নতুন নিয়মের ২৭টার মধ্যে ১৪টা পুস্তক, অর্থাৎ অর্ধেকেরও অধিক পুস্তক সাধু পৌলের/ পল (Paul)-এর রচিত বলে প্রসিদ্ধ। তিনি ছিলেন যীশু খ্রিষ্টের সমসাময়িক একজন ইহুদি। তবে তিনি যীশু খ্রিষ্টের শিষ্য ছিলেন না, নাসরত, গালিলি বা ফিলিস্তিনের অধিবাসী ছিলেন না এবং কখনো তিনি যীশুকে দেখেননি। (১ করিন্থীয় ৯/১, ১৫/৮)

পৌল বা পলের মূল নাম সৌল (Saul)। তিনি বর্তমান তুরস্কের তারসূস (Tarsus) বা সাইলেশিয়ায় (Cilicia) জন্মগ্রহণ করেন (প্রেরিত ২১/৩৯, ২২/৩)। তিনি জাতিতে রোমান (প্রেরিত: ২২/২৮, ১৬/৩৭-৩৮, ২৩/২৭), মাতৃভাষায় গ্রিক (প্রেরিত: ৯/২৯) এবং ধর্মে ইহুদি ছিলেন। (রোমীয় ১১/১-২; করিন্থীয় ১১/২২; ফিলিপীয় ৩/৫)। ধর্মে ইহুদি হলেও ইহুদি ধর্ম ও ধর্মশাস্ত্রের সাথে তাঁর পরিচয় ছিল সামান্যই (রোমীয় ৭/৯; গালাতীয় ১৫/১); তবে তিনি গ্রিক-রোমান ধর্ম ও দর্শনে ব্যাপক অভিজ্ঞ ছিলেন (এনকার্টা: পল)। তিনি ৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং সম্ভবত ৬২ খ্রিষ্টাব্দে রোমে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হন। (এনকার্টা: পল) অর্থাৎ যীশুর জন্মের প্রায় ৬ বছর পরে তাঁর জন্ম এবং যীশুর তিরোধানের প্রায় ৩০ বছর পর তাঁর মৃত্যু।

খৃস্টধর্মের মঞ্চে সাধু পলের আবির্ভাব হঠাৎ করেই। যীশুর তিরোধানের পর যীশুর শিষ্যরা ফিলিস্তিন ও এশিয়া মাইনরের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ইহুদিদের মধ্যে তাঁর শিক্ষা প্রচার করতে থাকেন। ক্রমান্বয়ে যীশুর শিক্ষা ইহুদিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও প্রসার লাভ করতে থাকে। এ সময়েই হঠাৎ করে পলের আবির্ভাব।

পল দাবি করেন যে, এ সময়ে তিনি যীশুর শিক্ষা গ্রহণকারী ইহুদিদেরকে নির্যাতন করতেন (প্রেরিত: ৭/৫৮, ৮/৩, ৯/১-২; ২২/৪-৫ ও ২৬/৯-১১; গালাতীয়: ১/১৩)। হঠাৎ যীশু তাঁকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন এবং তাকে শিষ্যত্ব প্রদান করেন। তাঁর যীশু-শিষ্য হওয়ার কাহিনীটা ‘প্রেরিত’ পুস্তকে  ৯, ২২ ও ২৬ অধ্যায়ে তিন স্থানে তিনভাবে দেওয়া হয়েছে। ৯/৩-৭-এর বক্তব্য: ‘‘তখন হঠাৎ আসমান থেকে আলো তাঁর চারদিকে চমকে উঠলো। তাতে তিনি ভূমিতে পড়ে শুনতে পেলেন, তাঁর প্রতি এই বাণী হচ্ছে, শৌল শৌল, কেন আমাকে নির্যাতন করছো? .... কিন্তু উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করতে হবে, তা বলা যাবে। আর তাঁর সহপথিকেরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, তারা ঐ বাণী শুনলো বটে, কিন্তু কাউকেও দেখতে পেল না  (hearing a voice, but seeing no man)।’’ (মো.-১৩)

