ইতোপূর্বে বৈপরীত্য প্রসঙ্গে আমরা দেখেছি, বাইবেলের বর্ণনায় ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন। সর্বোচ্চ পক্ষপাতিত্ব ইসরাইল বা ইয়াকুব (যাকোব)-এর বংশের প্রতি পক্ষপাতিত্ব। সকল মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও শুধু বংশের কারণে তিনি একান্ত পক্ষপাতিত্বের সাথে বনি-ইসরাইল জাতিকে অন্যান্য জাতি থেকে প্রাধান্য দিয়েছেন বলে বাইবেল নিশ্চিত করেছে। দ্বিতীয় বিবরণ ৭/৬: ‘‘কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা (holy people); ভূতলে যত জাতি আছে, সে সকলের মধ্যে (সকলের উপরে: above all people) আপনার নিজস্ব প্রজা (special people) করিবার জন্য সদাপ্রভু তোমাকেই মনোনীত (chosen) করিয়াছেন।’’
বাইবেল-২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তোমরা এমন একটি জাতি যাকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর/ মাবুদ আল্লাহর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তোমরা যেন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর/ মাবুদ আল্লাহর নিজের লোক/ বান্দা ও সম্পত্তি হও সেইজন্য পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্য থেকে তিনি তোমাদের বেছে নিয়েছেন।’’
কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘কেননা তুমি তোমার আল্লাহ মাবুদের পবিত্র লোক; ভূতলে যত জাতি আছে, সেই সবের মধ্যে তাঁর নিজস্ব লোক করার তোমার আল্লাহ মাবুদ তোমাকেই মনোনীত করেছেন।’’
সুপ্রিয় পাঠক, বাইবেলের বর্ণনায় ইয়াকুবের বংশধরদেরকে ঈশ্বর কোনো বিশ্বাস বা কর্মের কারণে এ পবিত্রতা ও মর্যাদা দেননি। ঈশ্বর তাদের বিশ্বাস ও কর্মের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে মর্যাদা, পবিত্রতা, সাহায্য-সহযোগিতা একান্তই বংশের কারণে।
কোনো কর্ম বা পাপ-পুণ্য বিচার না করে শুধুমাত্র জাতি, বর্ণ, বংশ বা রক্তের কারণে একটা সম্প্রদায়কে নিজের পবিত্র ও বিশেষ সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করা মানবীয় বিবেকে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বলেই গণ্য। তবে এটাই বাইবেলের মূল বিশ্বাস ও শিক্ষা। বার বার বাইবেল নিশ্চিত করেছে যে, বনি-ইসরাইল বা ইয়াকুবের বংশধর ঈশ্বরের পবিত্র ও বাছাইকৃত জাতি, তাদেরকে পৃথিবীর সকল মানুষের উপরে পবিত্রতা দেওয়া হয়েছে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৪/২; ১৪/২১; ২৬/১৯; ২৮/৯; ১ শমূয়েল ১২/২২; ১ বংশাবলি ১৭/২২; যিশাইয় ৫২/৬; ৬২/১২; দানিয়েল ৮/২৪; ১২/৭)।