যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাইবেলের মূলনীতি যুদ্ধবন্দি ও পরাজিত নিরস্ত্র সকল মানুষকে হত্যা করতে হবে। কখনো কখনো নারীদেরকে বা কুমারী নারীদেরকে বাঁচিয়ে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য স্থানে নির্বিচারে সকল মানুষ ও সকল প্রাণিকে হত্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরূপ কয়েকটা নির্দেশ দেখুন:
ঈশ্বর বলছেন: ‘‘তিনি যখন তাদের তোমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেবেন এবং তোমরা তাদের হারিয়ে দেবে তখন তোমরা তাদের একেবারে ধ্বংস করে ফেলবে। তোমরা তাদের সংগে কোন সন্ধি করবে না এবং তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখাবে না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭/২)
ঈশ্বর অন্যত্র বলছেন: ‘‘পরে তোমার আল্লাহ মাবুদ তা তোমার হস্তগত করলে তুমি তার সমস্ত পুরুষকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করবে, কিন্তু স্ত্রীলোক, বালক-বালিকা ও সমস্ত পশু প্রভৃতি নগরের সর্বস্ব, সমস্ত লুন্ঠিত দ্রব্য তোমার জন্য লুট হিসেবে গ্রহণ করবে, আর তোমার আল্লাহ মাবুদের দেওয়া দুশমনদের থেকে লুট করে আনা জিনিস ভোগ করবে। এই নিকটবর্তী জাতিদের নগর ছাড়া যেসব নগর তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে আছে, তাদেরই প্রতি এরকম করবে। কিন্তু এই সমস্ত জাতির যেসব নগর তোমার আল্লাহ মাবুদ অধিকার হিসেবে তোমাকে দেবেন, সেগুলোর মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাউকেও জীবিত রাখবে না। (thou shalt save alive nothing that breatheth)।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ২০/১৩-১৬, কি. মো.-১৩)
পাঠক নিশ্চয়ই এ নির্দেশের নির্মমতা দেখে কষ্ট পাচ্ছেন। শ্বাসবিশিষ্ট কাউকে জীবিত রাখা যাবে না! শিশু, কিশোর, নারী, কুমারী, অকুমারী সবাইকে হত্যা করতে হবে! এমনকি অবলা পশু, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি শ্বাস নেওয়ার মত প্রাণিদেরও হত্যা করতে হবে! বাহ্যত বাইবেল প্রচারকরাও এ সকল নির্দেশের বর্বরতা অনুধাবন করেন। এজন্য অনুবাদে অনেক সময় কিছু কথা গোপন করা হয়। উপরে কেরির অনুসরণে কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩-এর অনুবাদ উল্লেখ করেছি। পবিত্র বাইবেল-২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-০৬ নিম্নরূপ: ‘‘সেখানকার কাউকেই তোমরা বাঁচিয়ে রাখবে না... সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলবে।’’ এখানে এ নির্দেশের নির্মমতা গোপন করা সম্ভব না হলেও ‘শ্বাসবিশিষ্ট’ (that breatheth) কথাটা অনুবাদ থেকে বাদ দিয়ে নির্দেশটার বর্বরতা কিছুটা হালকা করা হয়েছে।
বাইবেলে এরূপ গণহত্যা ও ধ্বংসের নির্দেশ অনেক রয়েছে। কয়েকটা দেখুন:
‘‘তুমি মরাথয়িম দেশের বিরুদ্ধে ও পকোদ নিবাসীদের বিরুদ্ধে যাও, তাদের পিছনে পিছনে গিয়ে তাদের জবেহ কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর (waste and utterly destroy after them)। ’’ (যিরমিয়/ ইয়ারমিয়া ৫০/২১, কি. মো.-১৩)
‘‘তোমরা প্রান্তসীমা থেকে তার বিরুদ্ধে এস, তার শস্যভা-ারগুলো খুলে দাও, রাশির মত তাকে ঢিবি কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর; তার কিছু অবশিষ্ট রেখো না। তার সমস্ত ষাঁড় হত্যা কর ...।’’ (যিরমিয়/ ইয়ারমিয়া ৫০/২৬-২৭, কি. মো.-১৩)
‘‘তোমরা শহরের মধ্যে ওর পিছনে পিছনে যাও এবং কোন মায়া-মমতা না দেখিয়ে লোকদের মেরে ফেলতে থাক, কাউকে রেহাই দিয়ো না। বুড়ো, যুবক, যুবতী মেয়ে, স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়েদের মেরে ফেল, কিন্তু যাদের কপালে চিহ্ন আছে তাদের ছুঁয়ো না।’’ (ইহিস্কেল/ যিহিস্কেল ৯/৫-৬)
বাইবেলে অন্যত্র সোনা, রূপা ইত্যাদি মূল্যবান দ্রব্য সংগ্রহ করে সকল নারী, পুরুষ, শিশু ও প্রাণির গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের নির্দেশনায় বলা হয়েছে: ‘‘সমস্ত সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র মাবুদের উদ্দেশ্যে পবিত্র; সেগুলো তাঁর ধনভা-ারে যাবে। ... ... তারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, গরু, ভেড়া, গাধা ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীদের শেষ করে দিল’’ (ইউসা ৬/১৯-২১)।
একইরূপ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের নির্দেশ দেখুন: ইউসা/ যিহোশূয় ৮/১-২।