পক্ষান্তরে প্রেরিত পুস্তকেরই ২২/৬-১০ বলছে: ‘‘হঠাৎ আসমান থেকে মহা আলো আমার চারদিকে চমকে উঠলো। তাতে আমি ভূমিতে পড়ে গেলাম ও শুনলাম, একটি বাণী আমাকে বলছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে নির্যাতন করছো? ... আর যারা আমার সঙ্গে ছিল , তারা সেই আলো দেখতে পেল বটে, কিন্তু যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তাঁর বাণী শুনতে পেল না (And they that were with me saw indeed the light, and were afraid; but they heard not the voice of him that spoke to me) ... প্রভূ আমাকে বললেন, উঠে দামেস্কে যাও, তোমকে যা যা করতে হবে বলে নির্ধারিত আছে, সেসব সেখানেই তোমাকে বলা যাবে।’’ (মো.-১৩)

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনায় এত বৈপরীত্য! সহ-পথিকরা কথা শুনল কিন্তু আলো দেখল না! তারা আলো দেখল কিন্তু কথা শুনল না!!! আরেকটা বিষয় দেখুন! উপরের দু’স্থানে বলা হয়েছে যে, পলের কী করণীয় সে বিষয়ে যীশু তাকে কোনো নির্দেশ দিলেন না; শুধু বললেন, দামেশকে যাও, সেখানেই সব বলা হবে। অথচ ২৬ অধ্যায়ের ১৬-১৮ শ্লোকে বলা হয়েছে যে, সাধু পলের দায়িত্ব ও করণীয় বিস্তারিত সেখানেই তাকে বলা হয়েছিল।

এ সকল স্ববিরোধী বক্তব্যের মধ্যে কোন্টা সত্য? আমরা জানি না। তবে সাধু পল ঈশ্বরের গৌরবার্থে মিথ্যা বলার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন: “For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner?” ‘‘কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি আল্লাহর সত্য তাঁর গৌরবার্থে উপচে পড়ে, তবে আমিও বা এখন গুনাহগার বলে আর বিচারের সম্মুখীন হচ্ছি কেন?’’ (রোমান/ রোমীয় ৩/৭। আরো দেখুন: ১ করিন্থীয় ১৯-২১)।

পল বলেন: “All things are lawful unto me, but all things are not expedient: all things are lawful for me, but I will not be brought under the power of any”: ‘‘সকলই আমার পক্ষে বিধেয়... কিন্তু সকলই যে মঙ্গলজনক তা নয়; সকলই আমার পক্ষে বিধেয়, কিন্তু আমি কোন কিছুরই গোলাম হব না।’’ (১ করিন্থীয় ৬/১২)

এখানেও সাধু পল দাবি করছেন যে, তিনি কোনো শরীয়ত, আইন বা বিধানের কর্তৃত্বাধীন নন। তিনি সকল বিধিবিধানের ঊর্ধ্বে। পাপ, পূণ্য, সত্য, মিথ্যা, হালাল, হারাম কোনো কিছুই তাঁর জন্য নিষিদ্ধ বা অবৈধ নয়, বরং সবই বৈধ।

লক্ষণীয় যে, সাধু পল দাবি করেন যে, যীশু তাঁকে বলেছিলেন: ‘‘তোমার নিজের লোকদের (ইহুদীদের) এবং অ-ইহুদিদের হাত থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করব।’’ (প্রেরিত ২৬/১৭)। কিন্তু বাস্তবে এ ওয়াদা কার্যকর হয়নি। সাধু পলকে যীশু রক্ষা করেননি; বরং তিনি নিহত হয়েছেন।  ৬২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমান সরকার তাকে বন্দি করে এবং মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। (Microsoft ® Encarta ® 2008: Paul) এ থেকে কেউ কেউ প্রমাণ করতে চান যে, তিনি প্রকৃতই মিথ্যা বলেছিলেন। কারণ, ভন্ড নবীর পরিণতি নিহত হওয়া বা অপমৃত্যু বলে বাইবেল বলেছে। (দেখুন: দ্বিতীয় বিবরণ ১৮/১৮-২০; যিহিষ্কেল ১৪/৯-১০)

