বাইবেলে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর ‘মুখাপেক্ষা’ বা পক্ষপাতিত্ব করেন না। কিন্তু অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছে যে, তিনি পক্ষপাতিত্ব করেন।
পক্ষপাতিত্ব না করার বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘‘কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ঈশ্বরগণের ঈশ্বর ও প্রভুদের প্রভু, তিনিই মহান, বীর্যবান ও ভয়ঙ্কর (terrible) ঈশ্বর, তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা (ব্যক্তিবিচার বা পক্ষপাতিত্ব: regardeth not persons) করেন না, ও উৎকোচ গ্রহণ করেন না।’’ কি. মো.-১৩: ‘‘কেননা তোমাদের আল্লাহ মাবুদই দেবতাদের আল্লাহ ও প্রভুদের প্রভু, তিনিই মহান, শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর আল্লাহ; তিনি কারো মুখাপেক্ষা ও ঘুষ গ্রহণ করেন না।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ১০/১৭)
অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘‘ঈশ্বর মুখাপেক্ষা (পক্ষপাতিত্ব, ব্যক্তি বিচার: RSV: partiality, KJV: respecter of persons) করেন না’’ (প্রেরিত ১০/৩৪)।
আরো বলা হয়েছে: ‘‘ঈশ্বরের কাছে মুখাপেক্ষা নাই।’’ কি. মে.-১৩: ‘‘ কেননা আল্লাহ কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না।’’ (রোমীয় ২/১১)
এর বিপরীতে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় যে, ঈশ্বর ভয়ঙ্কর পক্ষপাতিত্ব করেন। কোনোরূপ বিশ্বাস, কর্ম বা কারণ ছাড়াই জন্মের আগে থেকেই কাউকে ভালবাসেন এবং কাউকে ঘৃণা করেন। যাকে ভালবাসেন তার প্রতারণাকে মেনে নিয়ে পুরস্কার দেন এবং যাকে ঘৃণা করেন তাকে কোনো দোষ ছাড়াই শাস্তি দেন। একটা নমুনা ইসহাকের বড় ছেলে এষৌ/ ইস্ (Esau) এবং যাকোব/ ইয়াকুব (Jacob)। কোনো কারণ ছাড়াই ঈশ্বর ছোট ছেলে যাকোবকে ভালবাসেন ও বড় ছেলে এষৌকে ঘৃণা করেন। জন্মের পূর্বেই ঈশ্বর ইসহাককে বলেন: ‘‘জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠের দাস (গোলাম) হইবে।’’ (আদিপুস্তক ২৫/২৩)। অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘‘সদাপ্রভু কহেন, এষে (ইস) কি যাকোবের (ইয়াকুবের) ভ্রাতা নয়? তথাপি আমি যাকোবকে প্রেম করিয়াছি; কিন্তু এষৌকে অপ্রেম (ঘৃণা: I hated Esau) করিয়াছি, তাহার পর্বতগণকে ধ্বংসস্থান করিয়াছি, ও তাহার অধিকার প্রান্তরস্থ শৃগালদের বাসস্থান করিয়াছি।’’ (মালাখি ১/২-৩)
এভাবে কোনোরূপ ভাল বা মন্দ কর্ম করার আগেই ঈশ্বর যাকোবকে ভালবাসলেন ও এষৌকে ঘৃণা করলেন: ‘‘যখন সন্তানেরা ভূমিষ্ঠ হয় নাই, এবং ভাল মন্দ কিছুই করে নাই (For the children being not yet born, neither having done any good or evil), তখন- ঈশ্বরের নির্বাচনানুরূপ সঙ্কল্প যেন স্থির থাকে, কর্ম হেতু নয়, কিন্তু আহবানকারীর ইচ্ছা হেতু- তাঁহাকে বলা গিয়াছিল, ‘জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠের দাস হইবে’, যেমন লিখিত আছে, ‘আমি যাকোবকে প্রেম করিয়াছি, কিন্তু এষৌকে অপ্রেম (ঘৃণা: hated) করিয়াছি।’’ (রোমীয় ৯/১১-১৩)
পল বলেছেন যে, এরপ করা ঈশবরের জন্য অন্যায় নয়; কারণ তিনি যাকে ইচ্ছা করুণা করেন (রোমীয় ৯/১৪)। বস্ত্তত, ঈশ্বর যাকে ইচ্ছা তার বিশ্বাস বা কর্মের অতিরিক্ত পুরস্কার দিলে বা করুণা করলে তা পক্ষপাতিত্ব নয়। তবে কাউকে কোনো অন্যায় ছাড়া ঘৃণা করলে তা সন্দেহাতীতভাবেই পক্ষপাতিত্ব। বাইবেলের বর্ণনায় এ পক্ষপাতিত্ব ঘোরতর। এ বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে পাঠক জানবেন যে, ভালমন্দ কর্মের বিচারে এষৌ সৎ ও যাকোব প্রতারক। কিন্তু প্রতারককে শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, ঈশ্বর ঘোষণা দিলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই তিনি এষৌকে ঘৃণা করলেন এবং তাকে ও তার বংশধরদেরকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দিলেন। পক্ষান্তরে প্রতারক ও অপরাধী যাকোবকে প্রেম করলেন। এর চেয়ে বড় পক্ষপাতিত্ব আর কী হতে পারে?
এরূপ একটা পক্ষপাতিত্ব কাউকে দয়া করা এবং কাউকে অন্যের অপরাধে শাস্তি দেওয়া: ‘‘তুমি সহস্র (পুরুষ) পর্যন্ত দয়াকারী; আর পিতৃপুরুষদের অপরাধের প্রতিফল তাহাদের পশ্চাদ্বর্তী সন্তানদের ক্রোড়ে দিয়া থাক।’’ (যিরমিয় ৩২/১৮)