যীশু পিতরকে বলেন: ‘‘আর আমিও তোমাকে বলছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরে আমি আমার মন্ডলী গাঁথবো, আর পাতালের (নরকের) ফটকগুলো তার বিপক্ষে প্রবল হবে না। আমি তোমাকে বেহেশতীরাজ্যের চাবিগুলো দেব; আর তুমি দুনিয়াতে যা কিছু বাঁধবে, তা বেহেশতে বেঁধে রাখা হবে এবং দুনিয়াতে যা কিছু মুক্ত করবে, তা বেহেশতে মুক্ত হবে।’’ (মথি ১৬/১৮-১৯: মো.-১৩)
কিন্তু এরপরেই যীশু পিতরকে ‘শয়তান’ বলে আখ্যায়িত করেন। মথি লেখেছেন যে, উপরের কথার পরে যীশু শিষ্যদেরকে বললেন তাঁকে ইহুদিদের হাতে কষ্ট পেয়ে মরতে হবে এবং ‘‘তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। তখন পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে অনুযোগ করে বললেন, হুজুর, এ দূর হোক। আপনার উপর কখনও এমন হবে না। ঈসা ফিরে পিতরকে বললেন, আমার কাছ থেকে দূর হও, শয়তান। তুমি আমার পথের বাধা। যা আল্লাহর তা তুমি ভাবছ না কিন্তু যা মানুষের তা-ই ভাবছ।’’ (মথি ১৬/২১-২৩: কি. মো.-০৬। পুনশ্চ: মার্ক ৮/৩১-৩৩)
এখানে কয়েকটা বিষয় লক্ষণীয়:
(ক) বাইবেল বলছে, পিতর যীশুকে একপাশে ডেকে নিয়ে ‘অনুযোগ’ করলেন। এখানে মূল ইংরেজি ‘rebuke’ যার অর্থ তিরস্কার করা বা ভৎর্সনা করা। একপাশে ডেকে নেওয়া থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সবার সামনে বলা যায় না এরূপ কোনো অশোভন তিরস্কারের জন্যই তাঁকে একপাশে নিয়ে যান। বিষয়টা দুর্বোধ্য! যীশুর শিষ্যরা কি যীশুকে তিরস্কার করতেন? আর এরূপ একজন শিষ্যকে যীশু সকল ক্ষমতা প্রদান করলেন? এ শিষ্য থেকে উত্তম আর কেউ ছিল না?
(খ) এখানে আমরা দেখছি যে, যীশু প্রথমে পিতরকে স্বর্গরাজ্যের চাবি দেওয়ার ওয়াদা করলেন। এরপর তাকে শয়তান হিসেবে তাড়িয়ে দিলেন। তাঁর কোন নির্দেশনাটা কার্যকর হবে? প্রথমটা না পরেরটা?
(গ) বাইবেলেই পিতরকে দোষী ও নিন্দিত (blamed) এবং শঠতা বা প্রতারণা (dissemble) এবং মুনাফিকী বা কপটতায় (dissimulation) লিপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে (গালাতীয় ২/১১-১৩। আরো দেখুন প্রেরিত ৪/১৩; লূক২২/৫৪-৬০; মথি ১৬/২৩ ) এরূপ চরিত্রের একজন মানুষ কি স্বর্গরাজ্যের মালিকানা লাভ করবেন? যাকে যীশু নিজেই ‘শয়তান’ বলছেন, সে শয়তান কি এতই শক্তিশালী যে, বেহেশতীরাজ্যের চাবিগুলো শেষ পর্যন্ত তার হাতেই চলে গেল?