উপরে আমরা দেখলাম যে, ওয়র্শিপ শব্দটার অর্থ ইবাদত, পূজা, প্রণিপাত বা সাজদা করা। কিন্তু বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসে শব্দটার অর্থ বহুভাবে হেরফের করা হয়েছে। এ হেরফেরের সর্বশেষ রূপ যীশুর ক্ষেত্রে ওয়র্শিপ সালাম করা, সম্মান দেখানো, কদমবুসি করা ইত্যাদি থেকে হঠাৎ করেই ‘সেজদা করা’ বা ‘উপুড় হয়ে সেজদা করা’ হয়ে গেল। কয়েকটা নমুনা দেখুন:
মথি ১৪/৩৩: ‘‘Then they that were in the ship came and worshipped him, saying...’’। কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘যাঁরা নৌকার মধ্যে ছিলেন তাঁরা ঈসাকে সেজদা করে বললেন, সত্যিই আপনি ইবনুল্লাহ।’’
মথি ২৮/৯: ‘‘And they came and held him by the feet, and worshipped him’’। কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘তখন সেই স্ত্রীলোকেরা তাঁর কাছে গিয়ে পা ধরে তাঁকে সেজদা করলেন।’’
মথি ২৮/১৭: ‘‘And when they saw him, they worshipped him: but some doubted’’। কি. মো.: ‘‘সেখানে ঈসাকে দেখে তাঁরা তাঁকে সেজদা করলেন, কিন্তু কয়েকজন সন্দেহ করলেন।’’ (বাইবেল-২০০০: প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন)
লূক ২৪/৫২: ‘‘And they worshipped him’’। কি. মো: ‘‘তখন তারা উবুড় হয়ে তাঁকে সেজদা করলেন।’’ (বা.-০০: উপুড় হয়ে প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন)
যোহন/ইউহোন্না ৯/৩৮: ‘‘And he said, Lord, I believe. And he worshipped him’’। কি. মো: ‘‘তখন লোকটি বলল, ‘হুজুর, আমি ঈমান আনলাম।’ এই বলে সে ঈসাকে সেজদা করল।’’ (প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন)
বাহ্যত যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণের জন্যই ওয়র্শিপ শব্দের অনুবাদে এরূপ লুকোচুরি। যে শব্দটার অর্থ প্রণাম করা, সালাম করা ইত্যাদি লেখা হল, অবিকল সে শব্দটাই যীশুর ক্ষেত্রে ‘প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান জানান’ বা ‘সাজদা করা’ হয়ে গেল!! অথচ যীশুকে যেভাবে ওয়র্শিপ, সাজদা বা ‘প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান’ করা হয়েছে এরূপ ‘ওয়র্শিপ’ বাইবেলের নবী ও ধার্মিকরা ফেরেশতা, নবী, বাদশাহ ও অন্যদের করেছেন। বাইবেলীয় নবী ও ধার্মিকদেরকে নির্বিচারে এভাবে ওয়র্শিপ করা হয়েছে। ওয়র্শিপ এবং সমার্থক শব্দগুলো তাঁদের সকলের ক্ষেত্রেই একইভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। শুধু অনুবাদের স্বেচ্ছাচারিতায় বাংলাভাষী পাঠকের কাছ থেকে সত্য হারিয়ে গেল!