বৈপরীত্যের পাশাপাশি বাইবেলের মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি বিদ্যমান বলে সমালোচকরা দাবি করেন। বৈপরীত্য ও ভুলভ্রান্তির মধ্যে পার্থক্য হল, বৈপরীত্য অভ্যন্তরীণ (internal)। বাইবেলের ভিতরেই তা বিদ্যমান। বাইবেলের বিভিন্ন শ্লোক, অধ্যায়, পুস্তক, পান্ডুলিপি বা সংস্করণের মধ্যে তুলনা করে তা জানা যায়। তা অস্বীকার করা যায় না, তবে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যায়। আর ভুল বহিস্থ (external) বা বাইরে থেকে জানা যায়। ভুল ধরা পড়ে জ্ঞান, বিবেক, মানবীয় রীতি, ঐতিহাসিক তথ্য বা অন্য কোনো জ্ঞানের আলোকে বাইবেলের তথ্য বিচার করার মাধ্যমে। বাইবেল বিশেষজ্ঞরা বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির অনেক নমুনা উল্লেখ করেছেন। এখানে অল্প কয়েকটা নমুনা দেখুন:
৪.১. তৌরাত ও পুরাতন নিয়মের কিছু ভুলভ্রান্তি
৪. ১. ১. ফল ভোজনেই আদমের নিশ্চিত মৃত্যু
পুরাতন নিয়মের প্রথম পুস্তক Genesis, বাংলায় ‘আদিপুস্তক’ বা ‘পয়দায়েশ’। এ পুস্তকের ২/১৭ শ্লোক (মো.১৩): ‘‘কিন্তু নেকী-বদী-জ্ঞানের বৃক্ষর ফল ভোজন করো না, কেননা যে দিন তার ফল খাবে, সেদিন মরবেই মরবে (surely die)।’’
এ কথাটা ভুল। কারণ আদম (আ.) এ বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন এবং যে দিন এ বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন, সে দিন তিনি মরেননি। বরং এর পরেও ৯০০ বছরের বেশি সময় তিনি জীবিত ছিলেন। (আদিপুস্তক ৫/৫)
‘মরবে’ (die) বা ‘মরবেই মরবে’ (surely die) অর্থ ‘গোনাহগার হবে’ বা ‘জাহান্নামে যাবে’ বলা একান্তই ভিত্তিহীন দাবি। ‘মরবে’, ‘মরবেই মরবে’ অথবা ‘নিশ্চিত মরবে’ (surely die) বাক্যাংশ পুরাতন নিয়মে অনেক স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে জাগতিক মৃত্যুই বুঝানো হয়েছে। বনি-ইসরাইলদের মরুভূমিতে মৃত্যুর বিষয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘কারণ মাবুদ তাদের বিষয়ে বলেছিলেন, তারা মরুভূমিতে মরবেই মরবে (surely die); আর তাদের মধ্যে যিফূন্নির পুত্র কালুত ও নূনের পুত্র ইউসা ছাড়া এক জনও অবশিষ্ট রইলো না।’’ (শুমারী/ গণনাপুস্তক ২৬/৬৫, মো.-১৩)
এখানে ‘মরবে (die) অর্থ ‘গোনাহগার হবে’ বা ‘জাহান্নামে যাবে’ বলে দাবি করা পাগলামি বলেই গণ্য হবে। পরকাল বলে কোনো কিছুই তৌরাতে নেই। দ্বিতীয় মৃত্যু, জাহান্নাম ইত্যাদি কোনো কিছুই তাতে নেই। পুরাতন নিয়মের, বিশেষ করে তৌরাতের সকল স্থানেই আমরা দেখি যে, ‘মরবে’ বলতে দৈহিক মৃত্যু বুঝানো হয়েছে, দ্বিতীয় মৃত্যু, পাপ বা জাহান্নাম বুঝানো হয়নি।[1]
[1] দেখুন: গণনা পুস্তক ২৬/৬৫, বিচারকর্তৃগণ ১৩/২২, ১ শমূয়েল ১৪/৪৪, ১ শমূয়েল ২০/৩১, ১ শমূয়েল ২২/১৬, ২ শমূয়েল ১২/৫, ২ শমূয়েল ১২/১৪, ১ রাজাবলি ২/৩৭, ১ রাজাবলি ২/৪২, ২ রাজাবলি ১/৪, ২ রাজাবলি ১/৬, ২ রাজাবলি ১/১৬; ২ রাজাবলি ৮/১০; যিরমিয় ২৬/৮; যিহিষ্কেল ৩/১৮; যিহিষ্কেল ১৮/১৩; যিহিষ্কেল ৩৩/৮ ... ইত্যাদি।