এ প্রসঙ্গে আরেকটা বৈপরীত্য এ ঘটনার পরে যীশু ও শিষ্যদের গমনস্থল। দু ইঞ্জিলে সম্পূর্ণ পৃথক দুটো নাম বলা হয়েছে। মার্ক ৬/৪৫-৫৬ শ্লোকে এ ঘটনা উল্লেখ করে লেখেছেন যে, তাঁরা ‘গিনেষরৎ’ গমন করেন: ‘‘পরে তিনি তৎক্ষণাৎ সাহাবীদেরকে দৃঢ় করে বলে দিলেন, যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে বৈৎসৈদার (Bethsaida) দিকে যান... পরে তাঁরা পার হয়ে স্থলে, গিনেষরৎ (Gennesaret) প্রদেশে নৌকা লাগালেন।’’ (মার্ক ৬/৪৫, ৫৩, মো.-১৩)
কিন্তু যোহন ৬/১৬-২৫ শ্লোকে লেখেছেন যে, এ ঘটনার পরে নৌকায় চড়ে তাঁরা কফরনাহূম নামক স্থানে গমন করেন: ‘‘সন্ধ্যা হলে তাঁর সাহাবীরা সমুদ্রতীরে নেমে গেলেন, এবং একখানি নৌকায় উঠে সমুদ্রপারে কফরনাহূমের (Capernaum) দিকে যেত লাগলেন। ... আর তাঁরা যেখানে যাচ্ছিলেন, নৌকাটি তৎক্ষণাৎ সেখানে পৌঁছে গেল। ... তারা সেসব নৌকায় চড়ে ঈসার খোঁজে কফরনাহূমে আসল। আর সমুদ্রের পারে তাঁকে পেয়ে বললো, রবিব..।’’ (ইউহোন্না ৬/১৬, ১৭, ২১, ২৪-২৫, মো.-১৩)
এখানে অনেকগুলো বৈপরীত্য বিদ্যমান। মার্ক বলছেন যে, যীশু তাঁদের বৈৎসৈদায় যেতে বললেন এবং নিজেই বলছেন যে, তাঁরা গিনেষরতে গেলেন। সম্পূর্ণ বিপরীতে যোহন বলছেন যে, তাঁরা কফরনাহূমে গেলেন। ভৌগলিক তথ্য অনুসারে উপরের কথাগুলো ভুল ও ভিত্তিহীন। যীশু যে স্থানে ৫ হাজার মানুষকে অলৌকিক খাদ্য প্রদান করেন সে স্থানটা তাবঘা (Tabgha/Tabhka)। স্থানটা তিবরিয়া হ্রদের উত্তর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এখান থেকে উত্তর পূর্ব দিকে তিবরিয়া হ্রদের সর্বউত্তর প্রান্তে বৈৎসৈদা অবস্থিত। তাবঘা থেকে বৈৎসৈদা আনুমানিক ৬/৭ মাইল উত্তর-পূর্বে। পক্ষান্তরে গিনেষরৎ (Gennesaret) স্থানটা তাবঘা থেকে ২/৩ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। Jesus Never Existed গ্রন্থের লেখক Kenneth Humphrey ‘খ্রিষ্টান পবিত্র ভূমির জালিয়াতি’ (Fabrication of a Christian Holy Land) শিরোনামে লেখেছেন: “But the most embarrassing error here is one of geography. Mark had Jesus telling his disciples to go to "the other side, to Bethsaida." But then Mark writes almost immediately after, in his conclusion to the episode: "And when they had passed over, they came into the land of Gennesaret, and drew to the shore." - Mark 6.53. Oops! Had they sailed east to Bethsaida or west to Gennesaret?”
‘‘এখানে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর ভুল ভৌগোলিক ভুল। মার্কের বর্ণনায় যীশু শিষ্যদেরকে ‘অপর পারে বৈৎসৈদা’ যেতে নির্দেশ দেন। এর পরপরই কাহিনী উপসংহারে মার্ক লেখছেন ‘তাঁহারা পার হইয়া স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, আসিয়া নৌকা লাগাইলেন’। বড়ই অদ্ভুত! তারা কি পূর্বদিকে বৈৎসৈদার দিকে নৌকা চালালেন, না পশ্চিমে গিনেষরতের দিকে?’’[1]
মার্ক ও যোহনের বৈপরীত্য আরো অদ্ভুত। আমরা দেখলাম তাবঘা থেকে দক্ষিণে গিনেষরৎ। আর কফরনাহূম তাবঘা থেকে উত্তরে কয়েক মাইল। তাহলে তাঁরা উত্তরে গেলেন, না দক্ষিণে?! এখানে আরো লক্ষণীয় যে, তাবঘা, কফরনাহূম, গিনেষরৎ ও বৈৎসৈদা সকল স্থানই গালীল সাগরের পশ্চিম তীরে। কাজেই তাঁরা ‘পরপারে’ গেলেন কিভাবে? তাবঘা থেকে মাত্র কয়েকমাইল উত্তর-পূর্বে কফরনাহূম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে গিনেষরৎ। তৎকালীন সময়ে সকলেই পদযাত্রায় অভ্যস্থ ছিলেন। একই তীরের কয়েক মাইল দক্ষিণ বা উত্তরে গমনের জন্য হেঁটে যাওয়াই ছিল স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। একই পাড়ের সামান্য কয়েক মাইল পথ অতিক্রম করতে তাঁরা রাত্রি বেলায় বিপৎসংকুল সাগরে নৌকায় চড়লেন কেন? লূকের বর্ণনায় অলৌকিক খাদ্য প্রদান ঘটেছিল বৈৎসৈদাতে। বৈৎসৈদা থেকে মাত্র কয়েক মাইল পূর্ব-দক্ষিণে কফরনাহূম। এতটুকু পথ তারা নৌকায় যাবেন কেন? এ সকল কারণে আধুনিক পাশ্চাত্য সমালোচকরা এ সকল কাহিনী সবই বানোয়াট বলে গণ্য করেন।
“The final resolution of John's version of the water walk substitutes Capernaum for Gennesaret as the point of return, a village so close to Bethsaida that one might question the sanity of fishermen who take to sea on a stormy night to reach a place they could walk to in thirty minutes!”
‘‘সর্বশেষ যোহনের বর্ণনায় সাগরের উপর দিয়ে হাঁটার কাহিনীতে গিনেষরৎ-এর পরিবর্তে কফরনাহূমকে প্রত্যাবর্তন স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ গ্রামটা বৈৎসৈদার খুবই কাছে। এ কারণে যে কেউ মৎসজীবি শিষ্যদের মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারেন! কারণ ৩০ মিনিট পদব্রজে যে স্থানে যাওয়া সম্ভব সেখানে গমনের জন্য ঝড় কবলিত রাতে তারা সাগর পথে গমন করলেন!’’[2]
[2] http://www.jesusneverexisted.com/galilee.html