পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ১০. ১. বৈপরীত্য ব্যাখ্যার সাধারণ পদ্ধতিসমূহ

বৈপরীত্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় ব্যাখ্যাকারীরা লিপিকারের ভুলের অজুহাত দেন। অনেক সময় এমন কিছু ব্যাখ্যা দেন যা বাইবেলের বক্তব্য থেকে মোটেও বুঝা যায় না। অধিকাংশ সময়ে তারা নিজেরাই এ সকল সমাধানের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ার কারণে একাধিক সমাধান দিতে থাকেন। জিম মেরিট (Jim Meritt) ‘বাইবেলীয় বৈপরীত্যের একটা তালিকা’ (A List of Biblical Contradictions) প্রকাশ করেছেন। এ তালিকার ভূমিকায় তিনি বলেন:

“The Bible is riddled with repetitions and contradictions ... For instance, Genesis 1 and 2 disagree about the order in which things are created, and how satisfied God is about the results of his labors. The flood story is really two interwoven stories that contradict each other ... The Gospel of John disagrees with the other three Gospels on the activities of Jesus Christ (how long had he stayed in Jerusalem--a couple of days or a whole year?) and all four Gospels contradict each other on the details of Jesus Christ's last moments and resurrection.

The Gospels of Matthew and Luke contradict each other on the genealogy of Jesus Christ's father; though both agree that Joseph was not his real father. Repetitions and contradictions are understandable for a hodgepodge collection of documents, but not for some carefully constructed treatise, reflecting a well-thought-out plan.

Of the various methods I've seen to "explain" these:

1. "That is to be taken metaphorically." In other words, what is written is not what is meant. ...

2. "There was more there than..."

3. "It has to be understood in context." I find this amusing because it comes from the same crowd that likes to push likewise extracted verses that support their particular view. Often it is just one of the verses in the contradictory set which is supposed to be taken as THE TRUTH when, if you add more to it, it suddenly becomes "out of context." How many of you have gotten JUST John 3:16 (taken out of all context) thrown at you?

4. "There was just a copying/writing error." This is sometimes called a "transcription error," as in where one number was meant and an incorrect one was copied down. Or what was "quoted" wasn't really what was said, but just what the author thought was said.  And that's right--I'm not disagreeing with events, I'm disagreeing with what is WRITTEN. Which is apparently agreed that it is incorrect. This is an amusing misdirection to the problem that the Bible itself is wrong.”

‘‘বাইবেল পুনরাবৃত্তি ও বৈপরীত্যের গোলক ধাঁধায় পরিপূর্ণ। ... উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আদিপুস্তক ১ম ও ২য় অধ্যায় সৃষ্টির ক্রমধারার বিষয়ে- কোন্টার পরে কোন্টা সৃষ্টি করা হয়েছে সে বিষয়ে এবং স্রষ্টা নিজের পরিশ্রমের ফলাফল বিষয়ে কিরূপ অনুভব করলেন সে বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বর্ণনা দিয়েছে। পস্নাবনের গল্পটা বাস্তবেই দুটো পৃথক গল্পের সংমিশ্রিত রন্ধন যা পরস্পর সাংঘর্ষিক তথ্য দিয়েছে ... যীশু খ্রিষ্টের কর্মকা- বর্ণনায় প্রথম তিন ইঞ্জিলের বর্ণনার সাথে যোহনের ইঞ্জিলের বর্ণনা সাংঘর্ষিক। (তিনি কত দিন জেরুজালেমে ছিলেন: কিছু দিন, না পূর্ণ বছর?)। আর যীশু খ্রিষ্টের শেষ মুহূর্তগুলো এবং পুনরুত্থান বর্ণনায় চার ইঞ্জিলের বর্ণনাগুলো পরস্পর বিরোধী। যীশুর পিতার বংশতালিকায় মথি এবং লূক পরস্পর বিরোধী তথ্য দিয়েছেন, যদিও দুজনেই স্বীকার করেছেন যে, যোষেফ যীশুর প্রকৃত পিতা নন। জগাখিচুড়িভাবে সংকলিত পুস্তক বা দস্তাবেজে এরূপ পুনরাবৃত্তি ও পরস্পর বিরোধিতা বোধগম্য। তবে সুচিন্তিত পরিকল্পনার প্রকাশক সচেতনভাবে রচিত কোনো কর্মে বিষয়টা মোটেও বোধগম্য নয়। আমি দেখেছি যে, নিম্নের পদ্ধতিগুলোতে এ সকল বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়:

১. ‘এ কথাটাকে রূপকভাবে গ্রহণ করতে হবে।’ অর্থাৎ যে কথা লেখা রয়েছে সে কথা উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি, অন্য অর্থে তা লেখা ... (কোনটা রূপক আর কোন্টা আক্ষরিক অর্থে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও তারাই নেন!)

২. ‘একাধিক ঘটনা ছিল...’

