পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৫. ৫. যীশুর জন্মস্থান বিষয়ক বৈপরীত্য

মথি ও লূক উল্লেখ করেছেন যে, যীশু এহুদিয়া বা যিহূদা (Judaea) প্রদেশের বৈৎলেহম/ বেথলেহেম বা বেথেলহেম (Bethlehem) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। (মথি ২/১; লূক ২/৪-৭)। পক্ষান্তরে যোহন থেকে জানা যায় যে, যীশু গালীল প্রদেশের নাসরৎ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যোহন লেখেছেন: ‘‘.... তিনি নাসরতীয় ঈসা, ইউসুফের পুত্র। নথনেল তাঁকে বললেন, নাসরত থেকে কি উত্তম কিছু উৎপন্ন হতে পারে?’’  (যোহন/ ইউহোন্না ১/৪৫-৪৬) ‘‘... আর কেউ কেউ বলল, ইনি সেই মসীহ। কিন্তু কিন্তু কেউ কেউ বলল, তা কেমন করে হবে; মসীহ কি গালিল থেকে আসবেন? পাক-কিতাবে কি বলে নি, মসীহ্ দাউদের বংশ থেকে এবং দাউদ যেখানে ছিলেন, সেই বেথেলহেম গ্রাম থেকে আসবেন? ... .. জবাবে তারা (ফরীশীরা) তাঁকে (নীকদীমকে) বললো, তুমিও কি গালীলের লোক? অনুসন্ধান করে দেখ, গালীল থেকে কোন নবী উদয় হয় না।’’ (যোহন/ ইউহোন্না ৭/৪১-৫২, কি. মো.-১৩)

তাহলে যীশুর সমসাময়িক মানুষেরা সুনিশ্চিত ছিলেন যে, গালীল প্রদেশের নাসরাত গ্রামেই যীশুর জন্ম। আর যোহন এ বিশ্বাস কোনোভাবে খণ্ডন করেননি।

এ বৈপরীত্যের আলোকে বর্তমান যুগের বাইবেল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যীশু মূলত নাসরত গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন। ইঞ্জিলগুলো প্রমাণ করে যে, সকলেই তাঁকে নাসরত বা নাযারেথ (Nazareth) গ্রামের মানুষ বলেই জানতেন।[1] লূক ও মথি তাঁর জন্মস্থান বেথেলহেমে নিয়ে গিয়েছেন শুধু তাঁর খ্রিষ্টত্ব বা মসীহত্ব প্রমাণ করার জন্য। এ প্রসঙ্গে (Historical Jesus: A Comprehensive Guide) পুস্তকের লেখকদ্বয় জার্ড থেইসেন (Gerd Theissen) ও আনিট মার্য (Annette Merz) লেখেছেন:

“Our conclusion must be that Jesus came from Nazareth. The shift of his birthplace to Bethlehem is a result of religious fantasy and imagination: because according to scripture the messiah had to be born in Bethlehem, Jesus’ birth is transferred there.”

‘‘আমরা নিশ্চিত উপসংহারে যেতে পারি যে,  যীশু নাসরতেই জন্মগ্রহণ করেন। একটা ধর্মীয় অলীক কল্পনার ভিত্তিতে তাঁর জন্মস্থান বৈথলেহমে স্থানান্তর করা হয়েছিল: যেহেতু ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্রের বচন অনুসারে মাসীহকে বৈথলেহমে জন্মগ্রহণ করতে হবে, সেহেতু যীশুর জন্মস্থান সেখানে স্থানান্তর করতে হবে।’’[2]

[1] মথি ২/২৩; ৪/১৩; ২১/১১; ২৬/৭১; মার্ক ১/৯; ১/২৪; ১০/৪৭; ১৪/৬৭; ১৬/৬; লূক ১/২৬; ২/৪; ২/৩৯; ২/৫১; ৪/১৬; ৪/৩৪; ১৮/৩৭; ২৪/১৯; যোহন ১/৪৫; ১/৪৬; ১৮/৫; ১৮/৭; ১৯/১৯; প্রেরিত ২/২২; ৩/৬; ৪/১০; ৬/১৪; ১০/৩৮; ২২/৮; ২৬/৯
[2] Gerd Theissen & Annette Merz, Historical Jesus: A Comprehensive Guide (1999) SCM Press, London, p 165; Louay Fatoohi, The Mystery of the Historical Jesus, p 303