ধর্মগ্রন্থ যে মানুষের জন্য উপকারী তাতে কারো মতভেদ নেই। আবার ধর্মগ্রন্থের নামে দাবিকৃত সকল গ্রন্থই যে ধর্মগ্রন্থ নয় সে বিষয়েও কারো কোনো মতভেদ নেই। সাধু পল নিজেই তাঁর প্রচারিত ইঞ্জিল ছাড়া তাঁর সময়ে প্রচলিত ও প্রচারিত সকল ‘ইঞ্জিল’ জাল ও বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে, মসীহের রহমতে যিনি তোমাদের আহবান করেছেন, তোমরা এত শীঘ্র তাঁর থেকে অন্য রকম ইঞ্জিলের (unto another gospel) দিকে ফিরে যাচ্ছ। আসলে অন্য ইঞ্জিল বলতে কিছু নেই; কেবল এমন কতগুলো লোক আছে যারা তোমাদের অস্থির করে তোলে এবং মসীহের ইঞ্জিল বিকৃত করতে চায় (and would pervert the gospel of Christ)।’’ (গালাতীয় ১/৬-৭, মো.-১৩)
তিনি অন্যত্র নিশ্চিত করেছেন যে, যীশুর প্রসিদ্ধতম সাহাবী বা প্রেরিতদের চেয়ে তিনি কোনো অংশে কম নন এবং তাঁর মতের বিপরীতে যদি প্রসিদ্ধতম সাহাবীরাও কোনো ইঞ্জিল প্রচার করেন তা বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন:
‘‘কোন আগন্তুক যদি এমন আর এক ঈসাকে তবলিগ করে, যাকে আমরা তবলিগ করিনি, কিংবা তোমরা যে পাক-রূহ্কে পেয়েছ তা ছাড়া যদি এমন অন্য কোন রূহ পাও, বা যে ইঞ্জিল তোমরা পূর্বে গ্রহন করেছ তা থেকে যদি ভিন্ন কিছু (another gospel: ভিন্ন ইঞ্জিল) পাও, তবে তো তোমরা সেসব মেনে নিতে খুবই ইচ্ছুক! কারণ আমার বিচার এই যে, সেই প্রেরিত-চুড়ামণিদের থেকে আমি একটুও পিছনে নই (মো.-০৬: কিন্তু আমার তো মনে হয় না যে, আমি কোন দিক দিয়ে ঐ সব বিশেষ সাহাবীদের চেয়ে পিছনে পড়ে আছি)।’’ (২ করিন্থীয় ১১/৪-৫, মো.-১৩)
তিনি তাঁর বিরোধী প্রেরিত ও শিষ্যদেরকে শয়তানের চর আখ্যায়িত করে বলেন: ‘‘কিন্তু যা করছি তা আরও করবো; যারা সুযোগ পেতে ইচ্ছা করে তাদের সুযোগ যেন খন্ডন করতে পারি; তারা যে বিষয়ের গর্ব করে সেই বিষয়ে যেন তারা আমাদের সমান হয়ে পড়ে। কেননা এ রকম লোকেরা ভণ্ড প্রেরিত (false apostles কি. মো. ২০০৬: ভণ্ড সাহাবী), প্রতারক কার্যকারী (ঠগ কর্মচারী), তারা মসীহের প্রেরিতদের ছদ্ম বেশ ধারণ করে। আর এতে আশ্চর্য হবার কোন কারণ নেই যে, শয়তান নিজে দীপ্তিময় ফেরেশতার (angel of light নূরে পূর্ণ ফেরেশতার) বেশ ধারণ করে....।’’ (২ করিন্থীয় ১১/১২-১৫, মো.-১৩)
তিনি তাঁর সময়ে প্রচলিত অন্যান্য ইঞ্জিলের প্রচারক মানুষ ও ফেরেশতা সকলকেই অভিশাপ দিয়ে বলেন: ‘‘কিন্তু আমরা তোমাদের কাছে যে ইঞ্জিল তবলিগ করেছি তা ছাড়া অন্য কোন রকম ইঞ্জিল যদি কেউ তবলিগ করে- তা আমরাই করি, কিংবা বেহেশত থেকে আগত কোন ফেরেশতাই করুক- তবে সে বদদোয়াগ্রস্ত হোক।’’ (গালাতীয় ১/৮, মো.-১৩)
এভাবে পল তাঁর প্রচারিত ইঞ্জিল ও তাঁর শিক্ষার ব্যতিক্রম তাঁর যুগে প্রচলিত সকল ইঞ্জিল জাল বলে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, বাইবেলের নতুন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান সাতাশটা পুস্তকের মধ্যে পলের লেখা চৌদ্দটা বা তেরটা পত্র ছাড়া নতুন নিয়মের বাকি তেরটা বা চৌদ্দটা পুস্তক সবই পলের বক্তব্য অনুসারে জাল, বাতিল, অনির্ভরযোগ্য ও অনুপযোগী বলে গণ্য।