১. ৫. ৬. অনুবাদে বিকৃতির আরো কিছু নমুনা

প্রথম নমুনা: ‘গীতসংহিতা’ বা জবুর শরীফের ৮২/৬ কিং জেমস ভার্শন (King James Version: KJV) বা অথোরাইজড ভার্শন (Authorized Version: AV)-এ নিম্নরূপ: “I have said, Ye are gods; and all of you are children of the Most High”: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, এবং তোমাদের সকলেই শ্রেষ্ঠতমের সন্তান’’। রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন (Revised Standard Version: RSV)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ: “I say, you are gods, sons of the Most High, all of you” : ‘‘আমি বলি, তোমরা ঈশ্বর, শ্রেষ্ঠতমের পুত্র, তোমরা সকলেই’’।

কেরি: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, তোমরা সকলে পরাৎপরের সন্তান।’’ জুবিলী: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঐশীজীব! তোমরা সবাই পরাৎপরের সন্তান।’’ পবিত্র বাইবেল ২০০০: ‘‘আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন ঈশ্বর, তোমরা সবাই মহান ঈশ্বরের সন্তান।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস ২০০৬: ‘‘আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন আল্লাহ, তোমরা সবাই আল্লাহ তা’লার সন্তান।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস ২০১৩: ‘‘আমিই বলেছি, তোমরা দেবতা, তোমরা সকলে সর্বশক্তিমানের সন্তান।’’

মূল ইংরেজি পাঠ থেকে সুস্পষ্ট যে, এখানে মানুষদেরকে, সকল মানুষকে সুস্পষ্টভাবে ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছে। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, বাইবেলীয় পরিভাষায় কাউকে ঈশ্বর বলা বা ঈশ্বরের পুত্র বলা দ্বারা কোনো দেবত্ব বা ঈশ্বরত্ব বুঝায় না; বরং ঈশ্বরের দাস ও সৃষ্টি বুঝায়। কেরির বাংলা অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। তবে অন্যান্য অনুবাদে মানুষকে ঈশ্বর বলার বিষয়টা অস্পষ্ট করা হয়েছে। জুবিলী বাইবেল ও মুকাদ্দস-১৩ ‘ঐশীজীব’ ও ‘দেবতা’ শব্দ ব্যবহার করেছে। আর অন্য দুই অনুবাদে ‘যেন’ শব্দটা অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় নমুনা: বাইবেলের Proverbs নামের পুস্তকটার বাংলা নাম কেরি বাইবেলে ‘হিতোপদেশ’, জুবিলী বাইবেলে ‘প্রবচনমালা’ এবং কিতাবুল মোকাদ্দসে ‘মেসাল’। এ পুস্তকের ২৬ অধ্যায়ের ৪ ও ৫ শ্লোক নিম্নরূপ: ‘‘Answer not a fool according to his folly, lest thou also be like unto him.  Answer a fool according to his folly, lest he be wise in his own conceit’’: ‘‘মুর্খকে উত্তর দিও না তার মুর্খতা অনুসারে; পাছে তুমিও তার মতই হয়ে যাও। মুর্খকে উত্তর দাও তার মুর্খতা অনুসারে; পাছে সে তার অহমিকায় জ্ঞানী হয়।’’

কেরির অনুবাদ: ‘‘(৪) হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দিও না, পাছে তুমিও তাহার সদৃশ হও। (৫) হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দেও, পাছে সে নিজের দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হয়।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ কেরির অনুরূপ।

জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘নির্বোধকে তার মুর্খতা অনুসারে উত্তর দিয়ো না, পাছে তুমিও তার মত হও। নির্বোধকে তার মুর্খতা অনুসারেই উত্তর দাও, পাছে সে নিজেকে প্রজ্ঞাবান মনে করে।’’

এর বিপরীতে পবিত্র বাইবেল ২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনকে তার বোকামি অনুসারে জবাব দিয়ো না, জবাব দিলে তুমিও তার মত হয়ে যাবে। প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনকে তার বোকামি অনুসারে জবাব দিয়ো, তা না হলে সে তার নিজের চোখে নিজেকে জ্ঞানী মনে করবে।’’

