প্রচলিত খ্রিষ্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও নতুন নিয়মের অধিকাংশ পুস্তকের রচয়িতা শৌল বা সাধু পল সম্পর্কে আমরা আগেও জেনেছি। তিনি যীশু খ্রিষ্টের সমসাময়িক ছিলেন, কিন্তু কখনো যীশুকে দেখেন নি। যীশুর তিরোধানের পর তাঁর শিষ্যরা যখন ফিলিস্তিন ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় বসবাসরত ইহুদিদের মধ্যে যীশুর ধর্ম প্রচার করছিলেন তখন হঠাৎ করেই মঞ্চে তাঁর আবির্ভাব। তিনি দাবি করেন যে, তিনি নবদীক্ষিত খ্রিষ্টানদের নির্যাতন করতেন এবং দামেশকের খ্রিষ্টানদের শাস্তি প্রদানের জন্য গমনের পথে তিনি যীশুর দর্শন লাভ করেন এবং পৌল বা পল নাম ধারণ করে ‘অ-ইহুদিদের’ মধ্যে খ্রিষ্টানধর্ম প্রচার শুরু করেন। সাধু পলের যীশুর দর্শন লাভের ঘটনাটা প্রেরিতদের কার্য-বিবরণ-এর ৯, ২২ ও ২৬ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। পাঠক ভাল করে পড়লে তিন স্থানের বর্ণনার মধ্যে ১০টা বৈপরীত্য দেখবেন। এখানে মাত্র তিনটা দিক উল্লেখ করছি।
প্রথম দিক: ৯ম অধ্যায়ের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, দামেশক যাওয়ার পথে শৌল যখন আকাশ থেকে আলোক দেখলেন ও যীশুর কথা শুনতে পেলেন, তখন শৌলের সহযাত্রীরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং যীশুর কথা শুনতে পাচ্ছিলেন: ‘‘আর তাঁর সহপথিকেরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, তারা ঐ বাণী শুনলো বটে, কিন্তু কাউকেও দেখতে পেল না।’’ (প্রেরিত ৯/৭, মো.-১৩)
কিন্তু ২২ অধ্যায় বলছে, তারা কোনো কথা শুনেননি, কিন্তু আলো দেখেন: ‘‘আর যারা আমার সঙ্গে ছিল, তারা সেই আলো দেখতে পেল বটে, কিন্তু যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তাঁর বাণী শুনতে পেল না।’’ (প্রেরিত ২২/৯, মো.-১৩)
‘তাহারা ঐ বাণী শুনলো’ এবং ‘বাণী শুনতে পেল না’ পরস্পর সাংঘর্ষিক।
দ্বিতীয় দিক: ৯ম অধ্যায়ে যীশু পলকে বলেন: ‘‘কিন্তু উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে, তাহা বলা যাইবে।’’ (প্রেরিত ৯/৬) ২২শ অধ্যায়ের বক্তব্য: ‘‘প্রভু আমাকে কহিলেন, উঠিয়া দামেশকে যাও, তোমাকে যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে।’’ (প্রেরিত ২২/১০)
২৬শ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘কিন্তু উঠ, তোমার পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াও, তুমি যে যে বিষয়ে আমাকে দেখিয়াছ এবং যে যে বিষয়ে আমি তোমাকে দর্শন দিব, সেই সকল বিষয়ে যেন তোমাকে সেবক ও সাক্ষী নিযুক্ত করি, সেই অভিপ্রায়ে তোমাকে দর্শন দিলাম। আমি যাহাদের নিকটে তোমাকে প্রেরণ করিতেছি, সেই প্রজালোকদের ও পরজাতীয় লোকদের হইতে তোমাকে উদ্ধার করিব, যেন তুমি তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দাও, যেন তাহারা অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি, এবং শয়তানের কর্তৃত্ব হইতে ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, যেন আমাতে বিশ্বাস করণ দ্বারা পাপের মোচন ও পবিত্রীকৃত লোকেদের মধ্যে অধিকার প্রাপ্ত হয়।’’ (প্রেরিত ২৬/১৬-১৮)
তাহলে প্রথম দু বক্তব্য অনুসারে পলকে ওয়াদা করা হয়েছিল যে, নগরে পৌঁছানোর পরে তাকে তার করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানানো হবে। আর শেষ অধ্যায় থেকে জানা গেল যে, তাকে নগরে পৌঁছানোর পরে কিছু জানানোর ওয়াদা করা হয়নি; উপরন্তু এ স্থানেই তাকে তার করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়েছিল।
তৃতীয় দিক: ৯ অধ্যায় অনুসারে শৌল যখন আকাশ থেকে আলোক দেখলেন ও যীশুর কথা শুনতে পেলেন, তখন শৌলের সহযাত্রীরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন: ‘‘আর তাঁর সহপথিকেরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো’’। (প্রেরিত ৯/৭, মো.-১৩)
কিন্তু ২৬ অধ্যায় বলছে, তার সহযাত্রীরা ভূমিতে পড়ে ছিলেন: ‘‘তখন আমরা সকলে ভূমিতে পড়ে গেলে আমি একটি বাণী শুনলাম।’’ (প্রেরিত ২৬/১৪, মো.-১৩)