পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ২. ২৮. যিহোয়াখীন ১৮ না ৮ বছরে রাজা হলেন?

যিহূদা রাজ্যের আরেক রাজা যিহোয়াখীন। বাইবেলে তার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে: যিহোয়াখীন: Jehoiachin (২ রাজাবলি ২৪/৬-১৫; ২৫/২৭; ২ বংশাবলি ৩৬/৮; ৩৬/৯; যিরমিয় ৫২/৩১; যিহিষ্কেল ১/২), যিকনিয়: Jechonias (মথি ১/১১-১২); যেকনিয়াহ: Jeconiah/ Jechoniah/ Jekoniah (১ বংশাবলি ৩/১৬, যিরমিয় ২৪/১; ২৭/২০); কোনিয়াহ: Coniah (যিরমিয় ২২/২৪; ৩৭/১)। এ রাজার রাজত্বগ্রহণকালীন বয়স বিষয়ে রাজাবলি ও বংশাবলি পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছে।

২ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ২৪/৮-৯: ‘‘যিহোয়াখীন আঠার বছর বয়সে রাজত্ব করতে আরম্ভ করেন এবং জেরুশালেমে তিন মাস রাজত্ব করেন... মাবুদের দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করতেন। এর বিপরীতে ২ বংশাবলি/ খান্দাননামা ৩৬/৯: ‘‘যিহোয়াখীন আট বছর বয়সে রাজত্ব করতে আরম্ভ করেন এবং জেরুশালেমে তিন মাস দশ দিন রাজত্ব করেন; মাবুদের দৃষ্টিতে যা মন্দ, তাই তিনি করতেন।’’ (মো.-১৩)

উভয় তথ্যের মধ্যে দশ বছরের বৈপরীত্য। বাইবেল বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেন যে, দ্বিতীয় বক্তব্যটা বিকৃত। কারণ বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে যিহোয়াখীন মাত্র তিন মাস রাজত্ব করেন। এরপর ব্যাবিলনে বন্দিরূপে নীত হন। বন্দিত্বের সময়ে তার সাথে তার স্ত্রীরাও ছিলেন। স্বভাবতই ৮ বা ৯ বছরের কোনো মানুষের অনেকগুলো স্ত্রী থাকে না। আর এরূপ ৮ বা ৯ বছরের একজন শিশুর ক্ষেত্রে এ কথাও বলা হয় না যে, সে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা মন্দ ও পাপ তা করেছিল।

উল্লেখ্য যে, ইংরেজি কিং জেমস ভার্শন, রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন ও সকল প্রসিদ্ধ ভার্শনেই এ শ্লোকে ‘আট বছর’ লেখা হয়েছে। কারণ একটামাত্র অনির্ভরযোগ্য হিব্রু পাণ্ডুলিপি ছাড়া সকল হিব্রু পাণ্ডুলিপিতেই ‘আট’ লেখা রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ গ্রিক, সিরীয় ও অন্যান্য প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতেও ‘আট’ লেখা রয়েছে। এজন্য যে কোনো বিশ্বস্ত অনুবাদের দাবি ‘আট’-কে আট রেখে প্রয়োজনে ব্যাখ্যা করা। কিন্তু কোনো কোনো বাংলা অনুবাদে এ বিশ্বস্ততা রক্ষা করা হয়নি।

উপরে আমরা কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ থেকে অনুবাদ উদ্ধৃত করেছি। কেরির অনুবাদও একইরূপ। জুবিলী বাইবেলও ‘আট’ লেখেছে: ‘‘যোহাইয়াকিন আট বছর বয়সে রাজ্যভার গ্রহণ করে..’’।  কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ ও পবিত্র বাইবেল ২০০০ আটের পরিবর্তে ‘আঠারো’ লেখেছে।