এখানে ‘প্রয়োজন বোধে’ শব্দদুটো সংযোজন করা হয়েছে। বস্ত্তত বাইবেল সমালোচকরা এ দুটো শ্লোককে বাইবেলীয় বৈপরীত্যের সুস্পষ্ট নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ, একই পুস্তকের একই অধ্যায়ের পাশাপাশি দুটো শ্লোকে সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দুটো আদেশ দেওয়া হয়েছে: প্রথম আদেশ: নির্বোধকে তার নির্বুদ্ধিতা অনুসারে উত্তর দিয়ো না। দ্বিতীয় আদেশ: নির্বোধকে তার নির্বুদ্ধিতা অনুসারে উত্তর দাও।

খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা বিভিন্নভাবে এ বৈপরীত্যের উত্তর প্রদান করেছেন। কিন্তু কেউই পাক কিতাবের মধ্যে দুটো শব্দ সংযোজন করার সাহসিকতা দেখাননি। কিন্তু বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদকরা সে সাহস দেখালেন। প্রাচীন কাল থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা এরূপ সংযোজনের সময় বন্ধনী ব্যবহার করতেন। বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসের সম্পাদকরা ‘প্রয়োজন বোধে’ দুটো শব্দ পবিত্র পুস্তকের মধ্যে সংযোজন করার জন্য এরূপ কোনো বন্ধনীরও ‘প্রয়োজন বোধ’ করেননি।

তৃতীয় নমুনা: মথি ৫/৩৯ KJV: “ye resist not evil...” (তোমরা দুষ্ট/পাপী/মন্দ/বদমাইশ লোককে প্রতিরোধ করো না) RSV: Do not resist one who is evil... (যে ব্যক্তি দুষ্ট/ মন্দ/ পাপী/ বদমাইশ তাকে তোমরা প্রতিরোধ করো না।) কেরি ও কিতাবুল মোকদ্দস-২০১৩: ‘‘তোমরা দুষ্টের প্রতিরোধ করিও না; (বরং যে কেউ তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল তাহার দিকে ফিরাইয়া দেও।)’’ জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘দুর্জনকে প্রতিরোধ করো না...।’’

এর বিপরীতে পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই করো না...’’

পাঠক হয়ত বলবেন, অর্থ তো কাছাকাছিই! কিন্তু ধর্মগ্রন্থের মূল পাঠে কি লেখা আছে? ‘‘তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই করো না’’? এ কথাটার ইংরেজি কী? পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে এরূপ সংযোজন ও বিয়োজন কি অনুবাদের বিশ্বস্ততা ও ধর্মগ্রন্থের পবিত্রতা রক্ষা করে?

প্রকৃত বিষয় হল, যীশুর এ বাক্যটা অনেক সমালোচনা কুড়িয়েছে। দুষ্টকে প্রতিরোধ না করলে সমাজ টিকবে কি করে? সম্ভবত এজন্য অনুবাদকরা অর্থকে সহনীয় করার চেষ্টা করেছেন। তবে এতে পবিত্র পুস্তকের অর্থ বিকৃতি ছাড়া কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ এক্ষেত্রেও প্রশ্ন একই থাকে। আমাদের সন্তানদেরকে কি আমরা এটাই শিক্ষা দেব? তোমাদের কেউ মারলে, অত্যাচার করলে, ধর্ষণ করলে, পকেট মারলে.... তোমরা তার বিরুদ্ধে কিছুই বলবে না? বরং আরেকবার অপরাধটা করার সুযোগ দেবে?

চতুর্থ নমুনা: মথি ২৫/১৫ নিম্নরূপ: KJV: And unto one he gave five talents, to another two, and to another one; RSV: to one he gave five talents, to another two, and to another one...

