বাইবেলের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, বাইবেলীয় জিহাদ বা যুদ্ধের জন্য যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কোনো কারণেরই প্রয়োজন নেই। এরপরও মাঝে মাঝে বাইবেলে বিভিন্ন দেশ দখল ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে গণহত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার জন্য কিছু কারণ বা অজুহাত উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর অন্যতম বিষয় পূর্বপূরুষদের অপরাধ! শত শত বা হাজার হাজার বছর পূর্বে কোনো গোষ্ঠী বা দেশের কিছু মানুষ ঈশ্বরের প্রিয় প্রজা বনি-ইসরাইলের সাথে অসদাচরণ করেছিল এ অজুহাতে সে দেশ বা জাতির সকল মানুষকে কল্পনাতীত নির্মমতার সাথে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে পবিত্র বাইবেল। আর এ সকল নির্দেশ ‘আল্লাহ রাববুল আলামীনের’ নামেই বলা হয়েছে।
এরূপ একটা নির্দেশ দেখুন: ‘‘আল্লাহ রাববুল আলামীন বলছেন, ‘বনি-ইসরাইলরা মিসর থেকে চলে আসবার পথে আমালেকীয়রা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বলে আমি তাদের শাস্তি দেব। এখন তুমি গিয়ে আমালেকীয়দের আক্রমণ করবে এবং তাদের যা কিছু আসে সব ধ্বংস করে ফেলবে; তাদের প্রতি কোনো দয়া করবে না। তাদের স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, দুধ-খাওয়া শিশু, গরু- ভেড়া, উট, গাধা সব মেরে ফেলবে।’’ (১ শামুয়েল ১৫/২-৩)
আমরা বলেছি, বাইবেল বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে বাইবেলের প্রতিটা নির্দেশই চিরন্তন। কাজেই অতীতের ন্যায় এখনো বাইবেল অনুসারীদের জন্য এভাবে পূর্বপুরুষদের অপরাধের অযুহাতে বর্তমানের যে কোনো দেশ দখল ও এরূপ গণহত্যা পরিচালনার ধর্মীয় অনুমোদন বিদ্যমান। বরং তা ঈশ্বর নির্দেশিত পুণ্যকর্ম বলে গণ্য।
উপরের বিভিন্ন নির্দেশের মত এখানেও নারী, ছেলে-মেয়ে, দুগ্ধপোষ্য শিশু ও অবলা প্রাণিদের হত্যার বিষয়ে বাইবেলের আগ্রহ লক্ষণীয়! কোনো দয়া করবে না, সব কিছু ধ্বংস করবে, কিছুই বাদ দেবে না ইত্যাদি সুস্পষ্ট নির্দেশনা-ই সর্বাত্মক গণহত্যার জন্য যথেষ্ট ছিল। তারপরও বাইবেল আবারো বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রাণিদের হত্যার বিষয়টা বিশেষ করে নিশ্চিত করেছে। যেন কেউ ভুল করে মানবতা বা মমতা বশত কোনো নারী, শিশু বা প্রাণিকে বাঁচিয়ে রেখে ঈশ্বরের অভিশাপে নিপতিত না হয়!
আমরা দেখব যে, সর্বাত্মক ধ্বংস ও হত্যার নির্দেশ পালনে সামান্য ব্যতিক্রম করায় তালুত বা শৌল ঈশ্বরের নিকট চিরস্থায়ীভাবে অভিশপ্ত হয়ে যান। কোনো তাওবা ও কাফফরা দিয়েও তিনি আর তার এ মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারেন নি।
পূর্বপুরুষদের অপরাধে পরবর্তী বংশধরদের ঢালাও হত্যার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র বাইবেল অন্যত্র বলেছে: ‘‘Prepare slaughter for his children for the iniquity of their fathers: পিতাদের পাপের কারণে সন্তানদের জন্য হত্যাযজ্ঞের আয়োজন কর।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-০৬: ‘‘তাদের পূর্বপুরুষদের গুনাহের দরুন তাদের ছেলেদের হত্যা করবার জন্য একটা জায়গা ঠিক কর।’’ জুবিলী বাইবেল: ‘‘তোমরা এখন ওর সন্তানদের হত্যাকাণ্ড প্রস্তুত কর; ওদের পিতার অপরাধের কারণেই তা প্রস্তুত কর।’’ (যিশাইয়/ ইশাইয়া/ ইসাইয়া ১৪/২১)