‘বাইবেল’ শব্দটা মূল আভিধানিক অর্থে যে কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ব্যবহারিকভাবে তা খ্রিষ্টধর্মের ধর্মগ্রন্থের নাম যা ব্যাকরণের পরিভাষায় ‘proper noun’ অর্থাৎ নিজস্ব নাম বা সংজ্ঞাবাচক নাম। যেমন ‘কুরআন’, ‘বেদ’, ‘গীতা’, ‘ত্রিপিটক’ ইত্যাদি প্রত্যেক শব্দের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন ব্যবহারিকভাবে তা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের নিজস্ব নাম বা ‘proper noun’-এ পরিণত হয়েছে। এজন্য এ সকল গ্রন্থ যে ভাষাতেই অনুবাদ করা হোক না কেন, গ্রন্থের মূল নাম অপরিবর্তিত থাকে।
খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও পণ্ডিতরা সাধারণভাবে এ নীতি অনুসরণ করলেও আমরা দেখি যে, অনেক সময় তারা ব্যক্তি, স্থান বা গ্রন্থের নিজস্ব নামও অনুবাদ করেন। বাইবেলের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়েছে। বাইবেল শব্দটা ‘proper noun’ হওয়ার কারণে বাইবেলের বিভিন্ন ভাষার অনুবাদে তারা নামটা বহাল রেখেছেন। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রেও তারা ‘বাইবেল’ নামটা অপরিবর্তিত রেখেছিলেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার কলরাডো (Colorado) রাষ্ট্রের কলরাডো স্প্রীংস (Colorado springs) শহরে অনুষ্ঠিত (north American conference on muslim evangelization) ‘মুসলিমদের খ্রিষ্টান বানানো বিষয়ে উত্তর আমেরিকান সম্মেলনে’ খ্রিষ্টান প্রচারকরা মুসলিমদেরকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্য অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ধর্মগ্রন্থগুলোকে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ও আকর্ষণীয় পরিভাষায় অনুবাদ করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমানে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি বাইবেলকে ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছে।
মধ্যযুগ থেকে বাইবেলের আরবি অনুবাদের ক্ষেত্রে খ্রিষ্টানরা ‘আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস’ শব্দ ব্যবহার করেন। ‘কিতাব’ শব্দটা ‘বাইবেল’ শব্দের আরবি অনুবাদ, অর্থাৎ ‘গ্রন্থ’। আর ‘মুকাদ্দাস’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’। এভাবে ‘কিতাবুল মোকাদ্দাস’ অর্থ ‘পবিত্র গ্রন্থ’। এখানে লক্ষণীয়, গ্রন্থটার বাংলা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য আরবি অনুবাদ নাম ব্যবহার। এখানে প্রথমত একটা নাম (proper noun)-এর অনুবাদ করা হয়েছে, যা অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়ত অনুবাদের ভাষায় নামটার অনুবাদ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ভাষার অবোধ্য বা দুর্বোধ্য নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ্যত এর উদ্দেশ্য মুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করা।