যদি কেউ মথির ১ম অধ্যায়ের ১-১৭ শ্লোকে প্রদত্ত যীশুর বংশ-তালিকার সাথে লূকের ৩য় অধ্যায়ের ২৩-৩৮ শ্লোকে প্রদত্ত যীশুর বংশতালিকার তুলনা করেন তাহলে উভয়ের মধ্যে অকল্পনীয় বৈপরীত্য দেখবেন। যীশুর সুদীর্ঘ দুটো বংশতালিকার একটার সাথে আরেকটার কোনো মিল নেই। প্রথমে ‘যোষেফ’ বা ইউসুফ ও শেষে ‘দাউদ’ এ দুটো নামে মিল আছে। আর মধ্যস্থানে সরুববাবিল ও শল্টীয়েলের নাম উভয় তালিকাতেই আছে। তবে নামের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। মথির বর্ণনায় শল্টীয়েল যীশুর ১৩তম ঊর্ধ্বপুরুষ। আর লূকের বর্ণনায় শল্টীয়েল যীশুর ২২তম ঊর্ধ্বপুরুষ। নিম্নে কয়েকটা বৈপরীত্য লক্ষ্য করুন:
- মথি থেকে জানা যায় যে, যোষেফ/ ইউসুফ-এর পিতার নাম ‘যাকোব’/ ইয়াকুব। আর লূক থেকে জানা যায় যে, যোষেফ-এর পিতা এলি/ আলী।
- মথি থেকে জানা যায় যে, যীশু দাউদের পুত্র শলোমনের বংশধর। লূক থেকে জানা যায় যে, যীশু দাউদের পুত্র নাথন-এর বংশধর।
- মথির বর্ণনায় দাউদ থেকে ব্যাবিলনের নির্বাসন পর্যন্ত যীশুর পূর্বপুরুষরা সকলেই সুপ্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। লূকের বর্ণনায় দাউদ ও নাথন বাদে যীশুর পুর্বপুরুষদের মধ্যে কেউই রাজা ছিলেন না বা কোনো প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন না।
- মথি থেকে জানা যায় যে, শল্টীয়েল-এর পিতার নাম যিকনিয়। আর লূক থেকে জানা যায় যে, শল্টীয়েলের পিতার নাম নেরি।
- মথি থেকে জানা যায় যে, সরুববাবিলের পুত্রের নাম অবীহূদ। আর লূক থেকে জানা যায় যে, সরুববাবিলের পুত্রের নাম রীষা।
- মথি থেকে জানা যায় যে, রাজা যিকনিয় ও তার ভ্রাতৃবৃন্দ রাজা যোশিয়ের পুত্র। যিকনিয়-এর পুত্র শল্টীয়েল, তার পুত্র সরুববাবিল, তার পুত্র অবীহূদ। লূক থেকে জানা যায় যে, মল্কির পুত্র নেরি, তার পুত্র শল্টীয়েল, তার পুত্র সরুববাবিল, তার পুত্র রীষা। এখানে জানা গেল যে, শল্টীয়েল যোশিয় বা যিহোয়াকীমের বংশধর নন। তিনি নেরির পুত্র, তিনি মল্কির পুত্র....।
- মথির বিবরণ অনুযায়ী দাউদ থেকে যীশু পর্যন্ত উভয়ের মাঝে ২৬ প্রজন্ম। আর লূকের বর্ণনা অনুযায়ী উভয়ের মাঝে ৪১ প্রজন্ম।
বড়ই অবাক বিষয়! যীশুকে নিয়েই ইঞ্জিল। আর তাঁরই বংশ-তালিকায় এরূপ অকল্পনীয় বৈপরীত্য। এ সকল বৈপরীত্য ছাড়াও এ দুটো বংশ-তালিকার মধ্যে অনেক ভুল বিদ্যমান বলে প্রমাণিত। আমরা পরবর্তী পরিচ্ছেদে তা আলোচনা করব।
সম্মানিত পাঠক, কয়েকটা পর্যায়ে এ অদ্ভুত বৈপরীত্যের সমস্যা চিন্তা করুন:
(ক) একই ব্যক্তির জীবনী প্রসঙ্গে লেখা দুজন ব্যক্তির দুটো পুস্তকের মধ্যে এরূপ বৈপরীত্য দেখলে আপনি তা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? নিশ্চিতভাবেই দুটোর একটাকে আপনি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলবেন। এছাড়া যে কোনো বিবেকবান পাঠক দুটো গ্রন্থকেই অনির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করবেন।
(খ) যদি একই ব্যক্তির জীবনী বিষয়ে একই ব্যক্তির লেখা দুটো গ্রন্থের মধ্যে এরূপ উদ্ভট বৈপরীত্য দেখেন তবে আপনি তা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? এ লেখকের অন্যান্য তথ্য, বর্ণনা ও লেখনি আপনি কিভবে মূল্যায়ন করবেন?
(গ) যদি এরূপ একটা গ্রন্থকে ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মার লেখা বই বলে দাবি করা হয় তবে আপনি কিভাবে এ দাবি মূল্যায়ন করবেন? একই ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মা কি একই ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে এরূপ সাংঘর্ষিক তথ্য দিতে পারেন?