এভাবে আমরা দেখলাম যে, বাইবেলের হাজার হাজার পাণ্ডুলিপির অধিকাংশই দশম খ্রিষ্টীয় শতকের পরে লেখা। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো অনেকটা আন্দাজের উপরেই ৪র্থ, ৫ম বা ৬ষ্ঠ খ্রিষ্টীয় শতাব্দীর বলে দাবি করা হয়েছে। কেউ বা সেগুলো আরো অনেক পরে লেখা বলে দাবি করেছেন। মূলত কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই যে পাণ্ডুলিপিগুলো খুব বেশি প্রাচীন। পরবর্তী অনুলিপিকার পূর্ববর্তী লিপিকারের লেখনপদ্ধতি অনুকরণ করে লিপিবদ্ধ করতে পারেন। কাজেই লেখন পদ্ধতি থেকে লিখিত পাণ্ডুলিপিটা মূল লেখা না মূল লেখা থেকে পরবর্তীতে অনুলিপি করা তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
মুসলিম লেখকগণ তাঁদের লেখা বই-পুস্তক বা পান্ডুলিপির শেষে লেখেন যে, অমুক সালের অমুক তারিখে পুস্তকটার রচনা বা অনুলিপি করা শেষ হল। অনুলিপির ক্ষেত্রে অনুলিপিকারের নামও তাঁরা লেখেন। এধরনের কোনো কথা বাইবেলের পাণ্ডুলিপিগুলোর কোথাও লেখা নেই। কে অনুলিপি করেছেন, কবে, কখন বা কোথায় তা করেছেন কিছুই তাতে উল্লেখ করা হয়নি। খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা কিছু কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ভিত্তিতে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে বলেন যে, সম্ভবত অমুক বা তমুক শতকে তা লেখা হয়েছিল। এ প্রকারের ধারণা ও অনুমান নিরেট প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যায় না। বিশেষত ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে এরূপ ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
সর্বোপরি এ পাণ্ডুলিপিগুলো একত্রে প্রমাণ করে যে, বাইবেলীয় পুস্তকগুলোর মধ্যে সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন ব্যাপক ছিল। এজন্য প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে ভিন্নতা বহুবিধ। বাতিল ও জাল বলে গণ্য অনেক পুস্তক এগুলোর মধ্যে বিদ্যমান। পাণ্ডুলিপিগুলোর বক্তব্যের মধ্যেও বৈপরীত্য ব্যাপক। ধর্মগ্রন্থের অভ্রান্ততার ক্ষেত্রে বিষয়টা খুবই আপত্তিকর। এ প্রসঙ্গে রবার্ট বয়ডের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য[1]:
“The Bible was originally written in Hebrew, Greek, and Aramaic. No original manuscripts exist, and there are distinct differences – though often minor – between the various manuscripts that have survived. ,, There are many Bibles which differ not only because of different translations but also because of including different selections of writings... It therefore becomes difficult to accept the idea that the Bible is an infallible, perfect document when it is not clear which documents really belong in the Bible or whic varying manuscripts should be used in the translation, not to mention the inherent uncertainties and problems that arise in translating any of the existing early manuscripts. ..... The popular concept of Biblical inerrancy and sufficiency... is hard to square with the centuries-old uncertainty and controversy over what should be in the Biblical canon in the first place. ,, In more recent times, Martin Luther called the Epistle of James "a right epistle of straw" ... Elsewhere he branded it as worthless ... In the forward to his early translations, ... also said that Hebrews, James, Jude, and Revelation did not belong among "the true and noblest books of the New Testament" .... If Martin Luther openly attacked the canonical status of some books in the Protestant Bible, it seems odd that his followers would later claim that the Bible is infallible, complete, and perfect. The Bible makes no such claim for itself. ... When bible worshippers are confronted with problems in today's bibles, they often try to fall back on the idea that "the original bible" – as opposed to our translations, copies, versions, etc. – is what is inspired, perfect, inerrant, etc., One huge problem with that defence, of course, is that mankind hasn't had the benefit of the originals for ages and isn't likely to ever recover them.”
‘‘বাইবেল মূলত লেখা হয়েছিল হিব্রু, গ্রিক ও আরামাইক ভাষায়। কোনো মূল পাণ্ডুলিপিরই অস্তিত্ব নেই। আর যে সকল পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক সুস্পষ্ট বৈপরীত্য রয়েছে, যদিও কিছু বৈপরীত্য ছোটখাট। অনেক বাইবেল রয়েছে যেগুলোর পার্থক্য শুধু অনুবাদের ভিন্নতাই নয়; উপরন্তু পুস্তক বাছাই ও গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে। ... এজন্য বাইবেলকে অভ্রান্ত, নিখুঁত দলিল মনে করার ধারণাটা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ কোন্ পুস্তক প্রকৃতই বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত তা-ই তো স্পষ্ট নয়। অথবা পরস্পর বিরোধী পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্য থেকে কোন্ পাণ্ডুলিপিকে অনুবাদের জন্য ব্যবহার করা দরকার তাও স্পষ্ট নয়। আর বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর অনুবাদের ক্ষেত্রে যে স্থায়ী অনিশ্চয়তা ও সমস্যাদি বিদ্যমান তার কথা তো বলে লাভ নেই। ...
কিছুদিন আগেও (প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের প্রতিষ্ঠাতা) মার্টিন লুথার (১৫৪৬ খ্রি.) যাকোবের পত্রকে খড়কুটার পত্র হিসেবেই সঠিক বলে উল্লেখ করেন। ... অন্যত্র তিনি একে অথর্ব বলেন। বাইবেলের ভূমিকায় তিনি বলেন যে, ইব্রীয়, যাকোব, যিহুদা এবং প্রকাশিত বাক্য পবিত্র মর্যাদাময় নতুন নিয়মের অংশ নয়।
বাইবেলের মধ্যে কী থাকবে তা নিয়েই তো প্রথম বিরোধ, বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা। আর বহু শতাব্দী ধরে বিরাজমান এ অনিশ্চয়তা ও বিতর্ক-বিরোধের সাথে বাইবেলের অভ্রান্ততা ও পূর্ণতার সাধারণ বিশ্বাসের হিসাব মেলানো খুবই কঠিন। যেখানে মার্টিন লুথার প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান কিছু পুস্তকের বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ্যে আক্রমণ করছেন, সেখানে তার অনুসারীরা তার পরে দাবি করছেন যে, বাইবেল অভ্রান্ত, পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত। বিষয়টা অদ্ভুত-উদ্ভট বলেই প্রতীয়মান। বাইবেল নিজের জন্য এরূপ কোনো দাবি করে না। ....
যখন বাইবেল পূজারীগণ প্রচলিত বাইবেলের সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন তখন তারা অনেক সময় আমাদের মধ্যে প্রচলিত অনুবাদ, সংস্করণ, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদির বিপরীতে এ ধারণার উপর নির্ভর করতে চান যে, মূল বাইবেল ঐশী প্রেরণালব্ধ ও নিখুঁত ছিল। এ ধারণা দিয়ে আত্মরক্ষার বিষয়ে একটা বিশাল সমস্যা বিদ্যমান। তা হল, যুগের পর যুগ মানবতা ‘মূল বাইবেল’ থেকে কোনো উপকার লাভ করতে পারেনি। এবং ভবিষ্যতে কখনো তারা মূল বাইবেল পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলেও মনে হয় না।’’