ইঞ্জিলের বর্ণনায় ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা যীশুর জীবনের অন্যতম বিষয়। আমরা পৃথকভাবে ইঞ্জিলগুলোর এ বিষয়ক বৈপরীত্য আলোচনা করছি, এর ব্যাপকতা ও অস্বাভাবিকতা অনুধাবনের জন্য। পাঠক নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:
(১) খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে ইঞ্জিলগুলো পবিত্র আত্মার রচনা। আর পবিত্র আত্মার তো ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত।
(২) ইঞ্জিলগুলোকে মানবীয় কর্ম হিসেবে গণ্য করলেও এ বিষয়ক বৈপরীত্য খুবই অস্বাভাবিক। ক্রুশে মৃত্যু যীশুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। যীশু তাঁর প্রায় তিন বছরের প্রচার জীবনে শিষ্যদেরকে বারবার জানিয়েছেন যে, তাঁকে হত্যা করা হবে এবং তিন দিন পর তিনি উঠবেন। কাজেই তাঁর হাজার হাজার শিষ্য এবং বিশেষ করে ১২ সাহাবী বিষয়টা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ ও বর্ণনা করবেন বলে আশা করা অন্যায় ছিল না। কিন্তু বাস্তবে আমরা ঠিক বিপরীতটাই দেখতে পাচ্ছি।
(৩) ক্রুশে মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রিষ্টধর্মের মূল বিষয়। এ বিষয়ক বর্ণনাগুলো প্রথম যুগের খ্রিষ্টানরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করবেন বলে আশা করাও অন্যায় ছিল না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
(৪) এটা মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘটনা। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত্রিতে ইস্কোরিয়তীয় যিহূদা যীশুকে ইহুদিদের হাতে সমর্পণ করে। শুক্রবার তাঁকে ক্রুশে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ২৩/২৪ ঘণ্টার ঘটনা। প্রিয়তম গুরুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বেদনাপূর্ণ ও খ্রিষ্টধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি এ ২৩/২৪ ঘণ্টার ঘটনার বর্ণনায় নিম্নের ২৪টা অনুচ্ছেদে শতাধিক বৈপরীত্য আমরা দেখব। বিষয়টাকে অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক ও ব্যাখ্যাতীত বললে কি অত্যুক্তি হয়?
(৫) ইঞ্জিলগুলোর বর্ণনায় এ সময়ে যীশু সর্বোচ্চ প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন এবং হাজার হাজার ভক্ত লাভ করেছেন। তাঁদের সকলের চোখের সামনে যে ঘটনাটা ঘটল তার বর্ণনায় এরূপ অকল্পনীয় সাংঘর্ষিক বৈপরীত্য হতে পারে কিভাবে? সমালোচকরা নিশ্চয়তার সাথেই বলেন যে, মূলতই যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাহিনীটা কাল্পনিক। কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে তা লেখা হয়নি। প্রায় শতবর্ষ পরে লোকমুখে প্রচলিত বিভিন্ন কাহিনী বিভিন্ন লেখক সংকলন করেছেন এবং নিজের বিশ্বাসের আলোকে সম্পাদনা করে লেখেছেন। ফলে এরূপ সাংঘর্ষিক বৈপরীত্য জন্ম নিয়েছে।
(৬) এখানে আমরা ২৩টা অনুচ্ছেদে এ বিষয়ক বহুবিধ বৈপরীত্য আলোচনা করেছি। পাঠক চার ইঞ্জিলের শেষ অধ্যায়গুলো তুলনা করে পাঠ করলে আরো অনেক বৈপরীত্য দেখবেন।