৬. ২. ১০. ঈশ্বরের ভাববাদী ও খ্রিষ্ট শৌলের পাপাচার

বাইবেলের প্রসিদ্ধ নবী ইহুদিদের প্রথম রাজা শৌল (Saul) বা তালুত। তিনি বিনইয়ামীন গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১০২০ সালের দিকে বনি-ইসরাইলের প্রথম রাজা হিসেবে তাকে ঈশ্বর অভিষিক্ত করেন।

তালুত ছিলেন ঈশ্বরের খ্রিষ্ট বা মাসীহ। এনকার্টা ডিকশনারি ও এনকার্টা বিশ্বকোষ ‘Christ’ প্রবন্ধ থেকে পাঠক জানবেন যে, ইংরেজি ‘খ্রিষ্ট’ (Christ) শব্দটা গ্রিক ‘খ্রিস্টস (Khristos) থেকে গৃহীত। শব্দটির অর্থ ‘anointed’ বা ‘অভিষিক্ত’। মূল হিব্রু ভাষায় শব্দটা ‘মাসিয়াহ’ (māshīakh)। ইংরেজিতেও ‘Messiah’ (মেসিয়াহ/ ম্যাসায়া) শব্দটা ব্যবহৃত। ঈশ্বরের পক্ষ থেকে কাউকে পবিত্র তেল দিয়ে ‘অভিষিক্ত’ করার মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হলে তাকে ইহুদি পরিভাষায় ‘মাসীহ’, খিষ্ট বা অভিষিক্ত বলা হয়। পবিত্র বাইবেলে এরূপ অনেক অভিষিক্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পবিত্র বাইবেলের খ্রিষ্টধর্মীয় অনুবাদে ‘মাসীহ’, ‘মসীহ’ বা খ্রিষ্ট শব্দ শুধু ঈসা (আ) বা যীশুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য মাসীহ বা খ্রিষ্টদের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে ‘anointed’এবং বাংলায় ‘অভিষিক্ত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়, যদিও মূল হিব্রুতে ‘māshīakh’ বা মসীহ শব্দটাই ব্যবহৃত।

তালুত ছিলেন ঈশ্বরের মাসিয়াহ, মাসীহ, খ্রিষ্ট বা অভিষিক্ত। বাইবেলে বার বার তাঁকে ঈশ্বরের মাসিয়াহ বা সদাপ্রভুর অভিষিক্ত (the LORD'S anointed/ the anointed of the LORD) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরবিতে ‘মাসীহুর রবব’ বা প্রভুর মসীহ। (১ শমূয়েল ৯/১৬-২৭; ১০/১, ১০/৫; ১২/৩; ১২/৫; ১৯/২৩-৩৪; ২৪/৬; ২৪/১০; ২৬/৯; ২৬/১১; ২৬/১৬; ২৬/২৩; ২ শমূয়েল ১/১৪; ১/১৬)

তিনি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত নবীও ছিলেন। ঈশ্বরের আত্মা বা পবিত্র আত্মা তাঁর উপরে আগমন করতেন এবং তিনি ভাববাণী বা নুবুওয়াত প্রচার করতেন। আবার পবিত্র আত্মা তাকে পরিত্যাগ করতেন তখন ঈশ্বরের দুষ্ট আত্মা তাঁর উপর আসতেন। লক্ষণীয় যে, পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলে তিনি উলঙ্গ হয়ে থাকতেন। তাঁর বিষয়ে বাইবেলের কয়েকটা বক্তব্য দেখুন:

(ক) তাঁরা সেখানে, সেই পর্বতে, উপস্থিত হলে, দেখ, এক দল নবী তাঁর সম্মুখে পড়লেন; এবং আল্লাহর রূহ্ সবলে তাঁর উপরে আসলেন এবং তাঁদের মধ্যে তিনি ভাবোক্তি (নুবুওয়াত: prophesied) বলতে লাগলেন। ... শৌলও কি নবীদের মধ্যে এক জন? ... পরে তিনি ভাবোক্তি (নুবুওয়াত) বলা শেষ করে উচ্চস্থলীতে গেলেন।’’ (১ শামুয়েল ১০/১০-১৩, মো.-১৩)

(খ) ‘‘ঐ কথা শুনে আল্লাহর রূহ্ তালুতের উপরে সবলে আসলেন এবং তাঁর ক্রোধ অতিশয় প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলো। আর তিনি এক জোড়া বলদ নিয়ে খণ্ড খণ্ড করে ঐ দূতদের দ্বারা ইসরাইল দেশের সমস্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, যে কেউ তালুত ও শামুয়েলের পিছনে বাইরে না আসবে, তার সকল বলদের প্রতি এরকম করা যাবে; তাতে মাবুদের প্রতি লোকদের ভয় উপস্থিত হওয়াতে তারা এক জন মানুষের মত বের হয়ে আসলেন।’’ (১ শামুয়েল ১১/৬-৭, মো.-১৩)

সম্মানিত পাঠক, মানুষের অপরাধে নিরপরাধ অবলা প্রাণিকে কেটে খণ্ড খণ্ড করা কোন মানবীয়, ধর্মীয় বা ঐশ্বরিক বিচারে সঠিক বলে গণ্য হতে পারে? কোনো সুস্থ মস্তিস্ক মানুষ কি এরূপ করতে পারেন? আবার সকলকেই জানানো হল যে, তারা যদি অপরাধ করে তবে তাদেরকে নয়; বরং তাদের বলদগুলোকে এভাবে হত্যা করে বিনষ্ট করা হবে! ঈশ্বরের আত্মা, পাক-রূহ বা পবিত্র আত্মার কি এটাই শিক্ষা?

(গ) ‘‘আর আল্লাহর রূহ্ তাঁর উপরেও আসলেন, তাতে তিনি রামাস্থিত নায়োতে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত যেতে যেতে ভাবোক্তি (নুবুওয়াত) প্রচার করলেন আর তিনিও তাঁর কাপড় খুলে ফেললেন এবং তিনিও শামুয়েলের সম্মুখে ভাবোক্তি তবলিগ করলেন, আর সমস্ত দিনরাত উলঙ্গ হয়ে পড়ে রইলেন।’’ (১ শমূয়েল ১৯/২৩-২৪, মো.-১৩)