সর্বাবস্থায়, পলের হঠাৎ ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত ছিল যে, পল দ্রম্নত ফিলিস্তিনে এসে যীশুর শিষ্যদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাঁদের নিকট থেকে ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল শ্রবণ ও অধ্যয়ন করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে তাদের থেকে দূরে থাকেন (গালাতীয় ১/১৬-১৭)। তিনি প্রেরিতদের চেয়ে কম নন এবং প্রেরিতদের কথার মূল্য নেই বলে তিনি দাবি করেন। (গালাতীয় ১/১১-১২, ১৫, ২/৬, ১-করিন্থীয় ৩/১০, ৪/১৫, ৯/১, ১১/৫-৬)।

ঈসা মাসীহ জীবদ্দশায় ইঞ্জিল প্রচার করেছেন (মথি ৪/২৩, ৯/৩৫, ১১/১৫; মার্ক ১/১৪, ১৫, ৮/৩৫; মার্ক ১০/২৯; লূক ৯/৬...)। সাধু পল কখনোই তাঁর বা শিষ্যদের থেকে ইঞ্জিল শিক্ষা করেননি। তিনি নিজেই ইঞ্জিলের রচয়িতা বলে প্রচার করতেন এবং বলতেন: ‘my gospel’: ‘আমার ইঞ্জিল’ (রোমীয় ২/১৬, ১৬/২৫; ২ তীমথিয় ২/৮)। তিনি বলেন, তাঁর নিজের ইঞ্জিল ছাড়া অন্য কোনো ইঞ্জিল যদি কেউ প্রচার করে তবে সে অভিশপ্ত (গালাতীয় ১/৬, ৮-৯; ২-করিন্থীয় ১১/৪)।

নতুন নিয়মের পুস্তকগুলো পাঠ করলে পাঠক নিশ্চিত হবেন যে, খ্রিষ্টধর্মের মঞ্চে আবির্ভূত হওয়ার সময় থেকেই সাধু পল বিতর্কিত ছিলেন এবং বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি প্রেরিতদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং প্রেরিতগণও তাঁর বিরুদ্ধে বলেছেন ও লেখেছেন। এ বিষয়ে ড. মরিস বুকাইলি বলেন: “Paul is the most controversial figure of Christianity, He was considered to be a traitor to Jesus’ thought by the latter’s family and by apostles who had stayed in Jerusalem in the circle around James. Paul created Christianity at the expense of those whom Jesus had gathered around him to spread his teachings”.

‘‘পল খ্রিষ্টধর্মের সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। ঈসা মাসীহের পরিবার এবং শিষ্যরা জেরুজালেমে (ঈসা মাসীহের ভাই) জেমসের (যাকোবের) চারপাশে জমায়েত ছিলেন এবং তারা পলকে মাসীহের চিন্তা-চেতনার বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করতেন। ঈসা মাসীহ তাঁর শিক্ষা প্রচারের জন্য যাদেরকে জমায়েত করেছিলেন সাধু পল তাদের বিপরীতে একটা খ্রিষ্টধর্ম তৈরি করেন।’’ (Dr. Maurice Bucaile, The Bible, the Qur'an and the Science, page 52)

বৃটিশ গবেষক হিয়াম ম্যাকবি (Hyam Maccoby) রচিত একটা প্রসিদ্ধ বই ‘The Mythmaker- Paul and the Invention of Christianity’: ‘পুরাণরচক: পল এবং খ্রিষ্টধর্মের উদ্ভাবন’। ১৯৮৬ সালে তিনি বইটা প্রকাশ করেন। এ বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, (১) সাধু পলের পূর্বে খ্রিষ্টানরা বিশ্বাসেই মুক্তির তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না, ইহুদি-বিরোধী ছিলেন না এবং ঈশ্বর বিরোধীও ছিলেন না, (২) সাধু পলই প্রভুর শেষ নৈশভোজের কাহিনীর পাশাপাশি ক্রুশ-তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। এখানে উইকিপিডিয়ার ‘Hyam Maccoby’ প্রবন্ধ থেকে সামান্য কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করছি:

