সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, কুরআনে বর্ণিত প্রসিদ্ধ নবী ইয়াহ্ইয়া (আ.) খ্রিষ্টধর্মীয় পরিভাষায় যোহন দ্যা ব্যাপ্টিস্ট: ‘John the Baptist’। বাংলায় কেরি বাইবেল: ‘যোহন বাপ্তাইজক’, পবিত্র বাইবেল-২০০০: ‘বাপ্তিস্মদাতা যোহন’, জুবিলী বাইবেল: ‘দীক্ষাদাতা যোহন’, কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘তরীকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া’ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া’। ইঞ্জিলের বর্ণনা অনুসারে যোহনের বাপ্তাইজকের মাতা ইলীশাবেথ যীশুর মাতা মেরির জ্ঞাতি বোন (cousin) ছিলেন। (লূক ১/৩৬) যোহন যীশুর চেয়ে মাত্র ছয় মাসের বড় ছিলেন (লূক ১/২৬)।
গ্রিক ‘বাপ্টিযম’ বা ‘বাপ্তিস্ম’ (Baptism) শব্দটার অর্থ ডুব দেওয়া বা পানিতে চুবানো। ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস (৩৭-৯৫ খ্রি.) যীশু খ্রিষ্ট ও যোহন বাপ্তাইজকের প্রায় সমসাময়িক ছিলেন। তিনি লেখেছেন যে, যোহন বাপ্তাইজক (বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া) মানুষদেরকে আল্লাহর ইবাদত, নেক আমল ও মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের দাওয়াত দিতেন। তিনি পাপী মানুষদেরকে পানি দ্বারা বাপ্তাইজ বা সণান করিয়ে দেহ পবিত্র করতে এবং নেক আমলের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে বলতেন।[1]
যোহন বা ইয়াহিয়ার বাপ্তিস্ম বিষয়ে মার্ক (মার্ক ১/৪-৫) লেখেছেন: ‘‘ইয়াহিয়া উপস্থিত হয়ে মরুভূমিতে বাপ্তিস্ম দিতে লাগলেন এবং গুনাহ মাফের জন্য পরিবর্তনের বাপ্তিস্ম তবলিগ করতে লাগলেন। তাতে সমস্ত এহুদিয়া দেশ ও জেরুশালেম নিবাসী সকলে বের হয়ে ইয়াহিয়ার কাছে যেতে লাগল। আর তারা নিজ নিজ গুনাহ স্বীকার করে জর্ডান নদীতে তাঁর দ্বারা বাপ্তিস্ম নিতে লাগল।’’ (মো.-১৩)
এভাবে আমরা দেখছি যে, যোহনের বাপ্তিস্ম ছিল পাপীদের জন্য। পাপ থেকে অনুতাপ, তাওবা, পাপের স্বীকৃতি ও পানিতে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন ও পাপের ক্ষমা লাভই বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্য। এখন প্রশ্ন হল: যীশু যোহনের নিকট বাপ্তিস্ম করেছিলেন কিনা? করলে কোন্ গুনাহের স্বীকৃতি দিয়ে তা করেছিলেন?
মথি, মার্ক ও লূক সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যীশু যোহনের নিকট বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন। (মথি ৩/১৩-১৭, মার্ক ১/৯-১১; লূক ৩/২১-২২)। লূক লেখেছেন যে, বাপ্তিস্ম গ্রহণের পর তিনি প্রার্থনা করেন। পক্ষান্তরে যীশু যোহনের দ্বারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছেন বলে যোহন উল্লেখ করেননি। বরং তার বর্ণনায় সুস্পষ্ট যে, যোহন তাঁকে বাপ্তিস্ম দান করেননি। বরং বাপ্তিস্মের জন্য যীশুর আগমনের পর তাঁকে দেখেই তাঁকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলে সাক্ষ্য প্রদান করতে শুরু করেন। যোহন (১/২৯-৩৪)
বাহ্যত ‘তাওবা ও পাপস্বীকারের মাধ্যমে পাপমুক্তির বাপ্তিস্ম গ্রহণ’ যীশুর নিষ্পাপত্বের দাবির সাথে সাংঘর্ষিক বলেই যোহন এ বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছেন। আমরা দেখেছি যে, যোহনের ইঞ্জিলটা যখন লেখা হয় তখন যীশুকে দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রবণতা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং এ ধারাতেই এ ইঞ্জিলটা লিখিত।