বাইবেল গবেষক ও সমালোচকরা বাইবেল বিষয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ করেন বাইবেলের নৃশংসতা (Bible Atrocities) প্রসঙ্গে। তারা বলেন যে, বাইবেল সৃষ্টিকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংস ও হত্যাপ্রিয় হিসেবে এবং বাইবেলীয় ধর্মকে হত্যা ও নিষ্ঠুরতা নির্ভর বলে চিত্রিত করেছে। আমরা এ অধ্যায়ে এ বিষয়টা আলোচনা করব। উল্লেখ্য যে, এ অধ্যায়ের বাইবেলীয় উদ্ধৃতিগুলো মূলত কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ থেকে গৃহীত।
৯. ১. ঈশ্বরের চিরন্তন ও অলঙ্ঘনীয় বিধান
বাইবেলীয় হত্যা ও যুদ্ধ বিষয়ক আলোচনার পূর্বে পাঠককে মনে রাখতে হবে যে, আমরা এখানে ইতিহাস আলোচনা করছি না, বরং ধর্ম আলোচনা করছি। ইতিহাসের কিছু হত্যা ও যুদ্ধের বর্ণনা এবং হত্যা ও যুদ্ধের বিষয়ে কোনো ধর্মের চিরন্তন নির্দেশ ও আদর্শ এক নয়। ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাস অনুসারে বাইবেলের বিধান রহিত বা পরিবর্তিত হয় না। পরবর্তী পরিচ্ছেদগুলোতে আমরা হত্যা ও যুদ্ধ বিষয়ে বাইবেলের যে সকল আদেশ, নির্দেশনা, কর্ম ও বর্ণনা উল্লেখ করব সব কিছুই ঈশ্বরের চিরন্তন অলঙ্ঘনীয় আদেশ ও আদর্শ। এ সকল আদেশ ও আদর্শ পুরাতন নিয়মের নবীদের যুগে যেমন ঈশ্বরের অলঙ্ঘনীয় বিধান ছিল; কিয়ামত পর্যন্ত সকল বাইবেল বিশ্বাসীর জন্য তা তেমনিভাবে ঈশ্বরের অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ ও চিরন্তন বিধান। যদি কেউ দাবি করেন যে, এগুলো একটা প্রাচীন জাতির ইতিহাস অথবা প্রাচীন যুগের বর্বরতা তবে তিনি বাইবেল ও খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা তিনি বিষয়টা জেনেও এভাবে অজ্ঞ বা অনভিজ্ঞ মানুষকে ভুল বুঝাতে চেষ্টা করেন।
অতীতের ক্রুসেডাররা যেমন বাইবেলের এ সকল নির্দেশনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন, বর্তমানের খ্রিষ্টানরাও এ সকল নির্দেশনাকে তাদের যুদ্ধবিগ্রহের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করছেন। অতীতের ক্রুসেডাররা ধর্মযুদ্ধ বা পবিত্র যুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করতেন। আধুনিক ক্রুসেডাররা ‘নৈতিক যুদ্ধ’ বা ‘ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ’ (moral war/ just war) শব্দ ব্যবহার করেন। এগুলোর ভিত্তিতেই প্রসিদ্ধ আমেরিকান ধর্মগুরু রেভারেন্ড বিলি গ্রাহাম (Billy Graham) ভিয়েতনাম ও ইরাক যুদ্ধের গণহত্যা সমর্থন করেন।[1]