বাইবেলীয় বিধিবিধানের মৌলিক বিষয় পুরোহিততান্ত্রিকতা। সকল মানুষ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সমান নন। বরং সাধারণ মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্য রয়েছেন পুরোহিত বা যাজকরা (priest)। বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসে পুরোহিত বা যাজক (priest) বলতে ‘ইমাম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিম পরিভাষায় ইমাম এবং বাইবেলীয় ‘ইমাম’ এক নন।

মুসলিম পরিভাষায় সকল মানুষই আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান। সকল প্রকার ইবাদতের অধিকার ও দায়িত্ব ব্যক্তির নিজের। ইমাম শুধু জামাতের সালাতে নেতৃত্ব দেন। আর এ নেতৃত্বও কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত নয়। যে কেউ যে কোনো সময় ইমাম হতে পারেন। আর কোনো ইবাদতের কোনো সুবিধা ইমাম ভোগ করেন না এবং ইমাম কখনোই বান্দা ও মাবুদের মধ্যে মধ্যস্থ নন। প্রার্থনা, দুআ, পাক-সাফ, কোরবানি সবই ব্যক্তির নিজের দায়িত্ব। কেউ যদি কারো কোরবানি করে দেন তবে তিনি এর জন্য কোনো সুবিধা নিতে পারবেন না। যদি ইমামকে কোরবানির বিনিময়ে মাংস দেওয়া হয় তবে কোরবানি অবৈধ বলে গণ্য হবে। ধর্মের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও ইমামের কোনো বিশেষ অধিকার নেই। যে কোনো মুসলিম কুরআন, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি নিজে পড়ে কর্ম করতে বা মত প্রকাশ করতে পারেন।

পক্ষান্তরে বাইবেলের নির্দেশনা অনুসারে সকল মানুষ ঈশ্বরের ইবাদত পালনের অধিকার রাখে না। কোরবানি, উৎসর্গ, প্রার্থনা, পাক-সাফ করা, বিচার ইত্যাদি যাজকদের জন্য সংরক্ষিত। এগুলো কোনো বিশ্বাসী নিজে করতে পারবে না। এমনকি ঈশ্বরের ঘরের কাছেও সাধারণ মানুষের যাওয়ার অধিকার নেই। এছাড়া ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গকৃত সকল সুবিধা যাজক বা পুরোহিতরা ভোগ করবেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদও তারাই বণ্টন করবেন।

এ সকল বিষয়ে বাইবেলে বহু নির্দেশনা বিদ্যমান। ঈশ্বরের জন্য যা কিছু ফল, ফসল, মদ বা প্রাণি উৎসর্গ করা হয় তা পুড়িয়ে ফেলার পর যা কিছু থাকে তা সাধারণ মানুষদের জন্য নয়। কোনো আত্মীয়, দরিদ্র বা অসহায়ের জন্য নয়। বরং তা সবই পুরোহিতদের জন্য। ঈশ্বর বলেন: ‘‘বনি-ইসরাইলরা তাদের প্রথমে তোলা ফসলের সবচেয়ে ভাল যে জলপাই তেল, সবচেয়ে ভাল যে মদ (wine) ও শস্য মাবুদকে দেবে তা সবই আমি তোমাদের দিলাম।’’ (শুমারী ১৮/১২)

কোরবানি বিষয়ক বাইবেলীয় নিদের্শনাগুলো পড়লে পাঠক দেখবেন যে, কোরবানিকৃত প্রাণি, শস্য, খাদ্য ও মদের ক্ষেত্রে প্রথম বিষয় তা পুড়িয়ে তার খোশবু দ্বারা ঈশ্বরকে প্রীত করা। আর দ্বিতীয় বিষয় এ সকল বস্ত্তর মূল আকর্ষণীয় অংশগুলো যাজক, পুরোহিত বা ইমামদেরকে প্রদান করা। এছাড়া ঈশ্বরের জাতির সকল যাকাত (এক দশমাংশ: tithes) পুরোহিতদের পাওনা। যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ২৯ অধ্যায়, লেবীয় ২৭ অধ্যায়, গণনা/ শুমারী ১৮ অধ্যায়, দ্বিতীয় বিবরণ ১০/৮-৯ ইত্যাদি করলে পাঠক বিস্তারিত জানবেন।

মহা-যাজক বা মহা-ইমাম যদি কোনো অন্যায় করে তবে তার দরুন সমস্ত লোক দোষী হয় (লেবীয় ৪/৩)। ধর্ম, কর্ম, বিচার বা বিধানের বিষয়ে যাজক বা ইমাম যা বলবে তাই ঈশ্বরের অলঙ্ঘনীয় বিধান বলে মানতে হবে। কেউ যদি অহংকার বশে বিচারক বা ইমামের কথা শুনতে রাজি না হয় তবে তাকে হত্যা করতে হবে।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭/৮-১৩)