৭. ১. ১৯. ‘প্রভাতীয় নক্ষত্র’: লুসিফার বা শয়তান!

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়। যীশু তাঁর প্রিয় এ নৃশংস স্বৈরশাসককে ‘প্রভাতীয় তারা’ বা ‘ভোরের তারা’ (morning star) দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাঠক কি জানেন যে, বাইবেলের পরিভাষায় ও ইহুদি-খ্রিষ্টান ঐতিহ্যে ‘প্রভাতীয় তারা’ হল শয়তানের নাম? মুসলিম ঐতিহ্যে যেমন শয়তানের নাম ‘ইবলীস’, তেমনি খ্রিষ্টান ঐতিহ্যে শয়তানের নাম ‘লুসিফার’। লুসিফার অর্থই ‘প্রভাতি তারা’। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে এটাই শয়তানের নিজস্ব নাম (proper noun)। লুসিফার বা ‘প্রভাতি তারা’ নিজের অবস্থান থেকে আরো ঊর্ধ্বে স্বর্গারোহণের চেষ্টা করে পতিত হয়। আমরা জানি, শুক্রগ্রহ বা শুকতারাই (planet Venus) প্রভাতীয় তারা এবং উজ্জ্বলতম তারা হিসেবে আকাশে দেখা দেয়। শুকতারা আকাশের নিম্নপ্রান্তে দিগন্তের নিম্ন দিকে উদিত হয়। এজন্য অতীত যুগে অজ্ঞ মানুষেরা মনে করতেন, তারাটা আকাশ থেকে পতিত হয়ে দিগন্তের নিচে অবস্থান নিয়ে রাতের শেষভাগে উজ্জ্বলতা ও আলো আনয়নের দায়িত্ব পালন করছে। এজন্য তারা শুকতারা (Venus)- কে পতিত তারা বা পতিত ফেরেশতা (fallen star/ fallen angel) বলে কল্পনা করতেন।

পাঠক, যিশাইয়/ ইশাইয়া পুস্তকের ১৪ অধ্যায়ে লুসিফার বা ইবলিসের পতিত হওয়ার বর্ণনা পড়বেন। এখানে কয়েকটা শ্লোক দেখুন:

‘‘হে প্রভাতি-তারা! ঊষা-নন্দন! (KJV O Lucifer, son of the morning) তুমি ত স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছ (fallen from heaven)! হে জাতিগণের নিপাতকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! তুমি ত মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্ধ্বে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম পর্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপে উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের (the most High মহান ঈশ্বরের) তুল্য হইব।’ তুমি ত নামান যাইবে পাতালে (নরকে: hell), গর্তের গভীরতম তলে।’’ (যিশাইয় ১৪/১২-১৫)

কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘হে শুকতারা, ভোরের সন্তান, তুমি আসমান থেকে পড়ে গেছ। তুমি একদিন জাতিদের পরাজিত করেছ আর তোমাকেই এখন দুনিয়াতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তুমি মনে মনে বলেছ, ‘আমি বেহেশতে উঠব, আল্লাহর তাঁরাগুলোর উপরে আমার সিংহাসন উঠাব, যেখানে দেবতারা জমায়েত হয় উত্তর দিকের সেই পাহাড়ের উপরে আমি সিংহাসনে বসব। আমি মেঘের মাথার উপরে উঠব; আমি আল্লাহ তা’লার সমান হব। কিন্তু তোমাকে মৃতস্থানে নামানো হয়েছে, জ্বী, সেই গর্তের সবচেয়ে নীচু জায়গায় নামানো হয়েছে।’’

পাঠক লক্ষ্য করুন, পবিত্র পুস্তকে শয়তানকে তার মূল নামে ডাকা হয়েছে: ‘প্রভাতি তারা’। ইংরেজি অথোরাইযড ভার্শন বা কিং জেমস ভার্শনে ‘প্রভাতি তারা’-র ইংরেজি লুসিফার (Lucifer)। আর ইংরেজিভাষী সকলেই জানেন যে, লুসিফার শয়তানের নিজ নাম (proper noun)। বর্তমানে অধিকাংশ ইংরেজি ভার্শনে লুসিফার (Lucifer) শব্দটার পরিবর্তে ‘morning star’ অর্থাৎ ‘প্রভাতি তারা’ ভোরের তারা’ ব্যবহার করা হচ্ছে।  পাঠক এ বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য উইকিপিডিয়ায় ‘Lucifer’ প্রবন্ধে জানতে পারবেন। (http://en.wikipedia.org/wiki/Lucifer)

এখানে প্রশ্ন হল, যীশু কি তাঁর প্রিয় এ ঈমানদার ও শেষ পর্যন্ত হুকুম পালনকারী নৃশংস স্বৈরশাসককে প্রভু বা সহায়ক হিসেবে লুসিফার বা শয়তান প্রদান করবেন?

অন্যত্র যীশু বলেছেন: ‘‘আমি দায়ুদের মূল ও বংশ, উজ্জ্বল প্রভাতী নক্ষত্র (the bright and morning star)।’’ (প্রকাশিত বাক্য/ প্রকাশিত কালাম ২২/১৬)

পাঠক কি এ কথাটার ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন? আমরা দেখেছি যিশাইয় ১৪/১২ অনুসারে ‘প্রভাতি নক্ষত্র’ বা ‘প্রভাতি তারা’ অর্থই ‘লুসিফার’ বা শয়তান। আর এখানে যীশু স্বয়ং নিজেকে ‘প্রভাতি নক্ষত্র’ বা ‘প্রভাতি তারা’ বলে আখ্যায়িত করলেন! তিনি কি নিজেকে লুসিফার বলে দাবি করলেন?! উপরের উদ্ধৃতিতে তিনি তাঁর প্রিয় জালিম শাসককে ‘প্রভাতি তারা’ (the morning star/ Lucifer) উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং এখানে তিনি নিজেকেই প্রভাতী তারা বা লুসিফার (the morning star/ Lucifer) বলে প্রকাশ করলেন!!