কেরি এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত, অন্য জনকে দুই তালন্ত, এবং আর এক জনকে এক তালন্ত ... দিলেন।’’

জুবিলী বাইবেল: ‘‘একজনকে তিনি পাঁচশ’ মোহর, অন্যজনকে দু’শো মোহর, ও আর একজনকে একশ’ মোহর ... দিলেন।’’

পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘তিনি একজনকে পাঁচহাজার, একজনকে দু’হাজার ও একজনকে এক হাজার টাকা দিলেন।’’

আমরা জানি না, বাইবেল সোসাইটিগুলোর নিকট শত ও হাজার একই সংখ্যা কি না! তবে আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। তালন্ত (talent) যেহেতু প্রাচীন মুদ্রা, সেহেতু টীকায় তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে ‘এক তালন্ত’-কে ইচ্ছামত ‘এক শত টাকা’ বা ‘এক হাজার টাকা’ বলে অনুবাদ করা মোটেও গ্রহণযোগ্য  অনুবাদ বলে গণ্য নয়।

পঞ্চম নমুনা: মার্ক ১৬/১৫: KJV: Go ye into all the world, and preach the gospel to every creature. RSV: Go into all the world and preach the gospel to the whole creation

উভয় ভার্শনের অর্থ এক। কেরি এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার/তবলিগ কর।’’ জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘তোমরা বিশ্বজগতে বেরিয়ে পড়, সমস্ত সৃষ্টির কাছে সুসমাচার প্রচার কর।’’ কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬-এর অনুবাদ: ‘‘তোমরা দুনিয়ার সব জায়গায় যাও এবং সব লোকদের কাছে আল্লাহর দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ কর।’’

এখানে every creature/ the whole creation বা ‘প্রত্যেক সৃষ্টি/ সকল সৃষ্টি’ বাক্যাংশের অনুবাদ করা হয়েছে: ‘সব লোকদের’। এ অনুবাদের মাধ্যমে যীশুর মূল নির্দেশ পরিবর্তন করা হয়েছে। সৃষ্টি আর লোক এক নয়। সৃষ্টি অর্থ মানুষ ও অন্যান্য সকল সৃষ্টি। পক্ষান্তরে লোক বলতে মানুষ বুঝানো হয়। ইংরেজিতে সব লোকদের বুঝাতে ‘every man, every person/ all people’ ইত্যাদি বলা হবে।

বাহ্যত এ পরিবর্তনের বাহ্যিক কারণ বাইবেল সমালোচকদের তীর। তারা বলেন, যীশু সকল সৃষ্টির কাছে গসপেল বা ইঞ্জিল প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। আর সৃষ্টি বলতে মাছ, পাখি, সাপ, বিচ্ছু সবই বুঝায়। খ্রিষ্টান প্রচারকরা কখনোই এগুলোর কাছে ইঞ্জিল প্রচার করেন না! এ সমালোচনা থেকে বাঁচতেই সম্ভবত এরূপ বিকৃতি। গ্রহণযোগ্য ধর্মগ্রন্থের জন্য যীশুর নির্দেশকে অবিকৃতি রেখে ব্যাখ্যা করাই কি উত্তম ছিল না?

ষষ্ঠ নমুনা: ‘লূক’ ৯/২৮: KJV: And it came to pass about an eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up into a mountain to pray. RSV: Now about eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up on the mountain to pray.

কেরির অনুবাদ: এই সকল কথা বলিবার পরে, অনুমান আট দিন গত হইলে তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে লইয়া প্রার্থনা করিবার জন্য পর্বতে উঠিলেন।’’ জুবিলী বাইবেল ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ সংস্করণের অনুবাদেও ‘আনুমানিক আট দিন’ বলা হয়েছে। কিন্তু পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬-এ (eight days)-এর অনুবাদে ‘এক সপ্তাহ’ বলা হয়েছে।

পবিত্র বাইবেল-২০০০: ‘‘এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তা পরে যীশু প্রার্থনা করবার জন্য পিতর, যোহন ও যাকোবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তা পরে ঈসা মুনাজাত করবার জন্য পিতর, ইউহোন্না ও ইয়াকুবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।’’

আমরা জানি না, অনুবাদকদের কাছে এক সপ্তাহ এবং আট দিন একই কিনা অথবা তাদের সপ্তাহ আট দিনে হয় কি না! তবে মূল ভাষ্যের ‘৮ দিন’ কথাকে এভাবে ইচ্ছমত এক সপ্তা বানানো কখনোই গ্রহণযোগ্য অনুবাদ নয়।

সপ্তম নমুনা: লূক ১০/১৯: KJV: Behold, I give unto you power to tread on serpents and scorpions, and over all the power of the enemy: and nothing shall by any means hurt you. RSV: Behold, I have given you the authority to tread on serpents and scorpions and over all the power of the enemy: and nothing shall by hurt you.

