পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩.২. তৌরাত ও পুরাতন নিয়মের কিছু বৈপরীত্য - ৩. ২. ১. সৃষ্টির ক্রম বর্ণনায় বৈপরীত্য

সৃষ্টির ক্রম বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের প্রথম পুস্তকের প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে দুটো পৃথক ও পরস্পর বিরোধী বিবরণ বিদ্যমান। আমরা আগেই বলেছি, বাইবেলের শব্দ ব্যবহার ও তথ্যাবলির অধ্যয়ন থেকে আধুনিক গবেষকরা নিশ্চিত যে, সম্পূর্ণ পৃথক দুটো বর্ণনা বা প্রচলন থেকে বর্তমান তৌরাত সংকলিত: (১) ইলোহিম, অর্থাৎ ইলাহ বা ঈশ্বরীয় ধারা এবং (২) যিহোভিস্ট বা সদাপ্রভু ধারা। আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে ইলোহিম ধারার বর্ণনা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে যিহোভিস্ট ধারার বর্ণনা সংকলিত। প্রথম বর্ণনায়, অর্থাৎ আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে সৃষ্টির বর্ণনা নিম্নরূপ:

(১) প্রথম দিন (রবিবার)। ঈশ্বর প্রথম দিনে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী, এবং আলো সৃষ্টি করেন। আলোকে অন্ধকার থেকে পৃথক করে আলোকে দিন এবং অন্ধকারকে রাত নাম দেন। এবং সন্ধ্যা ও সকাল হলে প্রথম দিন হল।

(২) দ্বিতীয় দিন (সোমবার)। ঈশ্বর জলকে পৃথক করার জন্য আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করলেন। একভাগ জল আকাশমণ্ডলীর নিচে এবং আরেকভাগ জল আকাশমণ্ডলীর উপরে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলীর নাম দিলেন ‘আকাশ’ (heaven)। সন্ধ্যা ও সকাল হলে দ্বিতীয় দিন হল। (আকাশের উপরেও সাগর বিদ্যমান! তা থেকেই কি বৃষ্টি?!)

(৩) তৃতীয় দিন (মঙ্গলবার)। ঈশ্বর পৃথিবীর জল ও স্থলকে পৃথক করলেন। জলের নাম সমুদ্র ও স্থলের নাম পৃথিবী রাখলেন। এরপর ঈশ্বর ঘাস, গাছপালা ও সকল উদ্ভিদ সৃষ্টি করলেন। সকাল হল এবং সন্ধ্যা হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।

(৪) চতুর্থ দিন (বুধবার)। ঈশ্বর সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি সৃষ্টি করলেন। (চাঁদ, সূর্য ও তারা সৃষ্টির আগেই আলো ছিল এবং দিন-রাত ও সকাল-সন্ধ্যা হচ্ছিল! আবার সূর্যের আলো ও তাপ ছাড়াই গাছপালা ও সকল উদ্ভিত বড় হচ্ছিল!)

(৫) পঞ্চম দিন (বৃহস্পতিবার)। ঈশ্বর জলজ প্রাণি ও পাখি সৃষ্টি করলেন।

(৬) ষষ্ঠ দিন (শুক্রবার)। ঈশ্বর স্থলের জীব-জানোয়ার, সরীসৃপ ইত্যাদি সৃষ্টি করলেন। এ দিনেই সর্বশেষ ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। (আদিপুস্তক ১ম অধ্যায় (১-৩১ শ্লোক)

(৭) সপ্তম দিন (শনিবার)। ঈশ্বর বিশ্রাম করলেন (আদিপুস্তক ২/২)।

আদিপুস্তকের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ শ্লোক থেকে যিহোভীয় ধারার বর্ণনা বিদ্যমান। এটা উপরের বিবরণ থেকে ভিন্ন। এখানে বার বা দিবসগুলো উল্লেখ না করে সৃষ্টির ক্রম বর্ণনা করা হয়েছে। (১) প্রথমে পৃথিবী এবং প্রথম মানব আদম (আদিপুস্তক ২/৪-৭)। (২) এরপর এদনের উদ্যান ও বিভিন্ন নদী (আদিপুস্তক ৪/৮-১৪)। (৩) এরপর সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী (৪/১৮-২০)। (৪) এরপর প্রথম মানবী হাওয়া (২১-২৩)।

এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম বর্ণনায় ঈশ্বর প্রথমে পৃথিবীর সকল পশু ও প্রাণি সৃষ্টি করেন এবং সর্বশেষ মানুষ সৃষ্টি করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ণনায় এর সম্পূর্ণ বিপরীতে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর সর্বপ্রথম মানুষ সৃষ্টি করেন এবং এরপর বৃক্ষলতা, পশুপাখি ইত্যাদি সৃষ্টি করেন।