বাইবেলের পুস্তকগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা এই যে, এগুলোর প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। পুস্তকগুলো যাদের লেখা তাদের স্বহস্তে লেখা পাণ্ডুলিপি তো দূরের কথা তাদের কয়েক শতাব্দী পরে লেখা পাণ্ডুলিপিও পাওয়া যায় না। পুরাতন বা নতুন নিয়মের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিগুলো ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও গবেষকদের দাবি অনুসারে ৪র্থ শতাব্দী বা তার পরে লেখা।
খ্রিষ্টান গবেষকরা অনেক সময় প্রাচীন গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্য কর্মের সাথে ধর্মগ্রন্থের তুলনা করে বলেন যে, প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যিক হোমার (আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দী) রচিত ইলিয়ড, ওডেসিস ইত্যাদি গ্রন্থ এবং প্রাচীন গ্রিক ট্রাজেডিয়ান ইউরিপিডিস (খৃস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী) রচিত গ্রন্থগুলোর ক্ষেত্রে লেখকদের কয়েক শতাব্দী পরের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় এবং পাণ্ডুলিপির সংখ্যাও কম। সে তুলনায় নতুন নিয়মের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা বেশি এবং লেখকদের এবং পাণ্ডুলিপির মধ্যে সময়ের ব্যবধান মাত্র কয়েক শত বছর।
ইতিহাস বা সাহিত্য কর্মের সাথে ধর্মগ্রন্থের তুলনা এবং হোমার (Homer) বা ইউরিপিডিস (Euripides)-এর সাথে যীশু খ্রিষ্টের তুলনা একেবারেই বেমানান ও অগ্রহণযোগ্য। পাঠক, নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:
প্রথমত: প্রথম দুজন অনেক প্রাচীন, পক্ষান্তরে যীশু খ্রিষ্ট অনেক পরের মানুষ। তার যুগে গ্রন্থ লেখা ও সংরক্ষণের প্রচলন ব্যাপকতর ছিল।
দ্বিতীয়ত: হোমার, ইউরিপিডিস বা অন্যান্য সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিকের হাজার হাজার অনুসারী ছিলেন না যারা তাদের পুস্তকগুলো নিয়মিত অধ্যয়ন করতেন। পক্ষান্তরে যীশু খ্রিষ্টের হাজার হাজার অনুসারী ছিলেন। প্রথম শতাব্দীগুলোতে ইঞ্জিল বলে কোনো পুস্তকের প্রচলন থাকলে স্বভাবতই তার অনেক পাণ্ডুলিপি পাওয়া যেত।
তৃতীয়ত: ইতিহাস বা সাহিত্যের সাথে ধর্মগ্রন্থের তুলনা চলে না। ধর্মগ্রন্থের একটা শব্দের হেরফেরের কারণে বিশ্বাসীদের মধ্যে দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তি হয়। ধর্মগ্রন্থের একটা শব্দের হেরফেরে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভ্রান্তি ও ঈশ্বর-বিমুখতায় লিপ্ত হয়ে পার্থিব জীবনের পাশাপাশি পারলৌকিক অনন্ত জীবন হারায়। কাজেই যে ধর্মগ্রন্থের আক্ষরিক বিশুদ্ধতা নিশ্চিত নয় তাকে ঐতিহাসিক বা সাহিত্যিক কর্ম হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।
চতুর্থত: হোমার, ইউরিপিডাস ও অন্যান্য প্রাচীন লেখকদের গ্রন্থাবলির বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে পার্থক্য ও ভিন্নতা খুবই কম। এর বিপরীতে বাইবেলের পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যকার ভিন্নতা ও বৈপরীত্য অনেক বেশি।[1]