ইঞ্জিলগুলোতে বলা হয়েছে যে, যীশুর গ্রেফতারের সময় তাঁর প্রধান সাহাবী পিতর গ্রেফতারের ভয়ে তিনবার যীশুর সাথে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন এবং গালি দিয়ে শপথ করে বলেন যে, তিনি যীশুকে চিনেন না। কিন্তু এ অস্বীকৃতির বিস্তারিত বর্ণনায় সুসমাচার লেখকরা ৮ ভাবে পরস্পর বিরোধী বিবরণ প্রদান করেছেন (মথি ২৬/৬৯-৭৫; মার্ক ১৪/৬৬-৭২; লূক ২২/৫৫-৬২; যোহন ১৮/১৬-১৮ ও ২৫-২৭)।
প্রথম বিষয়: পিতরকে চিনতে পেরে তাকে যীশুর শিষ্য বলে দাবি করেছিলেন কে তার বর্ণনায় বৈপরীত্য রয়েছে। মথি ও মার্ক লেখেছেন যে, দু’ জন দাসী ও উপস্থিত লোকজন তাকে যীশুর শিষ্য বলে দাবি করেন। পক্ষান্তরে লূকের বর্ণনা অনুসারে প্রথমে একজন দাসী, এরপর এক পুরুষ এবং তারপর আরেক পুরুষ তাকে যীশুশিষ্য বলে দাবি করেন।
মথি ও মার্কের বিবরণ কাছাকাছি হলেও উভয়ের মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে। মথি স্পষ্ট লেখেছেন যে, দু’বারে দু’জন দাসী তাকে চিনতে পারে। কিন্তু মার্কের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, একই দাসী দু’বার এবং তৃতীয়বার উপস্থিত লোকজন তাকে যীশুশিষ্য বলে দাবি করেন। যোহনের বর্ণনা আরো বিপরীত। তাঁর বর্ণনায় প্রথমে একজন দাসী, এরপর উপস্থিত লোকেরা এবং সর্বশেষ পিতর যার কান কেটেছিলেন তার এক কুটুম্ব তাকে যীশুশিষ্য বলে দাবি করেন।
দ্বিতীয় বিষয়: প্রথম দাসী যখন পিতরকে চিনতে পেরে তাকে যীশুর শিষ্য বলে দাবি করেন তখন পিতর কোথায় অবস্থান করছিলেন তার বর্ণনায় বৈপরীত্য রয়েছে। মথি লেখেছেন যে, সে সময়ে পিতর ‘বাহিরে প্রাঙ্গনে বসিয়াছিলেন (sat without in the palace)।’ আর লূকের বর্ণনা অনুসারে তিনি তখন ‘প্রাঙ্গনের মধ্যে আগুন পোহাচ্ছিলেন’ (in the midst of the hall)। মার্কের বর্ণনা অনুসারে তিনি তখন ‘নীচে প্রাঙ্গনে ছিলেন (beneath in the palace)।’ যোহনের বর্ণনা অনুসারে তিনি তখন ‘বাড়ির ভিতরে’ (in the court) ছিলেন।
তৃতীয় বিষয়: পিতরকে কী বলে প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল তার বর্ণনায় বৈপরীত্য রয়েছে।
চতুর্থ বিষয়: কুঁকড়া বা মোরগের ডাকের বিবরণে বৈপরীত্য রয়েছে। মথি, লূক ও যোহনের বর্ণনা অনুসারে পিতর তিনবার যীশুকে অস্বীকার করার পরে কুঁকড়া (মোরগ) ডেকে ওঠে। আর মার্কের বর্ণনা অনুসারে পিতর একবার যীশুকে অস্বীকার করার পরে কুঁকড়া (মোরগ) ডেকে ওঠে। পরে আরো দু’বার অস্বীকার করার পরে দ্বিতীয়বার কুঁকড়া ডেকে ওঠে।
পঞ্চম বিষয়: এ বিষয়ে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী কি ছিল তার বর্ণনায় বৈপরীত্য রয়েছে। মথি ও লূকের বর্ণনায় যীশু পিতরকে বলেন: ‘কুঁকড়া ডাকিবার পূর্বে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করিবে।’ আর মার্কের বর্ণনা অনুসারে যীশু পিতরকে বলেন: ‘কুঁকড়া দুইবার ডাকিবার পূর্বে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করিবে।’
ষষ্ঠ বিষয়: প্রথম দাসীর প্রশ্নের উত্তরে পিতর কী বলেছিলেন তার বিবরণে বৈপরীত্য রয়েছে। মথির বর্ণনায় পিতর বলেন: ‘‘তুমি কি বলিতেছ, আমি বুঝিতে পারিলাম না।’ যোহনের বর্ণনায় পিতর শুধু বলেন: ‘‘আমি নই।’’ মার্কের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘তুমি যাহা বলিতেছ আমি তাহা জানিও না বুঝিও না।’’ লূকের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘ হে নারী, আমি তাহাকে চিনি না।’’
সপ্তম বিষয়: দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে পিতর কী বলেছিলেন তার বিবরণেও বৈপরীত্য রয়েছে। মথি লেখেছেন: ‘‘তিনি (পিতর) দিব্য করিয়া কহিলেন, আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না।’’ যোহনের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘আমি নই।’’ মার্ক লেখেছেন: ‘‘তিনি আবার অস্বীকার করলেন।’’ লূকের বর্ণনায় তিনি বলেন: ‘‘ওহে আমি নই।’’
অষ্টম বিষয়: মার্ক থেকে বুঝা যায় যে, তৃতীয় বারে যখন উপস্থিত লোকেরা তাকে যীশুর বিষয়ে প্রশ্ন করে তখন তারা বাইরে ছিলেন। আর লূকের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, তৃতীয় বারের প্রশ্নের সময় প্রশ্নকারী ও পিতর সকলেই ভিতরে ছিলেন।