(ক) মথির বর্ণনা অনুসারে যীশু মোট তের জনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। প্রথমে দুই মরিয়মকে। পরে গালীলে ‘সেই এগারোজনকে’ (মথি ২৮/৯ ও ১৬)
(খ) মার্কের বর্ণনায় তিনি ১২ বা ১৪ জনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। প্রথমে মগ্দলীনী মরিয়ম, পরে দুজন শিষ্য এবং এরপর ‘তাঁর এগারোজন শিষ্যকে’ দেখা দিলেন। বাহ্যত এ দুজনও এগারজনের অন্তর্ভূক্ত। এভাবে আমরা দেখছি যে, তিনি এগারজন ও মরিয়মকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। আর এ দুজনকে এগারজনের বাইরে গণ্য করলে দর্শনপ্রাপ্তদের সংখ্যা হয় ১৪ জন। (মার্ক ১৬/৯, ১২, ১৪)
(গ) লূকের বর্ণনা অনুসারে যীশু ১৫/২০ জন মানুষকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। প্রথমে তিনি পথ চলতে ক্লিয়পা ও অন্য একজনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। ‘‘সেই দু’জন উঠে যিরূশালেমে গেলেন এবং সেই এগারোজন শিষ্য ও তাঁদের সংগে অন্যদেরও এক জায়গায় দেখতে পেলেন। ... সেই শিষ্যরা যখন এই কথা বলছিলেন তখন যীশু নিজে তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে...।’’ (লূক ২৪/৩৩-৩৬: বাইবেল-২০০০)
‘তাঁদের সংগে অন্যরা’ কতজন ছিলেন আমরা জানতে পারছি না। তবে ইঞ্জিলের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে আমরা দেখেছি যে, সে সময়ে শিষ্যরা ইহুদিদের ভয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলেন। এজন্য বাহ্যত তারা কোনো ঘরের মধ্যে সীমিত পরিসরে সীমিত সংখ্যক মানুষ ছিলেন। এভাবে আমরা দেখছি যে, এগারজন শিষ্য ও আরো কয়েকজন ভক্তকে যীশু দেখা দেন।
(ঘ) যোহনের বর্ণনা অনুসারে যীশু ১২ জনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। প্রথমে তিনি মগ্দলীনী মরিয়মকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। পরের তিন বারই তিনি তাঁর এগার শিষ্যের কয়েকজনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। আমরা দেখছি যে, প্রেরিতদের কার্যবিবরণী পুস্তকের বর্ণনার সাথে যোহনের বর্ণনার মিল আছে। প্রেরিত পুস্তকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তিনি শুধু প্রেরিতদের সাথেই সাক্ষাৎ করেন। তবে যোহনের সাথে ‘প্রেরিত’ পুস্তকের অমিল হল মগ্দলীনী মরিয়মের সাথে সাক্ষাৎ। যোহনের বর্ণনায় যীশু প্রথমে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। আর ‘প্রেরিত’ পুস্তকের বর্ণনায় যীশু এগারজন প্রেরিত ছাড়া কোনো মহিলা বা পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করেননি।
(ঙ) পল ভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর বর্ণনায় যীশু প্রেরিতগণ ছাড়াও ‘‘একই সময়ে পাঁচশোর বেশী ভাইদের দেখা দিয়েছিলেন।’’ (১ করিন্থীয় ১৫/৪-৬)
সম্মানিত পাঠক, যীশুর সাক্ষাৎ বিষয়ক এ সকল বৈপরীত্যের মধ্যে কোনোরূপ সমন্বয় সম্ভব নয়। হয়ত কোনো বিশ্বাসী ভক্ত পাঠক এ বলে নিজের মনকে সান্তবনা দিবেন যে, হয়ত যীশু সবাইকেই দেখা দিয়েছিলেন, তবে ইঞ্জিল লেখকরা ভুলক্রমে কিছু ঘটনা বাদ দিয়েছেন। তার এ চিন্তা সঠিক নয়। কারণ:
(১) পবিত্র আত্মার প্রেরণায় লেখা পুস্তকের এমন ভুল হওয়ার কথা চিন্তা করাও পবিত্র আত্মার জন্য অবমাননাকর। এমনকি কোনো মানবীয় কর্মের ক্ষেত্রে এরূপ চিন্তা উক্ত লেখকের অযোগ্যতা নিশ্চিত করে। বিশেষত যীশুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনা বর্ণনায় এরূপ ভুল কল্পনা করা যায় না।
(২) ইঞ্জিলগুলোর বর্ণনার আলোকে এরূপ সমন্বয় আদৌ সম্ভব নয়। মথির বর্ণনা নিশ্চিত প্রমাণ করে যে, দুবারে ১৩ জনের বেশি তিনি কাউকে সাক্ষাৎ প্রদান করেননি। দ্বিতীয় বারের সাক্ষাতের পরেই তিনি স্বর্গে চলে যান। আর কেউ একাধিকবার তাঁকে দেখেন নি। এজন্য দ্বিতীয় বারের সাক্ষাতের সময় কেউ কেউ কেউ সন্দেহ করছিলেন। মার্কের বর্ণনায়ও আমরা নিশ্চিত যে যীশু তিনবারে ১২ বা ১৪ জনকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন এবং সেদিনেই স্বর্গে চলে যান। লূকের বর্ণনায় যীশু পুনরুত্থানের দিনে তিনবারে ২০/২৫ জন শিষ্যকে সাক্ষাৎ দিয়ে সেদিনেই স্বর্গে চলে যান। উপরের তিন বর্ণনার মধ্যে সমন্বয়ের কোনো উপায় নেই। একটাকে সঠিক বললে অন্যটাকে ভুল বলতেই হবে।
যোহন ও পলের বর্ণনা সকলের সাথেই সাংঘর্ষিক। যোহনের বর্ণনায় যীশু পুনরুত্থানের দিনে, তার এক সপ্তা পরে এবং আরো কিছু দিন পরে শুধু তার প্রেরিতগণকেই সাক্ষাৎ দেন। আর পলের বর্ণনায় তিনি পিতর, প্রেরিতগণ ও পাঁচশতাধিক ভাইকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন।