পবিত্র বাইবেলে কোথাও সাপের মত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কোথাও সাপের মত হওয়াকে নিন্দনীয় বলা হয়েছে। শত্রুদের মাঝে সতর্ক হওয়ার উপদেশ দিয়ে যীশু বলেছেন: ‘‘be ye therefore wise as serpents, and harmless as doves: তোমরা সাপের মত জ্ঞানী-বিচক্ষণ এবং কবুতরের মত নিরীহ হও।’’ কেরির অনুবাদ: ‘‘তোমরা সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক হও।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘সাপের মত সতর্ক ও কবুতরের মত সরল হও।’’ (মথি ১০/১৬)
সতর্কতার উপদেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ জন্য ‘সাপের মত হও’ বলা বাইবেলের অন্যান্য বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। সাপকে বাইবেলে ধূর্ত, খল বা চালাক বলে নিন্দা করা হয়েছে। ‘‘সদাপ্রভু ঈশ্বর নির্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্ব সর্বাপেক্ষা খল ছিল।’’ জুবিলী: ‘‘প্রভু পরমেশ্বর যে সমস্ত বন্যজন্তু নির্মাণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাপই ছিল সবচেয়ে ধূর্ত।’’ কি. মো.-২০০৬: ‘‘মাবুদ আল্লাহর তৈরি ভূমির জীবজন্তুদের মধ্যে সাপ ছিল সবচেয়ে চালাক।’’ (আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ৩/১)
বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে সাপ শয়তানেরই প্রতিরূপ এবং ফল ভক্ষণের মাধ্যমে মানুষের পতনের জন্য মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল সাপ (আদিপুস্তক ৩য় অধ্যায়)। আর খ্রিষ্টানদেরকে এরূপ নিন্দনীয় খল, ধূর্ত বা চালাক প্রাণির মত জ্ঞানী বা বিচক্ষণ (wise) হওয়ার শিক্ষা দেওয়া অশোভনীয় ও বাইবেলের অন্যান্য বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক।
আরো একটা বিষয় লক্ষণীয়। মথি ২৩ অধ্যায়ে স্বয়ং যীশু ইহুদিদের নিন্দা করে তাদেরকে ‘সাপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন: ‘‘ভণ্ড আলেম ও ফরীশীরা, ঘৃণ্য আপনারা, ... সাপের দল ও সাপের বংশধরেরা (Ye serpents, ye generation of vipers)! কেমন করে আপনারা দোজখের আজাব থেকে রক্ষা পাবেন?’’ (মথি ২৩/১৩, ৩৩)।
এখানে যীশু সর্বোচ্চ নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য বুঝানোর জন্য ইহুদি আলেমদেরকে ‘সাপের’ সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু উপরের নির্দেশে তিনি শিষ্য ও বিশ্বাসীদেরকে ‘সাপের’ মত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাহ্যত বিষয়টা সাংঘর্ষিক।