যিহোশূয় বা ইউসা পুস্তকের ২৪ অধ্যায়ের ২৯-৩৩ শ্লোক নিম্নরূপ: ‘‘এসব ঘটনার পর নূনের পুত্র, মাবুদের গোলাম ইউসা একশত দশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করলেন। পরে লোকেরা গাশ পর্বতের উত্তরে পর্বতময় আফরাহীম প্রদেশস্থ তিন্নৎ-সেরহে তাঁর অধিকারের অঞ্চলে তাঁকে দাফন করলো। ইউসার সমস্ত জীবনকালে এবং যে প্রাচীনবর্গরা ইউসার ইন্তেকালের পরে জীবিত ছিলেন ও ইসরাইলের জন্য মাবুদের কৃত সমস্ত কাজের কথা জানতেন, তাঁদেরও সমস্ত জীবনকালে বনি-ইসরাইল মাবুদের সেবা করলো। ...পরে হারুনের পুত্র ইলিয়াসর ইন্তেকাল করলেন; আর লোকেরা তাঁকে তাঁর পুত্র পীনহসের পাহাড়ে দাফন করলো...।’’ (মো.-১৩)
সকল বাইবেল বিশেষজ্ঞ একমত যে, এ শ্লোকগুলো ইউসার মৃত্যুর অনেক পরে তাঁর পুস্তকের মধ্যে সংযোজিত। তবে কে সংযোজন করেছেন তা কেউই জানেন না।
আমরা আগেই বলেছি, এরূপ বিকৃতি বাইবেলের মধ্যে অগণিত। আধুনিক অনেক খ্রিষ্টান বিশেষজ্ঞ এগুলোকে বাইবেলের অপ্রামাণ্যতার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। এগুলো দিয়ে তাঁরা দাবি করেন যে, বাইবেল কোনো অভ্রান্ত ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং মানবীয় বা মানব রচিত ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পুস্তক।
এর বিপরীতে বাইবেল বিশেষজ্ঞ ধর্মগুরুরা এ সকল বিকৃতি স্বীকার করার পাশাপাশি দাবি করেন যে, এ সকল বিকৃতি সত্ত্বেও বাইবেল অভ্রান্ত ধর্মগ্রন্থ। এ সকল বিকৃতি বাইবেলের প্রামাণ্যতা নষ্ট করে না। যেখানে বিকৃতি অস্বীকার করার উপায় নেই সেখানে তারা বিকৃতি স্বীকার করেন এবং এর জন্য বিভিন্ন অযুহাত পেশ করেন।
যে বিকৃতিগুলোর অর্থ গ্রহণযোগ্য সেক্ষেত্রে তারা বলেন, সম্ভবত কোনো অজ্ঞাত পরিচয় নবী এ সংযোজন করেছেন। আর যেক্ষেত্রে সংযোজন, বিয়োজন বা পরিবর্তনের ফলে অগ্রহণযোগ্য অর্থ জন্ম নিয়েছে সেখানে তারা বলেন, সম্ভবত কোনো লিপিকারের ভুলে এরূপ ঘটেছে, অথবা কোনো ধর্মত্যাগী ইহুদি রাজা এটা ঘটিয়েছেন। কোনো ক্ষেত্রেই অনুমান ছাড়া আর কিছুই বলার উপায় নেই।
তাদের এ সকল ওযরখাহি আমাদেরকে মোল্লা দোপেয়াজি ও বাদশাহ আকবরের মধ্যকার সংলাপ মনে করিয়ে দেয়। বাদশাহ বললেন, এদেশে মোট কাকের সংখ্যা কত? মোল্লা দোপেয়াজী একটা কাল্পনিক সংখ্যা বললেন: এত লক্ষ... এত হাজার এত... । আপনার সন্দেহ হলে গুণে দেখুন। যদি বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে বাইরের কোনো কাক এদেশে বেড়াতে এসেছে। আর যদি কম হয় তাহলে বুঝতে হবে এদেশের কোনো কাক বাইরে বেড়াতে গিয়েছে। বাইবেল বিকৃতির অজুহাতে বলা এ সকল আনুমানিক সম্ভাবনার সাথে মোল্লা দোপেয়াজির কথার কি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়?
এছাড়া একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, কোনো লিপিকারের ইচ্ছায় বা ভুলে বা কোনো ধর্মত্যাগীর ইচ্ছায় বা চেষ্টায় একটা দুটো পাণ্ডুলিপির মধ্যে বিকৃতি ঘটানো যায়। কিন্তু সকল পাণ্ডুলিপি ও অনুলিপির মধ্যে বিকৃতি ঢুকল কিভাবে? এ বিষয়টা কি প্রমাণ করে না যে, এ সকল পুস্তক লেখা হয়েছে অনেক পরে এবং এগুলো দু-একটার বেশি পাণ্ডুলিপি অতীত কালে ছিল না যেগুলোকে সহজেই বিকৃত করা যেত?