‘‘ম্যাকবির মতে খ্রিষ্টধর্মকে ইহুদিধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছিল পুরোপুরিই তারসূসের পলের কর্ম। ... পল গ্রিক ইহুদি ধর্মান্তরিত এবং সম্ভবত অ-ইহুদি ছিলেন। রহস্যবাদী এবং আটিস পূজারী ধর্মের মত পৌত্তলিক রহস্য ধর্মগুলো দ্বারা প্রভাবিত পরিবেশ থেকে তিনি এসেছিলেন। এরা জীবন-মৃত্যু-পুনর্জন্ম দেবতার কল্পকাহিনীতে জড়িত ছিলেন। ... সে সময়ে এ সকল রহস্য ধর্মগুলোই গ্রিক-রোমান সমাজগুলোতে সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ছিল এবং স্বভাবতই তা পলের পূরাণ-নির্ভর মানসিকতাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল। এবোনাইটদের বিরোধীদের লেখনিসমূহের খণ্ডতে-পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে, বিশেষত সালামিসের এপিফানিয়াস রচিত ‘বিভ্রান্তগণের গ্রন্থ’ থেকে ম্যাকবি তার এ তত্ত্বের একটা অংশ গ্রহণ করেছেন।

পল দাবি করেছেন যে, তিনি গোঁড়া ফরীশীয় ইহুদি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। ম্যাকবি পলের এ দাবি মিথ্যা বলে গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে, পলের অনেক লেখা অনভিজ্ঞ মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হতে পারে। তবে প্রকৃত বিচারে তাঁর লেখাগুলো ফাঁস করে দেয় যে, তিনি বাইবেলের মূল হিব্রু পাঠ এবং ইহুদি বিধিবিধানের সুক্ষ্ম বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। ম্যাকবি দাবি করেন যে, নতুন নিয়ম নিরীক্ষা করলে জানা যায় যে, পল মোটেও হিব্রু জানতেন না। তিনি পুরোপুরিই গ্রিক অনুবাদের উপর নির্ভর করেন। কোনো প্রকৃত ফরীশী কখনোই তা করত না; কারণ গ্রিক ভাষ্যে মূল হিব্রু পাঠ সঠিকভাবে অনুবাদ করা হয়নি।

ম্যাকবরি মতে, পল যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঐতিহাসিক কাহিনীকে তৎকালীন রহস্য-ধর্মসমূহ এবং মারফতি রহস্যবাদী মতের উপাদানসমূহের সাথে মিশ্রিত করেন। আর এভাবেই তিনি ত্রিত্ববাদ, শেষ নৈশভোজ ইত্যাদি নতুন অ-ইহুদি পৌরাণিক তত্ত্বগুলোর বিকাশ ঘটান। পল তার নব-উদ্ভাবিত পৌরাণিক মতবাদের সমর্থনে পুরাতন নিয়ম থেকে ভবিষ্যদ্বাণী খুঁজে বের করার চেষ্টাও করেন।

