুকিয়ে সামান্যতম ব্যতিক্রমও ঈশ্বর সহ্য করলেন না। ঈশ্বর অনুশোচনায় ভেঙে পড়লেন, ক্রোধে জ্বলে উঠলেন এবং শাস্তিতে কঠোর হলেন।