মথি (২৭/৫৫-৫৬, মো.-১৩): ‘‘অনেক স্ত্রীলোকও সেখানে দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। ঈসার সেবা করবার জন্য তাঁরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়াম, ইয়াকুব ও ইউসুফের মা মরিয়ম এবং সিবিদিয়ের ছেলে ইয়াকুব ও ইউহোন্নার (যাকোব ও যোহনের) মা।’’
মার্ক (১৫/৪০-৪১, মো.-১৩): ‘‘কয়েকজন স্ত্রীলোক দূরে দাঁড়িয়ে এই সব দেখছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, দুই ইয়াকুবের মধ্যে ছোট ইয়াকুব ও ইউসুফের মা মরিয়ম ও শালোমী। ঈসা যখন গালীলে ছিলেন তখন এই স্ত্রীলোকেরা তাঁর সংগে সব জায়গায় যেতেন এবং তাঁর সেবা করতেন। আরও অনেক স্ত্রীলোক, যাঁরা যীশুর সংগে সংগে জেরুজালেমে এসেছিলেন, তাঁরাও সেখানে ছিলেন।’’
লূক (২৩/৪৯, মো.-১৩): ‘‘যাঁরা ঈসাকে চিনতেন এবং যে স্ত্রীলোকেরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন তাঁরা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন।’’
ইউহোন্না (১৯/২৫-২৭, মো.-১৩): ‘‘আর ঈসার ক্রুশের কাছে তাঁর মা ও তাঁর মায়ের বোন, ক্লোপার (স্ত্রী) মরিয়ম এবং মগ্দলিনী মরিয়ম, এঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। ঈসা তাঁর মাকে দেখে এবং যাঁকে মহববত করতেন, সেই সাহাবী কাছে দাঁড়িয়ে আছেন দেখে মাকে বললেন, হে নারী, ঐ দেখ, তোমার পুত্র (Woman, behold thy son!)। পরে তিনি সেই সাহাবীকে বললেন, ঐ দেখ তোমার মা (Behold thy mother!)। তাতে সেই সময় থেকে ঐ সাহাবী তাঁকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
সম্মানিত পাঠক, এখানে আমরা দুটো বৈপরীত্য দেখছি: (১) উপস্থিতদের নামের বর্ণনায় এবং (২) উপস্থিতদের অবস্থানের বর্ণনায়।
মথি ও মার্ক উল্লেখ করেছেন যে, আরো অনেক মহিলা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা নাম উল্লেখের সময় যীশুর মাতার নাম লেখেননি। মগ্দলীনী মরিয়ম এবং ইয়াকুব ও ইউসুফের মাতা মরিয়মের চেয়ে ঈসার মাতা মরিয়ম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অথচ তাঁরা দু’জনের কেউ তাঁর নাম লেখেননি। তবে এর চেয়েও অধিক বৈপরীত্য অবস্থানের বিষয়ে। প্রথম তিন ইঞ্জিল লেখক একমত যে এ সকল মহিলা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কিন্তু যোহন বলছেন যে, এরা ক্রুশের পাশে এত কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন যে, যীশু তাঁদের সাথে কথাও বললেন।
এখানে আরো একটা বিষয় লক্ষণীয়। জীবনের শেষ মুহূর্তেও যীশু তাঁর মাকে ‘ওহে নারী’ বলে সম্বোধন করছেন! আম্মা, মাতা, বা অন্য কোনো সম্মানপ্রদর্শন মূলক সম্বোধন তাঁকে করছেন না। প্রচলিত ইঞ্জিলগুলোর কয়েক স্থানে আমরা দেখি যে, যীশু তাঁর মাতাকে ‘ওহে নারী’ বা ‘ওহে মহিলা!’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং তুচ্ছ করেছেন। (যোহন ২/৪, মথি ১২/৪৬-৫০; মার্ক ৩/৩১-৩৫; লূক ৮/১৯-২১)
বিশ্বাসের নৌকা পাহাড়ের উপর দিয়েও চলতে পারে! তবে বিবেক ও বিবেচনা দিয়ে অধ্যয়ন করলে আমরা বলতে বাধ্য হই যে, ইঞ্জিল লেখকরা যেভাবে যীশুকে চিত্রিত করেছেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল কারো জন্য তা বিশ্বাস করা কঠিন।
সম্ভবত এ সম্বোধনের অশোভনতা অনুভব করে বাংলা বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ সংস্করণে যীশুর এ সম্বোধন থেকে ‘ওহে নারি’ (Woman) কথাটা ফেলে দিয়ে বলা হয়েছে: ‘‘প্রথমে তিনি মাকে বললেন, ঐ দেখ তোমার ছেলে।’’
বাইবেলের শেষ পুস্তকের শেষে বলা হয়েছে যে, পবিত্র পুস্তকের একটা শব্দও যদি কেউ বাদ দেয় তবে সে অনন্ত জীবন ও মুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়বে (প্রকাশিত কালাম/ প্রকাশিত বাক্য ২২/১৯) । আমরা জানি না, এভাবে একটা কথা বাদ দেওয়াতে অনুবাদকরা এ অভিশাপের অন্তর্ভুক্ত হবেন কিনা? তবে এতে অন্তত যীশুর নামে কথিত একটা অশোভন কথা গোপন করা সম্ভব হয়েছে।