৩. ‘সামগ্রিক বক্তব্যের আলোকে এ কথাটাকে বুঝতে হবে।’ আমি এ ব্যাখ্যাকে সত্যই মজাদার হিসেবে গণ্য করি। কারণ এ কথা তারাই বলেন, যারা নিজেদের মতবাদ সমর্থন করতে সামগ্রিক বক্তব্য থেকে বের করে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যগুলোর মধ্য থেকে একটা বক্তব্যকে নিয়ে ‘একমাত্র সত্য বিশ্বাস’ হিসেবে পেশ করা হয়। আপনি যখন আরো কিছু প্রাসঙ্গিক শ্লোক উদ্ধৃত করেন হঠাৎ করে তা ‘প্রসঙ্গ বহির্ভূত’ হয়ে যায়! আপনারা কি অনেকেই দেখেন নি যে, যোহনের ৩/১৬ শ্লোকটা (সকল প্রসঙ্গ থেকে বের করে নিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে) আপনার সামনে পেশ করা হয়? (যীশুকে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসেবে প্রমাণের জন্য অন্যান্য সকল বক্তব্য থেকে পৃথক করে এ বক্তব্যকে পেশ করা হয়)।

৪. ‘এখানে মূলত লেখতে বা অনুলিপি করতে ভুল হয়েছে’। কখনো একে প্রতিলিপিকরণের ভুল বলা হয়, যেখানে এক সংখ্যার স্থলে ভুল করে অন্য সংখ্যা লেখা হয়েছে। অথবা যা লেখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা বলা হয়নি, কিন্তু লেখক মনে করেছেন যে, কথাটা বলা হয়েছে। এ কথাটা ঠিক। আমিও কী ঘটেছিল তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছি না। বাইবেল নামক পুস্তকে কী লেখা আছে সেটা নিয়ে আমার দ্বিমত। আর এ ব্যাখ্যার মাধ্যমে মেনে নেওয়া হচ্ছে যে, যা লেখা আছে তা ভুল। এখানে মূল বিষয়, বিদ্যমান বাইবেলটা ভুল। কিন্তু এ সকল ব্যাখ্যা বিষয়টাকে ভুল খাতে নেওয়ার একটা মজাদার পদ্ধতি। ...’’[1]

এভাবে আমরা দেখছি যে, সকল ব্যাখ্যাতেই মূলত মেনে নেওয়া হচ্ছে যে, বর্তমানে বিদ্যমান বাইবেলের মধ্যে নিম্নরূপ ভুলভ্রান্তি বিদ্যমান: (১) লিপিকাররা না বুঝে অনেক ভুল শব্দ ও বাক্য বাইবেলের মধ্যে সংযোজন করেছেন এবং বাইবেলের অনেক শব্দ বা বাক্য বিয়োজন করেছেন। আর যেভাবেই হোক সকল পাণ্ডুলিপিতেই সে ভুলগুলো প্রবেশ করেছে। (২) একটা কথা বলার জন্য এমন একটা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা সঠিক নয়, ফলে কথাটা ভুল অর্থ প্রকাশ করছে। এজন্য এর এমন একটা রূপক করতে হচ্ছে যা কোনোভাবেই মূলপাঠ থেকে বুঝা যাচ্ছে না। অথবা মূল বক্তব্যের সাথে অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা ও অজুহাত সংযোজন করা ছাড়া ভুলটা দূর করা যাচ্ছে না। জিম মেরিট (Jim Meritt)-এর লেখা ‘বাইবেলীয় বৈপরীত্যের একটা তালিকা’ (A List of Biblical Contradictions)-র সম্পাদক বৈপরীত্যের বিষয়ে ভিন্নমত ও ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন:

“It should be kept in mind, however, that a perfect, omnipotent, and omniscient god would reasonably be expected to have done a better job of it than the Bible had such a god inspired a book.” ‘‘সর্বাবস্থায় এ কথা মনে রাখা উচিত যে, সকল পূর্ণতার অধিকারী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ ঈশ্বর থেকে যৌক্তিকভাবেই প্রত্যাশিত ছিল যে, ঈশ্বরের প্রেরণালব্ধ পুস্তক হিসেবে বাইবেল যে মানের তার চেয়ে ভাল মানের একটা কর্ম তিনি উপহার দিবেন।’’[2]

বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি (Gary DeVaney) বলেন:

Symptomatically, when debating the Bible, some can not or will not stay on topic, chapter and verse. Some tend to explain things with unrelated, irrelevant, and feel-good idealism or they will preach, by intimidation, to soul-save. Some, when they are at a complete loss, tend to fall back on faith, which often comes across to others as non-sense. For the finale, their departing shot usually consists of a voodoo-type curse or warning. Insults and curses are sometimes used by those with the weaker debating skills.

‘‘একটা পরিচিত উপসর্গ বা লক্ষণ হচ্ছে, যখন বাইবেল নিয়ে বিতর্ক হয় তখন কেউ কেউ অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত বিষয়বস্ত্তর উপরে স্থির থাকতে পারেন না বা থাকতে চান না। কেউ কেউ সম্পর্কহীন, অপ্রাসঙ্গিক এবং সুধারণার আদর্শবাদিতা নির্ভর ব্যাখ্যা বা অজুহাত দিতে থাকেন। অথবা তারা (নরকের) ভয় দেখিয়ে ‘নরক থেকে নিজেকে রক্ষা করার’ জন্য প্রতিপক্ষকে নসিহত শুরু করেন। কেউ কেউ যখন একেবারে লা-জওয়াব হয়ে যান তখন বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতে চান। প্রায়ই অন্যদের কাছে তা নির্বোধ বাগাড়ম্বর বলেই প্রতীয়মান হয়। শেষ পর্যায়ে তাদের শেষ আক্রমণ সাধারণ জাদুকরের অভিশাপ বা সতর্কীকরণের মত কিছু কথা দিয়ে শেষ হয়। বিতর্ক দক্ষতায় দুর্বলরা অনেক সময় অবমাননা ও অভিশাপ ব্যবহার করেন।’’[3]

[1] http://infidels.org/library/modern/jim_meritt/bible-contradictions.html
[2] http://infidels.org/library/modern/jim_meritt/bible-contradictions.html
[3] http://www.thegodmurders.com/id90.html