বাইবেলের অগণিত পাণ্ডুলিপির বিদ্যমানতা এবং বিশেষত উপরের ‘প্রাচীনতম’ পাণ্ডুলিপিগুলোর বিদ্যমানতাকে সাধারণত খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা বাইবেলের বিশুদ্ধতার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। কিন্তু কোনো কোনো খ্রিষ্টান গবেষক এগুলোকে প্রচলিত বাইবেলের অপ্রামাণ্যতার দলিল বলে গণ্য করেছেন। তাদের মতে এগুলোর মধ্যে বিদ্যমান অগণিত বৈপরীত্য প্রমাণ করে যে, বাইবেল কোনো অভ্রান্ত ঐশী গ্রন্থ নয়। এ প্রসঙ্গে খ্রিষ্টিয়ানিটি জেনারেল ফোরামের গবেষক রবার্ট বয়ড (Robert Boyd from the Christianity General forum) বলেন:[1]
.....There are plans afoot to make a digitized version of one of the oldest versions of the bible available to everyone online ... The Greek text of the fourth century "Codex Sinaiticus" will be accompanied by translations into modern languages. There are significant discrepancies from the versions we are accustomed to, pouring additional cold water on the idea that the bible is the "innerant word of God". What bible would that be?
See http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/magazine/7651105.stm
http://news.bbc. co.uk/go/pr/fr/-/2/hi/uk_news/magazine/7651105.stm
‘‘পরিকল্পনা আছে যে, বাইবেলের প্রাচীনতম একটা পাণ্ডুলিপির ডিজিটাল ভার্শন অনলাইনে সবার জন্য সহজপ্রাপ্য করা হবে...। চতুর্থ শতাব্দীর গ্রিক পাণ্ডুলিপি ‘সিনাইয়ের পাণ্ডুলিপি’র সাথে আধুনিক ভাষাগুলোর অনুবাদ থাকবে। আমরা যে সকল ভার্শন-সংস্করণের সাথে পরিচিত সেগুলোর সাথে এ পাণ্ডুলিপির তাৎপর্যময় বৈপরীত্য বিদ্যমান। এতে ‘বাইবেল ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাক্য’ বলে যে বিশ্বাস বিদ্যমান সে বিশ্বাসের উপর আরো কিছু ঠাণ্ডা পানি ঢালা হবে। সেটা কোন্ বাইবেল হবে? দেখুন: http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/magazine/7651105.stm, http://news.bbc.co.uk/go/pr/fr/-/2/hi/uk_news/magazine/7651105. stm.’’
বাইবেলের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বৈপরীত্য বিষয়ে অন্য একজন প্রসিদ্ধ বাইবেল গবেষক ও প্রথম যুগের খ্রিষ্টধর্ম বিষয়ক বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বিশেষজ্ঞ প্রফেসর বার্ড ইহরমান (Bard Ehrman) বলেন:
Scholars differ significantly in their estimates-some say there are 200,000 variants known, some say 300,000, some say 400,000 or more! We do not know for sure because, despite impressive developments in computer technology, no one has yet been able to count them all. Perhaps, as I indicated earlier, it is best simply to leave the matter in comparative terms. There are more variations among our manuscripts than there are words in the New Testament.
‘‘অনুমানের ক্ষেত্রে পণ্ডিতরা লক্ষনীয় মাত্রায় মতভেদ করেন। কেউ বলেন, ২ লক্ষ ভিন্নতা বা বৈপরীত্যের কথা জানা গিয়েছে। কেউ বলেন, এরূপ ভিন্নতার সংখ্যা ৩ লক্ষ এবং কেউ বলেন ৪ লক্ষ বা তার চেয়েও বেশি! বিষয়টা আমরা নিশ্চিতভাবে জানিনা; কারণ, কম্পিউটার প্রযুক্তির আকর্ষণীয় উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত কেউ সব বৈপরীত্য গণনা করতে সক্ষম হননি। আমি আগেই যা বলেছি, সবচেয়ে ভাল হচ্ছে বিষয়টাকে একেবারে তুলনামুলক অর্থে ছেড়ে দেওয়া: নতুন নিয়মের মধ্যে যতগুলো শব্দ বিদ্যমান আমাদের পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে তার চেয়ে বেশি বৈপরীত্য ও ভিন্নতা বিদ্যমান।’’[2]
rotten.com নামে একটা ওয়েবসাইট আছে যার শ্লোগান হচ্ছে- An archive of disturbing illustration (উদ্বেগজনক চিত্রের সমাহার)। সেখানে ‘রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিকৃতি’ (Distortions of the Roman Catholic Church) শিরোনামে লেখা আছে[3]: “In total there are 300,000 discrepancies in the New Testament amongst various early manuscript versions. Significantly, the greatest amount of variation (and revision) is found in the most significant portions of the New Testament manuscripts -- that is, within those parts that most determine official Church doctrine: the birth and death of Christ, the usage of the Eucharist, his time in the garden of Gethsemane, his utterings on the cross, his resurrection, and his ascension to heaven.”
