ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের পরিমার্জন, পরিবর্তন বা কারচুপির একটা নমুনা উল্লেখ করা যায়। পবিত্র বাইবেলের প্রথম বাক্য ‘‘In the beginning God created the heaven and the earth’’। কেরি: ‘‘আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।’’ জুবিলী: ‘‘আদিতে যখন পরমেশ্বর আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকাজ শুরু করলেন।’’ বা-২০০০ ও মো.-০৬: ‘‘সৃষ্টির শুরুতেই ঈশ্বর/ আল্লাহ মহাকাশ ও পৃথিবী/ আসমান ও জমীন সৃষ্টি করলেন।’’ (আদিপুস্তক/ পয়দাশে ১/১)
এখানে ইংরেজি ‘গড’ শব্দকে বাংলায় ঈশ্বর, পরমেশ্বর ও আল্লাহ বলা হয়েছে। মূল হিব্রুতে শব্দটা ‘এলোহিম’ (Elohim)। এলোহিম শব্দটা বহুবচন, এর অর্থ ঈশ্বরগণ। এর একবচন: ‘এল’ (El), যার অর্থ ঈশ্বর। একজনকে বোঝাতে বহুবচনের সর্বনামের ব্যবহার বিভিন্ন ভাষায় দেখা যায়। যেমন রাষ্ট্রপতির ঘোষণায় তিনি বলেন ‘আমরা, প্রেসিডেন্ট...’। অনেক সময় লেখক নিজের বক্তব্য বা মত বুঝাতে ‘আমি’ না বলে ‘আমরা’ বলেন। এভাবে যে কোনো ভাষায় ব্যক্তি নিজেকে বুঝাতে অনেক সময়ই বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার করে। তবে এক ব্যক্তিকে বুঝাতে নিজ নাম (proper noun) বা সাধারণ বিশেষ্য (common noun)-এর বহুবচন ব্যবহার কোনো ভাষাতেই পাওয়া যায় না। এখানে মূল অনুবাদ হওয়া দরকার ছিল: আদিতে ঈশ্বরগণ, পরমেশ্বরগণ....!
ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা করেন। কেউ বলেন, সৃষ্টিকর্তার মর্যাদা বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কোনো খ্রিষ্টান প্রচারক দাবি করেন, ঈশ্বরের ত্রিত্ব বা ত্রিত্ববাদ বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীরা দাবি করেন যে, বহুবচন কখনোই ‘তিন’ বুঝায় না; বরং তেত্রিশ কোটিও বুঝাতে পারে। কাজেই বহুবচন দ্বারা তিন দাবি করা একেবারেই ভিত্তিহীন। এছাড়া ‘ত্রিত্ববাদে’ ঈশ্বর বহুজন বা তিনজন নন; বরং একজন। তাঁকে Gods, ঈশ্বরগণ, পরমেশ্বরগণ ইত্যাদি বলা যায় না। ঈশ্বর একাধিক বলে ধারণা করা খ্রিষ্টধর্মে কুফরী বলে গণ্য। কাজেই বাইবেলের এ ব্যবহার দ্বারা ত্রিত্ববাদ প্রমাণ করা যায় না; বরং ত্রিত্ববাদ খণ্ডন করা যায় এবং বহু-ঈশ্বরবাদ প্রমাণ করা যায়। সর্বাবস্থায় এক্ষেত্রে অনুবাদের সঙ্গতিপূর্ণ (Consistent) হবার দাবি ছিল, অনুবাদেও বহুবচন ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় ব্যাখা বা টীকা লেখা।