পাঠক দেখছেন যে উভয় সংস্করণের অর্থ: ‘‘দেখ, আমি তোমাদেরকে সাপ ও বিচ্ছুর উপর দিয়ে হেঁটে যাবার ক্ষমতা দিয়েছি এবং শত্রুর সকল শক্তির উপরে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছি। কোনো কিছুই কোনোভাবে তোমাদের ক্ষতি করবে না।’’

কেরি: ‘‘দেখ, আমি তোমাদেরকে সর্প ও বৃশ্চিক পদতলে দলিত করিবার, এবং শত্রুর সমস্ত শক্তির উপর কর্তৃত্ব করিবার ক্ষমতা দিয়াছি। কিছুতেই কোনো মতে তোমাদের কোনো হানি করিবে না।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ কেরির অনুরূপ।

পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘আমি তোমাদেরকে সাপ ও বিছার উপর দিয়ে হেঁটে যাবার ক্ষমতা দিয়েছি এবং তোমাদের শত্রু শয়তানের সমস্ত শক্তির উপরেও ক্ষমতা দিয়েছি। কোনো কিছুই তোমাদের ক্ষতি করবে না।’’

এখানে ‘শয়তান’ শব্দটা অনুবাদের মধ্যে সংযোজন করা হয়েছে যা এ শ্লোকের মূল পাঠে কোথাও নেই। এ শ্লোকটা নিয়ে অনেক আপত্তি বিদ্যমান। যীশুর প্রেরিতগণ ও শিষ্যরা কখনোই শত্রুদের উপর ক্ষমতা পাননি। ইহুদি ও রোমানরা তাদের ইচ্ছামত নির্যাতন ও হত্যা করেছেন। বাহ্যত এ আপত্তি থেকে বাঁচার জন্য এ শব্দকে সংযোজন করা হয়েছে। এভাবে পবিত্র পুস্তকের মধ্যে একটা শব্দ যোগ করা হয়েছে। অথচ পবিত্র পুস্তকের শেষ কথা: যদি কেউ পবিত্র পুস্তকের মধ্যে একটা শব্দও যোগ করে তবে পবিত্র পুস্তকের সকল অভিশাপ ও গযব তার জন্য যোগ করা হবে! আর এরূপ ‘অভিশপ্ত’ সংযোজন দ্বারা তাঁরা আপত্তি খণ্ডন করতে পারেননি। কারণ, যীশুর দেওয়া এ ক্ষমতা ১২ প্রেরিতের একজন ইস্করিয়োতীয় যিহূদার কোনোই উপকার করতে পারেনি। শয়তান তাকে পুরোপুরিই গ্রাস করে।

অষ্টম নমুনা: নতুন নিয়মের চতুর্থ পুস্তক যোহন বা ইউহোন্না। যোহন ১২/২৫ ইংরেজিতে নিম্নরূপ: KJV: “He that loveth his life shall lose it; and he that hateth his life in this world shall keep it unto life eternal”. RSV: “He wjp loves his life loses it; and he who hates his life in this world will keep it for eternal life.” উভয় ভার্শনেই অর্থ: ‘‘যে তার নিজ জীবন/ প্রাণ ভালবাসবে সে তা হারাবে; এবং যে এ জগতে তার নিজের জীবন ঘৃণা করবে সে অনন্ত জীবনের জন্য তা সংরক্ষণ করবে।’’

কেরির অনুবাদ: ‘‘যে আপন প্রাণ ভালবাসে সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের জন্য তাহা রক্ষা করিবে।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ কেরির অনুবাদের অনুরূপ।

পবিত্র বাইবেল-২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ নিম্নরূপ: ‘‘যে নিজের প্রাণকে বেশী ভালবাসে সে তার সত্যিকারের জীবন হারায়, কিন্তু যে এই দুনিয়াতে তা করে না সে তার সত্যিকারের জীবন অনন্ত জীবনের জন্য রক্ষা করবে।’’

আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলানুগ। শুধু ‘হেট’ বা ঘৃণা করাকে ‘অপ্রিয় জ্ঞান করা’ লেখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী অনুবাদ খুবই  একেবারেই ভিন্ন অর্থবাহী। সম্পূর্ণ  অপ্রাসঙ্গিকভাবে মূল অর্থ পরিবর্তন করে ‘বেশী’ শব্দটা যোগ করা হয়েছে। একইভাবে মূল বক্তব্য বিনষ্ট করে ‘সত্যিকারের জীবন’ শব্দদু’টো যোগ করা হয়েছে। আর হেট বা ঘৃণা করা শব্দটা বেমালুম চেপে যেয়ে ‘তা না করে’ বলা হয়েছে। ‘তা না করা’ অর্থাৎ কোনো কিছুকে ‘বেশি ভাল না বাসা’ কি ‘হেট’ বা ঘৃণা করার সমার্থক? বিশ্বের কোনো ভাষায় কি তা আছে? কোনো বিবেকবান মানুষ কি তা বলবেন? আমি আমার কোনো বন্ধুকে কম ভালবাসি- এর অর্থ কি আমি তাকে ঘৃণা করি?

কোনো ছাত্র যদি গ্রামার পরীক্ষায় এরূপ স্বাধীন বা স্বেচ্ছাচারী ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ অনুবাদ করে তবে শিক্ষক কিভাবে তার মূল্যায়ন করবেন? কোনো আর্থিক বা রাজনৈতিক ডকুমেন্টের এরূপ অনুবাদ করা হলে তা কি ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করা হবে না? এরূপ বিকৃতির কারণ বুঝতে পারা পাঠকের জন্য হয়ত কঠিন হতে পারে। ইঞ্জিলের এ বক্তব্যটা আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচুর সমালোচনা কুড়িয়েছে। কারণ নিজের জীবনকে ভালবাসা সহজাত মানবীয় প্রকৃতি। কাউকে বলা যায় যে, তুমি জীবনের চেয়ে দেশ, রাষ্ট্র, ধর্ম বা ঈশ্বরকে বেশি ভালবাসবে। কিন্তু এ কথা বলা যায় না যে, জীবনকে ভালবাসলেই তুমি চাকরি বা অনন্ত জীবন হারাবে। এজন্য যীশুর নামে কথিত বক্তব্যটা খুবই আপত্তিকর।

অন্যদিকে অনন্ত জীবন লাভ করতে জীবনকে ঘৃণা করতে হবে কথাটাও একই রকম অগ্রহণযোগ্য। কেউ যদি জীবনকে ঘৃণা-ই করে তবে তাকে অনন্তকালের জন্য রক্ষার চেষ্টা করবে কেন? জীবনের প্রতি প্রেমই তো তাকে তা অনন্তকালের জন্য রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। জীবনের প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুস্থ ও অপ্রকৃতস্থ করে।[1]

বস্ত্তত যীশুর নামে ইঞ্জিলের মধ্যে লিখিত অনেক কথাই এধরনের প্রান্তিক। দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিষ্টান সন্ন্যাসী ও জ্ঞানবাদী বা ‘মারফতি’ (gnostic) সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে এসব ‘প্রান্তিক’ আবেগী কথাগুলো খুবই বাজার পেত। সম্ভবত এগুলো যীশুর নামে বানানো কথা। সর্বাবস্থায় এগুলোর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, কিন্তু মূল বক্তব্যের মধ্যে মানবীয় ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়ে তাকে যীশুর বা ঈশ্বরের কথা বলে চালানো কি ধর্ম, মানবতা, বিবেক বা জাগতিক আইনে গ্রহণযোগ্য?

নবম নমুনা: রোমীয় ৩/৭: KJV: “For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner?” (তার গৌরবের প্রতি আমার মিথ্যায় ঈশ্বরের সত্য যদি অধিকমাত্রায় উপচে পড়ে তবে আমি কেন পাপী বলে বিচারিত হই?)। RSV: But if through my false-hood God’s truthfulness abounds to his goory, why am I still being cindermned as a sinner? (যদি আমার মিথ্যাচারিতার মাধ্যমে ঈশ্বরের সত্যবাদিতা তাঁর মর্যাদায় উপচে পড়ে তবে এরপরও আমিও কেন পাপী বলে নিন্দিত হচ্ছি?)