‘‘নতুন নিয়মের বিভিন্ন প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যে মোট ৩ লক্ষ বৈপরীত্য বিদ্যমান। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ সকল বৈপরীত্যের (ও সংশোধনের) সবচেয়ে বড় অংশ নতুন নিয়মের পাণ্ডুলিপিগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নিয়ে, অর্থাৎ নতুন নিয়মের যে অংশগুলো খ্রিষ্টান চার্চের আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব ও ধর্মবিশ্বাস নির্ধারণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর ক্ষেত্রে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খ্রিষ্টের জন্ম, মৃত্যু, নৈশভোজ, গেথশামিনি বাগানে যীশুর সময়, ক্রুশের উপর তাঁর বক্তব্য, তাঁর পুনরুত্থান এবং তাঁর ঊর্ধ্বারোহণ।’’
আচারিয়া এস (Acharya S) ‘ঐতিহাসিক যীশু?’ (The Historical Jesus?) প্রবন্ধে লেখেছেন:
“Besides the fact that they date to much later than is supposed, the gospels frequently contradict each other, and, based on the numerous manuscripts composed over the centuries, have been determined (by German theologian Johann Griesbach, for one) to be a mass of some 150,000 "variant readings." In this regard, The Interpreter's Dictionary of the Bible, a Christian book, contains an article written by M.M. Parvis (vol. 4, 594-595), who states: The New Testament is now known, in whole or in part, in nearly five thousand Greek manuscripts alone. Every one of these handwritten copies differ from the other one. It has been estimated that these manuscripts and quotations differ among themselves between 150,000 and 250,000 times. The actual figure is, perhaps, much higher. A study of 150 Greek manuscripts of the Gospel of Luke has revealed more than 30,000 different readings. It is safe to say that there is not one sentence in the New Testament in which the manuscripts' tradition is wholly uniform. Some sources place the figure for the "variant readings" even higher, including The Anchor Bible Dictionary On CD-ROM ("Textual Criticism, NT"), which says, "Perhaps 300,000 differing readings is a fair figure for the 20th century (K.W. Clark 1962: 669)." So much for "God's infallible Word" and his "inspired scribes." Apologists have come up with all sorts of excuses for this man made mess; their excuses only demonstrate further that man's hand - and not that of the Almighty God - has been involved in the creation of Christianity and its texts at every step.”
‘‘ইঞ্জিলগুলো যে সময়ে লেখা বলে দাবি করা হয় তার অনেক পরে এগুলো লেখা। এছাড়া ইঞ্জিলগুলো প্রায়ই একটা অন্যটার বিপরীত তথ্য প্রদান করছে। এগুলোর ভিত্তি হল কয়েক শতাব্দী ধরে সংকলিত অগণিত পাণ্ডুলিপি, যেগুলোর মধ্যে জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ যোহান গ্রিকবার্গের গবেষণা অনুসারে প্রায় ১,৫০,০০০ বৈপরীত্য বা পাঠ-ভিন্নতা বিদ্যমান। খ্রিষ্টধর্মীয় পুস্তক ‘অনুবাদকের বাইবেল অভিধান’ নামক গ্রন্থের মধ্যে এম. এম. পারভিস লিখিত একটা প্রবন্ধ (খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৯৪-৫৯৫) বিদ্যমান। তিনি এ প্রসঙ্গে লেখেছেন: বর্তমানে জানা মতে শুধু নতুন নিয়মের ৫ হাজার গ্রিক পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান। এ সকল হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির প্রত্যেকটা অন্যটার থেকে ভিন্ন। হিসাব করা হয়েছে যে, এ সকল পাণ্ডুলিপি ও উদ্ধৃতির মধ্যে ১,৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ পার্থক্য বিদ্যমান। প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরো অনেক বেশি। শুধু লূক লিখিত সুসমাচারের ১৫০টা গ্রিক পাণ্ডুলিপি অধ্যয়ন করে এগুলোর মধ্যে ৩০ হাজার পাঠ বৈপরীত্য পাওয়া গিয়েছে। নিরাপদেই এ কথা বলা যায় যে, নতুন নিয়মের মধ্যে এমন একটা বাক্যও নেই যার বিষয়ে পাণ্ডুলিপিগুলো পুরোপুরি অভিন্ন পাঠ প্রদান করে। কোনো কোনো তথ্যসূত্রে পাণ্ডুলিপিগুলোর পাঠ-বৈপরীত্য আরো অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছে। অ্যাঙ্কর বাইবেল ডিকশনারি সিডি-রম পাঠ সমালোচনা: নতুন নিয়ম প্রবন্ধ বলছে, বাইবেলের পাঠ-বৈপরীত্যের সংখ্যা সম্ভবত ৩ লক্ষ হবে বলে উল্লেখ করা বিংশ শতাব্দীতে গ্রহণযোগ্য। এটাই হল ‘ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণী’ এবং ‘ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণাপ্রাপ্ত লিপিকারগণের’ অবস্থা। খ্রিষ্টান প্রচারকরা মানব রচিত এ জগাখিচুড়ির বিষয়ে সকল প্রকারের অজুহাত পেশ করেন। তাদের অজুহাতগুলো আবারো নিশ্চিত করে যে, খ্রিষ্টধর্ম এবং খ্রিষ্টধর্মীয় পবিত্র পুস্তকগুলোর সৃষ্টির সকল ধাপেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নয়, মানুষের হাত সম্পৃক্ত ছিল।’’[4]
[2] Ehrman, B. Misquoting Jesus: The Story Behind Who Changed the Bible and Why (2007), Harper San Francisco, New York, p 89-90. Cited by Louay Fatoohi, The Mystery of the Historical Jesus, p 23.
[3] http://www.rotten.com/library/religion/bible/historical-construction/catholic-distortions/
[4] http://www.truthbeknown.com/historicaljc.htm