বিবাহ বিষয়ক বিধি-বিধানে মানুষদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও সকল আস্তিক ও নাস্তিক একমত যে, মিথ্যা অন্যায়। কিন্তু বাইবেলের বর্ণনায় নবীরা অকাতরে মিথ্যা বলতেন। অনেক সময় তাঁরা ঈশ্বরের নামে মিথ্যা বলতেন এবং ঈশ্বরের নির্দেশেই মিথ্যা বলতেন। এ বিষয়ক অনেক নমুনা আমরা বিভিন্ন নবী প্রসঙ্গে দেখব।
বাইবেলের বর্ণনায় অবরাহামও বারবার মিথ্যা বলেছেন। দু’বার তিনি নিজের স্ত্রীকে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁদের মধ্যকার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উল্লেখ না করে স্ত্রীকে বোন বলে উল্লেখ করেন। এরূপ মিথ্যা কথনের মাধ্যমে তিনি বিপুল ভেট বা হাদিয়া লাভ করেন। সারাকে তাঁর ভগ্নি বলে জানার পর মিসর রাজ ফেরাউন এবং গরারের রাজা অবীমেলক তাঁর সুন্দরী ‘বোনকে’ বিবাহ করার মানসে তাঁকে বিপুল পরিমাণ হাদিয়া-উপঢৌকন প্রদান করেন। পরে তারা যখন তাঁকে তাঁর স্ত্রী বলে জানতে পারেন তখন স্ত্রীকে ফেরত দেন, তবে হাদিয়া ফেরত নেননি। (আদিপুস্তক ১২/১১-২০; ২০/১-১৮)
এ সকল কাহিনীতে অবরাহামকে অত্যন্ত নোংরাভাবেই চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি অকাতরে মিথ্যা বলছেন। বাইবেলের বর্ণনায় তিনি বিনা আপত্তিতে নিজের স্ত্রীকে রাজার হাতে সমর্পণ করছেন। বাইবেলের বর্ণনায় আমরা দেখছি যে, তিনি সত্য বললে কোনোই ক্ষতি হত না, শুধু বিপুল উপঢৌকন থেকে বঞ্চিত হতেন।
আরো লক্ষণীয় যে, বাইবেলের বর্ণনায় তিনি কোনো আপত্তি ছাড়াই নিজের স্ত্রীকে রাজার হাতে সমর্পণ করছেন। অবরাহামের মত মানুষের ক্ষেত্রে এ কথা বিশ্বাস করা কষ্টকর। অতি সাধারণ যে মানুষটার সামান্য আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে সেও তো এরূপ কর্ম করতে রাজি হবে না। বরং নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অথবা স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষার চেষ্টা করার চিন্তা করবে। মিথ্যা বলতে হলে স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষার জন্য মিথ্যা বলবেন, স্ত্রীকে বলি দিয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলা কি শোভনীয়? অবরাহামের মত একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ কিভাবে সামান্য লাভের আশায় নিজের স্ত্রীকে বোন পরিচয় দিয়ে বিনা বাধায় সম্রাটের হাতে সমর্পণ করতে রাজি হলেন?