গ্রীক রহস্য-ধর্মগুলোর যেমন দেবতা ছিল ঠিক তেমনি একজন মৃত্যুবরণকারী ও পুনর্জন্মলাভকারী ত্রাণকর্তা দেবতা হিসেবে যীশুকে উপস্থাপন করেন পল। এর সাথে তিনি ইহুদি ধর্মের ঐতিহাসিক বংশবিবরণকে মিশ্রিত করেন। এভাবেই তিনি নতুন একটা শক্তিশালী পৌরাণিক কল্পকাহিনীর জন্ম দেন, যার প্রচারণা তাকে অনেক অনুসারী জুটিয়ে দেয়।  যখন জেরুজালেমে অবস্থানরত যীশুর প্রকৃত শিষ্যদের জামাত ক্রমান্বয়ে পলের শিক্ষার বিষয়ে সচেতন হন তখন পলের সাথে তাদের মাঝে তীব্র শত্রুতা শুরু হয়। এন্টিয়কের ঘটনায় পলের সাথে পিতরের বিবাদ এবং এ জাতীয় বিষয়ে পল যা লেখেছেন নতুন নিয়মের সে সকল বক্তব্যকে ম্যাকবি যীশুর মূল শিষ্যরা ও পলের মধ্যে শত্রুতার প্রকৃত চিত্রের অবশিষ্ট অংশ বলে গণ্য করেছেন। ৬৬-৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঘটে যাওয়া ইহুদি বিদ্রোহের মাধ্যমে অচিরেই জেরুজালেমস্থ যীশুর মূল শিষ্যদের জামাত নির্মূল হয়ে যায়। এতে কার্যত পল প্রতিষ্ঠিত অ-ইহুদি চার্চ বা জামাতই বিজয়ী হয়ে যায়। ম্যকবির মতে ‘প্রেরিতগণের কার্যবিবরণ’ পুস্তকটা মূলত পরবর্তীকালে পলীয় খ্রিষ্টানদের রচিত। পল ও জেরুজালেমে অবস্থানরত শিষ্যদের মধ্যে একটা সমন্বিত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল প্রমাণ করার জন্যই এ পুস্তকটা রচিত। এভাবেই প্রেরিত পুস্তকটা পলীয় চার্চকে শিষ্যদের বৈধ উত্তরসূরী হিসেবে উপস্থাপন করেছে যীশুর মূল শিষ্যদের পর্যন্ত শিষ্য পরম্পরা তৈরির মাধ্যমে। ম্যাকবি অনুমান করেন যে, এবোনাইট নামক ইহুদি ধর্মাবলম্বী খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সম্ভবত জেরুজালেমের মূল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রকৃত প্রশাখা ছিলেন।’’

কতিপয় পাশ্চাত্য গবেষক দাবি করেন, পলই ছিলেন এন্টিক্রাইস্ট (Anti-Christ), অর্থাৎ দাজ্জাল। যীশু বলেন: ‘‘ভণ্ড নবীদের বিষয়ে সাবধান হও। তারা তোমাদের কাছে ভেড়ার চেহারায় আসে, অথচ ভিতরে তারা রাক্ষুসে নেকড়ে বাঘের মত। ... যারা আমাকে ‘প্রভু প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়। কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলিনি? তোমার নামে কি ভূত ছাড়াইনি? তোমার নামে কি অনেক অলৌকিক কাজ করিনি? তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’ (মথি ৭/১৫-২৩, কি. মো.-০৬)। তিনি আরো বলেন: ‘‘অনেক ভণ্ড মসীহ্  ও ভণ্ড নবী আসবে এবং ‘বড়  বড় আশ্চর্য ও চিহ্ন-কাজ করবে যাতে সম্ভব হলে আল্লাহর বাছাই করা বান্দাদেরও তাঁরা ঠকাতে পারে।’’ (মথি ২৪/২৪, কি. মো.-০৬)

যীশুকে ‘প্রভু প্রভু’ বলেছেন, তাঁর নামে অলৌকিক কাজ ও চিহ্ন-কাজ করেছেন এবং ‘আল্লাহর বাছাই করা বান্দাদের’ অর্থাৎ যীশুর সাহাবী-শিষ্যদেরকেও ভুলাতে পেরেছেন এমন ব্যক্তি সাধু পল ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না।

জিরেমি বেনথাম (Jeremy Bentham) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ বৃটিশ দার্শনিক (১৭৪৮-১৮৩২ খ্রি.)। তার লেখা একটা প্রসিদ্ধ বই ‘Not Paul But Jesus’: ‘পল নয়, বরং যীশু’। উইকিপিডিয়ায় এবং http://www.jesuswordsonly.com ওয়েবসাইটে পাঠক এ পুস্তক ও সাধু পল কর্তৃক যীশুর ধর্ম বিকৃতি বিষয়ক খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের আরো অনেক পুস্তক সম্পর্কে জানতে পারবেন। জিরোমি বেনথাম পল প্রসঙ্গে বলেন: “If Christianity needed an Anti-Christ, they needed look no farther than Paul.”: ‘‘খৃস্টধর্ম যদি একজন দাজ্জাল চায় তবে পল ছাড়া আর কাউকে দেখার তাদের প্রয়োজন নেই।’’[1]

[1] http://liberalslikechrist.org/about/PaulvsAll.html