কেরির অনুবাদ: ‘‘কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন?’’

কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি আল্লাহর সত্য তাঁর গৌরবার্থে উপচে পড়ে, তবে আমিও বা এখন গুনাহগার বলে আর বিচারের সম্মুখীন হচ্ছি কেন?’’

জুবিলী বাইবেল: ‘‘কিন্তু আমার মিথ্যাচারিতায় যদি ঈশ্বরের সত্যনিষ্ঠা তাঁর গৌরবার্থে উপচে পড়ে, তবে আমি কেনই বা এখনও পাপী বলে বিবেচিত হচ্ছি?’’

পবিত্র বাইবেল ২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস ২০০৬: ‘‘কেউ হয়ত বলবে, আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরও ভালভাবে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বর/ আল্লাহ সত্যবাদী। এতে যখন ঈশ্বর/ আল্লাহ গৌরব লাভ করেন তখন পাপী/ গুনাহগার বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?’’

সম্মানিত পাঠক, আপনি দেখছেন যে, ‘কেউ হয়ত বলবে’ কথাটুকু এ শ্লোকের কোনো ইংরেজি পাঠে নেই, প্রথমে উদ্ধৃত বাংলা অনুবাদেও নেই।সর্বশেষ দুটো অনুবাদে ‘কেউ হয়ত বলবে’ কথাটুকু সংযোজন করে পুরো বক্তব্যের অর্থই পরিবর্তন করা হয়েছে।

মূলত সাধু পল তার বিভিন্ন পত্রে বারবার বলেছেন যে, তিনি বহুরূপী। ঈশ্বরের ধর্ম বিস্তারের স্বার্থে তিনি প্রত্যেকের মন জুগিয়ে ভিন্ন কথা বলেন বা মিথ্যা কথা বলেন (দেখুন ১ করিন্থীয় ৯/ ১৯-২২)। এ কথাটাই তিনি এখানে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। কিন্তু একটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বাক্যাংশ সংযোজন করে মূল কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা হয়েছে। বাহ্যত তাঁর স্বস্বীকৃত মিথ্যাচার অস্পষ্ট করার জন্যই এরূপ করা হয়েছে।

দশম নমুনা: করিন্থীয়দের প্রতি প্রেরিত পলের ১ম পত্রের ১৫ অধ্যায়ে পল যীশু খ্রিষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর যে সকল শিষ্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। ১৫ অধ্যায়ের ৫ম শ্লোকটা KJV ও RSV এবং সকল বাইবেলে: “And that he was seen of Cephas, then of the twelve”

কেরি ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন।’’

পবিত্র বাইবেলে ২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘আর তিনি পিতরকে এবং পরে তাঁর প্রেরিতদের/ সাহাবীদের দেখা দিয়েছিলেন।’’

প্রথম অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। কিন্তু দ্বিতীয় অনুবাদে ‘the twelve’ বা ‘সেই বারোজন’ পরিবর্তন করে ‘প্রেরিতদের’ এবং ‘সাহাবীদের’ লেখা হয়েছে। এভাবে মূলের পরিবর্তন ছাড়াও অসাধু সম্পাদনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

এখানে সাধু পল ভুল করেছেন। যীশু মৃত্যু থেকে উঠার পরে যখন প্রেরিতদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তখন ‘সেই বারো’ জনের একজন ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা মৃত্যু বরণ করেছিলেন। ফলে প্রেরিতদের সংখ্যা ছিল ১১ জন। এজন্য সাধু পলের কথাটা এখানে ভুল। এ ভুল দ্বারা প্রমাণ হয় যে, সাধু পল পবিত্র আত্মার সাহায্যে তাঁর পত্রগুলো লেখেননি। বরং সাধারণ একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবেই লেখেছেন। এজন্য তাঁর ভুল হত। বাহ্যত এ ভুলটা লুকানোর জন্য মূলকে পরিবর্তন করা হয়েছে।

