শুমারী ১/৪৪-৪৭ (মো.-১৩): ‘‘এ সব লোককে মূসা ও হারুন ... গণনা করলেন। নিজ নিজ পিতৃকুল অনুসারে বনি-ইসরাইল, অর্থাৎ বিশ বছর ও তার চেয়েও বেশি বয়স্ক ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষ লোকদের গণনা করা হল। তাদের গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল ছয় লক্ষ তিন হাজার পাঁচ শত পঞ্চাশ। কিন্তু লেবীয়দের তাদের পিতৃবংশানুসারে তাদের মধ্যে গণনা করা হল না।’’
যাত্রাপুস্তকে ১২/৩৭: ‘‘তখন বনি-ইসরাইলেরা শিশু ছাড়া কমবেশ ছয় লক্ষ পদাতিক পুরুষ...।’’
এ থেকে জানা যায় যে, ইস্রায়েল-সন্তানরা যখন মোশি ও হারোনের সাথে মিসর ত্যাগ করে তখন তাদের ২০ বছরের অধিক বয়সের যুদ্ধে সক্ষম পুরুষদের সংখ্যা ছিল ছয় লক্ষের অধিক (৬,০৩,৫৫০)। চার প্রকারের মানুষকে এ গণনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে: ১. লেবীর বংশের সকল নারী, ২. লেবীয় বংশের সকল পুরুষ, ৩. অন্যান্য সকল বংশের সকল নারী এবং ৪. সকল বংশের ২০ বছরের কম বয়স্ক সকল যুবক ও কিশোর পুরুষ। যদি এ চার প্রকারের নারী, পুরুষ ও যুবক-কিশোরদের গণনায় ধরা হয় তাহলে মিসর ত্যাগকালে বনি-ইসরাইলের সংখ্যা কমবেশি ২৫ লক্ষ হতে হবে। ৬ লক্ষ বয়স্ক পুরুষের জন্য ন্যূনতম ৬ লক্ষ স্ত্রী। প্রতি পরিবারে ২০ বছরের কম বয়স্ক অন্তত দুটো সন্তান হিসেবে আরো বার লক্ষ এবং লেবীয় বংশের অন্তত এক লক্ষ মানুষ।
এটা একটা অবাস্তব ও অসম্ভব বিষয়। কারণ:
প্রথমত: ইস্রায়েল-সন্তানরা যখন মিসরে প্রবেশ করে তখন তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ জন। (আদিপুস্তক ৪৬/২৭, যাত্রাপুস্তক ১/৫, দ্বিতীয় বিবরণ ১০/২২)
দ্বিতীয়ত: ইস্রা্য়েল-সন্তানরা মিসরে অবস্থান করেছিলেন সর্বোচ্চ ২১৫ বছর।
তৃতীয়ত: মিসর ত্যাগের ৮০ বছর পূর্ব থেকে তাদের সকল পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হত এবং কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখা হত। (যাত্রাপুস্তক ১/১৫-২২)
৭০ জন মানুষ মিসরে এসে ২০০ বছর বসবাস করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ আশি বছর যাবৎ যাদের সকল পুত্রসন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ বছর বা তার অধিক যুবক ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ! সর্বমোট প্রায় ২৫ লক্ষ!!
আমরা যদি পুত্র সন্তান হত্যার বিষয়টা একেবারে বাদ দিই এবং মনে করি যে, ইস্রায়েল সন্তানরা মিসরে অবস্থানকালে তাদের জনসংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেত যে, প্রতি ২৫ বছরে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেত, তাহলেও তাদের সর্বমোট জনসংখ্যা ২১৫ বছরে ৭০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার)-এর অধিক হতে পারে না।
মোশির পিতা ইমরান (Amram: অম্রম), তার পিতা কহাৎ, তার পিতা লেবি, তার পিতা যাকোব বা ইসরাইল। ইসরাইল ও মোশির মধ্যে তিন পুরুষ মাত্র। (যাত্রাপুস্তক ৬/১৬-২০, গণনাপুস্তক ৩/১৭-১৯ ও ১ বংশাবলি ৬/১৮) মাত্র চার পুরুষে ৭০ জনের বংশধর ২৫ লক্ষ হওয়া অসম্ভব বিষয়।
নিম্নের বিষয়গুলো এ ভুলকে আরো নিশ্চিত করে:
(ক) বনি-ইসরাইলরা যখন মিসর পরিত্যাগ করেন তখন তাদের সাথে ছিল গৃহপালিত পশুর বিশাল বাহিনী। সকল মানুষ ও পশু এক রাতের মধ্যে সমুদ্র পার হয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন পথ চলতেন এবং তাদের যাত্রার জন্য মোশির নিজের মুখের সরাসরি নির্দেশই যথেষ্ট ছিল। তারা সমুদ্র অতিক্রম করার পরে সিনাই পর্বতের পার্শ্বে ১২টি ঝর্ণার পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। (যাত্রাপুস্তক ১২/৩৮-৪২)
যদি তাদের সংখ্যা এ সময়ে ২০/২৫ লক্ষ হত তাহলে কখনোই এক রাতে তারা সকল মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনী সমুদ্র অতিক্রম করতে পারতেন না, মোশির মুখের কথা শুনেই সকলে যাত্রা শুরু করতে পারতেন না এবং সিনাই প্রান্তরের সীমিত স্থানে ১২টা ঝর্ণার পাশে তাদের এত মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনীর স্থান সংকুলান হত না।
(খ) মিসর ত্যাগের সময়ে বনি-ইসরাইলের মধ্যে মাত্র দু’জন ধাত্রী ছিল: শিফ্রা ও পূয়া। ফেরাউন এ দু’ ধাত্রীকে নিদের্শ প্রদান করেন যে, তোমরা ইব্রীয় (ইসরাইলী) মহিলাদের সন্তান প্রসব করানোর সময় তাদের পুত্র সন্তান হলে হত্যা করবে এবং কন্যা সন্তান হলে তাকে জীবিত রাখবে। (যাত্রাপুস্তক ১/১৫-২২) যদি বনি-ইসরাইলদের সংখ্যা এত বেশি হত তবে কোনো অবস্থাতেই মাত্র দু’জন ধাত্রী তাদের সকলের জন্য ধাত্রীকর্ম করতে পারত না। বরং তাদের মধ্যে শত শত ধাত্রী থাকত।
(গ) এখানে দেখছি, মিসর পরিত্যাগের সময় ইসরায়েলীয়দের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ। মিসর থেকে তারা বেরিয়ে আসেন আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে। এর প্রায় ৫০০ বছর পরে ইসরাইলের রাজা ছিলেন আহাব (Ahab)। বাইবেল উল্লেখ করেছে যে, তার সময়ে ‘‘সমস্ত লোক অর্থাৎ সমস্ত বনি-ইসরাইলকে সংগ্রহ করলে সাত হাজার জন হল।’’ (১ বাদশাহনামা ২০/১৫, মো.-১৩)। ২০০ বছরে ৭০ জন ২৫ লক্ষ হলেন। এর পরের ৫০০ বছরে ২৫ লক্ষ থেকে কমে ৭ হাজার হলেন!
উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখছি যে, মিসর ত্যাগের সময় ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যার বিষয়ে গণনা পুস্তক ও যাত্রাপুস্তকের বর্ণনা ভুল ও অসত্য।