পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৬. ১৭. ক্রুশে চড়ানোর সময় বর্ণনায় বৈপরীত্য

যীশুর ক্রুশের সময় বর্ণনাতেও বৈপরীত্য! যীশুর সময়ের ইহুদি সমাজে সূর্যাস্ত থেকে দিন গণনা শুরু হত। অর্থাৎ শুক্রবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শনিবার শুরু এবং পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত শনিবার। রাত এবং দিনকে ১২ ঘণ্টায় ভাগ করা হত। রাতের প্রথম ঘণ্টা বর্তমান হিসেবে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হত এবং দিনের প্রথম ঘণ্টা বর্তমান হিসেবে সকাল ৬টায় শুরু হত। প্রথম তিন ইঞ্জিল থেকে বুঝা যায় যে, বেলা ১২টার সময় যীশু ক্রুশের উপর ছিলেন। আর যোহন থেকে বুঝা যায় যে, বেলা ১২টার সময় যীশু পীলাতের দরবারে। (মথি ২৭/৪৫; মার্ক ১৫/৩৩; লূক ২৩/৪৪; যোহন ১৯/১৪-১৬)

মার্ক লেখেছেন, ‘‘তৃতীয় ঘটিকার সময় তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিল (And it was the third hour, and they crucified him.)।... পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল (And when the sixth hour was come, there was darkness over the whole land until the ninth hour)। আর নয় ঘটিকার সময়ে যীশু উচ্চরবে ডাকিয়া কহিলেন, এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী... পরে যীশু উচ্চ রব ছাড়িয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।’’ (মার্ক ১৫/২৫-৩৬)

আমরা দেখেছি যে, তৃতীয় ঘটিকা অর্থ বর্তমান হিসেবে সকাল নয়টা, ছয় ঘটিকা অর্থ দুপুর বারটা এবং নয় ঘটিকা অর্থ বিকাল তিনটা। পবিত্র বাইবেল-২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬-এর অনুবাদ নিম্নরূপ: ‘‘সকাল ন’টার সময় তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিল। ... পরে দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার হয়ে রইল। বেলা তিনটার সময় যীশু জোরে চিৎকার করে বললেন...।’’

যোহন লেখেছেন: ‘‘এই কথা শুনিয়া পীলাত যীশুকে বাহিরে আনিলেন, এবং শিলাস্তরণ নামক স্থানে বিচারাসনে বসিলেন... সেই দিন নিস্তার পর্বের আয়োজন দিন। বেলা অনুমান ছয় ঘটিকা (And it was the preparation of the passover, and about the sixth hour) ... তখন তিনি যীশুকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়। (যোহন ১৯/১৩-১৬)

বেলা ছয় ঘটিকা অর্থ বর্তমান হিসাবে দুপুর ১২টা। পবিত্র বাইবেল-২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তখন বেলা প্রায় দুপুর।’’

বিষয়টা বড়ই জটিল! পবিত্র পুস্তকের এক বক্তব্যে বেলা নয়টা থেকে যীশু ক্রুশে ঝুলছিলেন। বেলা ১২ টার সময় সারা দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন! আবার পবিত্র পুস্তকের অন্য বক্তব্যে বেলা বারটায় যীশু পীলাতের দরবারে ছিলেন। কোনো অন্ধকারই তখন ছিল না। আলোকিত বিচার সভায় পীলাত যীশুর বিচার শুরু করলেন! আশা করি পাঠক আমাদের সাথে একমত যে, দুটো তথ্য সত্য হতে পারে না। দুটোর একটা অথবা দুটোই অসত্য।