একাদশ নমুনা: করিন্থীয়দের প্রতি প্রেরিত পলের দ্বিতীয় পত্রের শেষে (১৩/১২) পল লেখেছেন: ‘‘Greet one another with an holy kiss: একে অপরকে সালাম জানাবে একটা পবিত্র চুমু দিয়ে।’’ কেরির অনুবাদ: ‘‘পবিত্র চুম্বনে পরস্পরকে মঙ্গলবাদ কর।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘পবিত্র চুম্বনে পরস্পরকে সালাম জানাও।’’ কিন্তু পবিত্র বাইবেল ২০০০ এবং  কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদ: ‘‘মহববতের মনোভাব নিয়ে তোমরা একে অপরকে সালাম জানায়ো।’’

সুপ্রিয় পাঠক, অনুবাদটা কেমন মনে হচ্ছে? পরীক্ষার খাতায় যদি কেউ লেখে যে, ‘holy kiss’-এর অর্থ ‘মহববতের মনোভাব’ তবে নিরপেক্ষ পরীক্ষক তাকে কেমন নম্বর দেবেন? কোনো মামলা-মোকদ্দমার কাগজে ‘kiss’-এর অনুবাদে মহববতের মনোভাব লেখলে কি বিচারক সঠিক বিচার করতে পারবেন? এ অনুবাদটা শুধু বিকৃতই নয়; উপরন্ত এতে ধর্মগ্রন্থের শিক্ষাকেও বিকৃত করা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থ নির্দেশ দিচ্ছে ‘চুম্বন’-এর দ্বারা ‘সালাম’ দিতে। অথচ ‘কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬’ পাঠ করে কোনো খ্রিষ্টানই ঈশ্বরের এ পবিত্র নির্দেশ বুঝতে বা পালন করতে পারবেন না।

দ্বাদশ নমুনা: নতুন নিয়মের ঊনবিংশ পুস্তক ‘ইব্রীয়’। বিগত প্রায় দু’ হাজার বছর যাবৎ পত্রটা সাধু পলের লেখা বলে প্রচার করা হয়েছে। বর্তমানে বাইবেল সোসাইটিগুলো পত্রটা বেনামি ও অজ্ঞাতপরিচয় লেখকের লেখা বলে প্রচার করছেন। এ পত্রের ৬ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোক কিং জেমস ভার্শন (KJV)-এ নিম্নরূপ: “Therefore leaving the principles of the doctrine of Christ, let us go on perfection” (অতএব, খ্রিষ্টের শিক্ষার মূলনীতিগুলো পরিত্যাগ করে আসুন আমরা পূর্ণতার দিকে গমন করি) রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন (RSV) নিম্নরূপ: “Therefore let us leave the elementrary doctrine of Christ and go on to maturity” (অতএব আসুন আমরা খ্রিষ্টের প্রাথমিক শিক্ষা পরিত্যাগ করি এবং পরিপক্কতার দিকে গমন করি)।

এখানে সাধু পলের (বা অজ্ঞাতপরিচয় লেখকের?) বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। তিনি বলছেন যে, খ্রিষ্টের শিক্ষা ছিল প্রাথমিক এবং সাধু পলের (বা অজ্ঞাত লেখকের?) শিক্ষা উন্নত স্তরের। কাজেই প্রাথমিককে পিছে রেখে উন্নত স্তরে এগিয়ে যেতে হবে।

সম্মানিত পাঠক যদি biblegateway.com ওয়েবসাইটে ইব্রীয় ৬/১-এর সকল ইংরেজি মিলিয়ে পড়েন[2] তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হবেন। যদিও কোনো কোনো ইংরেজি অনুবাদে বিষয়টাকে কিছুটা অস্পষ্ট করা হয়েছে, অধিকাংশ অনুবাদেই বিষয়টা সুস্পষ্ট। যেমন এমপিস্নফাইড বাইবেল (Amplified Bible)-এর পাঠ নিম্নরূপ:

Therefore let us go on and get past the elementary stage in the teachings and doctrine of Christ (the Messiah), advancing steadily toward the completeness and perfection that belong to spiritual maturity. ‘‘অতএব, এস, আমরা খ্রিষ্টের নীতি ও শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পিছনে রেখে চলে যাই, স্থিরভাবে এগিয়ে যাই পূর্ণতা ও উৎকর্ষতার দিকে, যা আধ্যাত্মিক পরিপক্কতার অন্তর্ভুক্ত।’’

পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, যীশুর শিষ্যরা অনেকেই যীশুর শিক্ষা অনুসারে তৌরাতের শরীয়ত পালন করাকে গুরুত্ব দিতেন। পক্ষান্তরে সাধু পল শরীয়ত পালনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এজন্য শিষ্যরা অনেকেই পলের বিরোধিতা করেছেন। এ বিরোধিতাকে পাশ কাটাতে তিনি এখানে ‘ খ্রিষ্টান’ বা ‘খ্রিস্টীয় শিক্ষাকে’ প্রাথমিক ও পূর্ণতার পরিপন্থী এবং তাঁর নিজের পলীয় শিক্ষাকে পূর্ণতর বলে দাবি করেছেন। অর্থাৎ যীশু খ্রিষ্ট প্রাইমারি ও সাধু পল বিশ্ববিদ্যালয়!

কিন্তু বাংলা অনুবাদে বিষয়টা অস্পষ্ট। কেরির অনুবাদ: ‘‘অতএব আইস, আমরা খ্রিষ্ট বিষয়ক আদিম কথা পশ্চাতে ফেলিয়া সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর হই।’’ জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ নিম্নরূপ: ‘‘সুতরাং এসো, খ্রিষ্ট বিষয়ক প্রাথমিক শিক্ষা পাশে রেখে আমরা সিদ্ধতার কথার দিকে এগিয়ে যাই।’’ পবিত্র বাইবেল ২০০০: ‘‘এইজন্য খ্রিষ্টের বিষয়ে প্রথমে যে শিক্ষা পেয়েছি, এস, তা ছাড়িয়ে আমরা পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাই।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘এজন্য মসীহের বিষয়ে প্রথমে যে শিক্ষা পেয়েছি, এস, তা ছাড়িয়ে আমরা পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাই।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘অতএব এসো, আমরা মসীহ বিষয়ক প্রাথমিক শিক্ষার কথা পিছনে ফেলে পরিপক্কতা লাভের চেষ্টায় অগ্রসর হই।’’

যদিও সকল সম্পাদনার পরেও এ বক্তব্য নিশ্চিত করছে যে, যীশুর বিষয়ে প্রথমে যে শিক্ষা যীশুর প্রেরিতরা ও যীশুকে স্বচক্ষে দেখা শিষ্যরা প্রচার করেছিলেন সেগুলো পূর্ণতার পরিপন্থী, বাতিলযোগ্য ও পলীয় ধারার শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক।

বাইবেলের বঙ্গানুবাদে এরূপ হেরফের অগণিত। সবচেয়ে অবাক বিষয় যে, এরূপ বিকৃতি সবই ধার্মিক মানুষেরা করছেন, যারা পবিত্র বাইবেলকে অভ্রান্ত ঐশী বাণী বলে বিশ্বাস করেন। আর বাইবেলের মধ্যেই মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মিথ্যাবাদীকে চির জাহান্নামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, বাইবেলের মধ্যে সামান্যতম সংযোজন বা বিয়োজন নিষেধ করা হয়েছে এবং কেউ এরূপ করলে তার জন্য ভয়ঙ্করতম অভিশাপ ও পরিণতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। (লেবীয় ১৯/১১; হিতোপদেশ ১২/২২, মথি ১২/৩১-৩২, প্রকাশিত বাক্য ২১/৮, ২২/১৮-১৯)

সর্বাবস্থায়, বঙ্গানুবাদের এ হেরফেরের কারণে আমরা বাইবেলের বাংলা উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে কেরির অনুবাদের উপর নির্ভর করব। সহজবোধ্য হওয়ার জন্য কখনো কখনো পরবর্তী অনুবাদের উপরও নির্ভর করব। পাশাপাশি ইংরেজি অথোরাইজড ভার্শন/কিং জেমস ভার্শন (AV/KJV), রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভার্শন (RSV) ও অন্যান্য ইংরেজি অনুবাদের সহায়তা গ্রহণ করব।

[1] http://www.thegodmurders.com/id90.html
[2] https://www.biblegateway.com/verse/en/Hebrews%206:1