লক্ষণীয় যে, পিতর বলেছেন: ‘‘শাস্ত্রীয় কোনো ভাববাণী/ পাক-কিতাবের কোন ভবিষ্যদ্বাণী বক্তার নিজের ব্যাখ্যার বিষয় নয়’’। এ কথা থেকে জানা যায় যে, ‘ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান ‘ভাববাণী’ বা ভবিষ্যদ্বাণীই শুধু ঐশী। আর আমরা দেখি যে, ইঞ্জিল লেখক, প্রেরিত বা সাহাবীরা কখনোই নিজেদেরকে ভাববাদী, নবী বা পবিত্র আত্মার অধীন বলে দাবি করেননি। তাঁদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মত দু’-একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া তেমন কোনো ভবিষ্যদ্বাণীও করেননি। যীশুর শিষ্যরা তাঁদের পত্রে কখনো কখনো কিছু কথা পবিত্র আত্মা থেকে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। এতে প্রমাণ হয় যে, অন্য কোনো কথা তারা পবিত্র আত্মা থেকে পাননি। সেগুলো তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত মত, মন্তব্য ও পরামর্শ। এগুলো ঐশী বা অভ্রান্ত নয়।
নতুন নিয়ম নিশ্চিত করে যে, প্রেরিতরা বা সাহাবীরা নিজেদেরকে পবিত্র আত্মা বা পাক-রুহ দ্বারা পরিচালিত বলে গণ্য করতেন না। জেরুজালেমের সমাবেশে তাদের আলোচনা, পৌল কর্তৃক পিতরকে অভিযোগ করা ইত্যাদি বিষয় থেকে তা জানা যায়।
প্রেরিত ১৫ অধ্যায় থেকে আমরা দেখি যে, যীশুর প্রেরিতগণ বা সাহাবীরা পরস্পর অনেক ‘বাগ্যুদ্ধ ও বাদানুবাদ’ করছেন (১৫/২)। মীমাংসার জন্য পবিত্র আত্মার কথা উল্লেখ করছেন না, পবিত্র আত্মার শরণাপন্নও হচ্ছেন না। বরং মীমাংসার জন্য জেরুজালেমে সম্মেলন করছেন। সে সম্মেলনেও ‘অনেক বাদানুবাদ’ হচ্ছে (১৫/৬)। কেউ কাউকে পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত বলে কোনোভাবেই মনে করছেন না। নিজেদের কর্মের পক্ষে ‘পুরাতন নিয়ম’ থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন, কিন্তু পবিত্র আত্মার নির্দেশের কথা বলছেন না (১৫/১৫-১৮)। নিজের মত প্রকাশের সময় বলছেন: ‘আমার বিচার এই যে’ (১৫/১৯), কিন্তু আমাকে পবিত্র আত্মা বলছেন বলে উল্লেখ করছেন না। বার্নাবা বা বার্নাবাসের সাথে পলের ‘এমন বিত-া হইল যে, তাহারা পরস্পর পৃথক হইলেন (১৫/৩৯)। কিন্তু উভয়ের কেউ কাউকে ভাববাদী, নবী অথবা পবিত্র আত্মা/ পাক-রুহ প্রাপ্ত বলে মনে করছেন না।
‘গালাতীয়দের প্রতি প্রেরিত’ পত্রে পল লেখেছেন: ‘‘কিন্তু কৈফা (পিতর) যখন এণ্টিয়কে আসলেন তখন আমি মুখের উপরেই তাঁর প্রতিরোধ করলাম, কারণ তিনি দোষী হয়েছিলেন। ফলত ইয়াকুবের কাছ থেকে কয়েক জনের আসার আগে তিনি অ-ইহুদীদের সঙ্গে আহার করতেন, কিন্তু ওরা আসলে পর তিনি খৎনা-করানো লোকদের ভয়ে পিছিয়ে পড়তে এবং নিজেকে পৃথক রাখতে লাগলেন। আর তাঁর সঙ্গে অন্য সকল ইহুদীও কপট ব্যবহার করলো; এমন কি, বার্নবাসও তাঁদের কপটতার টানে আকর্ষিত হলেন।’’ (গালাতীয় ২/১১-১৩, মো.-১৩)
পিতর যীশুর প্রধান প্রেরিত, প্রথম বিশ্বাসী ও সর্বোচ্চ আশীর্বাদপ্রাপ্ত। পলের দৃষ্টিতে তিনি কপট, দোষী ও প্রতিরোধযোগ্য। পল পিতরকে পবিত্র আত্মায় পরিচালিত বলে গণ্য করছেন না। এ সকল বিষয় প্রমাণ করে যে, প্রেরিতগণ নিজেদেরকে ভাববাদী, নবী, ভবিষ্যদ্বক্তা বা পবিত্র আত্মায় পরিচালিত বলে মনে করতেন না।